তুমি যাবে?
যাই না, অসুবিধে কি?
বেশ। দোকানদারের নাম ডেরিক লংম্যান। শহরের ধারেই দেখতে পাবে। মার্কেটটা। জিনসের পকেট থেকে চাবি বের করে দিয়ে লিলি বলল, আমার স্টেশন ওয়াগনটা নিয়ে যাও। ফিরে তাকিয়ে বাদকদেরকে ইশারা করল। মাথা ঝকাল দলপতি। আবার শুরু হল বাজনা।
রবিনকে কাছাকাছি দেখে সেদিকে এগোল কিশোর। তোমরা থাকো, আমি আসছি।
কোথায় যাচ্ছ?
দোকানে। কয়েকটা জিনিস ফুরিয়ে গেছে।
চলো, আমিও যাব।
যাবে? ঠিক আছে। মুসাকে বলে এসো। নইলে আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করবে। আর আসতে চাইলে আসুক। আমি গাড়ি বের করিগে।
মুসা এল না। খেতে ব্যস্ত। রবিন আর কিশোরই চলল। পার্টির জায়গা থেকে বেশ অনেকটা দূরে রাখা হয়েছে গাড়িটা। পুরানো ঝরঝরে একটা স্টেশন ওয়াগন। গায়ে আঁকা রয়েছে ডাবল সি র্যাঞ্চের নাম আর মনোগ্রাম–একটা কালো ঘোড়ার ছবি।
ভাবছি, কিশোর বলল, ইচ্ছে করে ভুল করেনি তো ব্রড? সোডা আনতে ভুলে যায়নি তো?
তা কেন করবে?
জানি না, গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল কিশোর। হয়তো গোলমাল আরও বাড়ানর জন্যেই। ইগনিশনে মোচড় দিল সে।
কেশে উঠে চালু হয়ে গেল ইঞ্জিন। গিয়ার দিল কিশোর। একটা অদ্ভুত শব্দ কানে এল। মাথার ভেতর বেজে উঠল ওয়ার্নিং বেল। খপ করে রবিনের হাত চেপে ধরে আরেক হাত বাড়াল দরজা খোলার জন্যে। চেঁচিয়ে উঠল, জলদি বেরোও…!
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বোমা ফাটার মত আওয়াজ হলো।
১০.
গাড়ির দরজা খুলে মাটিতে লাফিয়ে নেমেই আবার চেঁচাল কিশোর, পালাও!
একপাশে আগুন ধরেছে গাড়ির, ভাগ্য ভাল, ওদের কিছু হয়নি। মথা নিচু করে ছুটে পালিয়ে যেতে লাগল দুজনে গাড়িটার কাছ থেকে। ছুটতে ছুটতেই একবার ফিরে তাকিয়ে কিশোর দেখল, লাল আর কমলা রঙের আগুন দাউ দাউ করে উঠছে ওপরে। কুণ্ডলী পাকিয়ে রাতের আকাশে উঠছে কাল ধোয়া। আতঙ্কিত মেহমানরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেছে।
গেছিলাম আরেকটু হলেই! গলা কাঁপছে রবিনের।
ট্যাক রুম থেকে দৌড়ে বেরোল লুক বোলান, হাতে একটা ফায়ার এক্সটিংগুইশার। পথ থেকে চিৎকার করে লোকজনকে সরিয়ে দিতে লাগল, সরুন, সরে যান! গাড়ির কাছে গিয়ে যন্ত্র থেকে রাসায়নিক পদার্থ ছিটাতে লাগল আগুনের ওপর। চেঁচিয়ে নির্দেশ দিল কয়েকজন শ্রমিককে। জ্বলন্ত গাড়িটার কাছে এগিয়ে আসছিল ওরা।
কিশোর! রবিন! চিৎকার করতে করতে ছুটে এল মুসা। তোমরা ভাল আছ?
আছি, জবাব দিল রবিন।
কি হয়েছিল? উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইল মুসা।
বলতে পারব না, বিহুলের মত মাথা নাড়তে লাগল কিশোর। আরেকটা আগুন নেভানর যন্ত্র নিয়ে দৌড়ে আসতে দেখল ব্রডকে। বাগানে পানি দেয়ার মোটা একটা হোসপাইপ এনে পানি ছিটাতে শুরু করল জন।..
গ্যাস পেডালে চাপ দিতেই কি যেন গড়বড় হয়ে গেল, আবার বলল কিশোর। বোমাটোমাই হবে!
তিন গোয়েন্দার দিকে দৌড়ে এল লিলি। পেছনে রয়েছেন কেরোলিন।
তোমরা…ভাল আছ? হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল লিলি।
আছি, জবাব দিল কিশোর।
কপাল ভাল আরকি তোমাদের। কেন এমন হলো কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না। বিকেলে যখন গাড়িটা নিয়ে দোকানে গিয়েছিল ব্রড তখনও তো ভাল ছিল।
তারপর আর কেউ চালিয়েছে?
মাথা নাড়ল লিলি। না। চাবি আমার কাছেই এনে দিয়েছিল সে।
কমে এসেছে আগুন। সেদিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। মনে হয় কেউ বোমা লাগিয়ে রেখেছিল।
সর্বনাশ! কে তোমাকে মারতে চাইল?
আমাকে নয়, ধীরে ধীরে বলল কিশোর, তাকে, যে সব সময় গাড়িটা চালায়।
চালাই তো আমি, চমকে গেছে লিলি, কিন্তু…
তাহলে আপনাকেই মারতে চেয়েছে।
ও মাই গড! চোখ বন্ধ করে ফেলল লিলি।
পোড়া গাড়িটার দিকে হাত তুলে রবিন বলল, মারতে যে চেয়েছে ওটাই তার প্রমাণ।
মুসা বলল, বেপরোয়া হয়ে গেছে লোকটা।
পুলিশকে ফোন করা দরকার, কিশোর বলল।
গাড়িটাকে জ্বলতে দেখেই করে দিয়েছি আমি, কেরোলিন বললেন। দমকলকেও করেছি। এসে যাবে।
কয়েক মিনিট পর সাইরেন শোনা গেল। দমকলের একটা ট্রাক আর শেরিফের একটা গাড়ি ঢুকল চত্বরে। লাফিয়ে মাটিতে নেমে পোড়া গাড়িটার দিকে ছুটল দমকল কর্মীরা। শেরিফের গাড়ি থেকে নামল গোয়েন্দারা। যাকে সামনে পেল তাকেই প্রশ্ন করতে লাগল।
হ্যারিসন ফোর্ড নামে একজন লালমুখো ডেপুটি জিজ্ঞেস করলেন লিলিকে, গাড়িটার কাছে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছ?
না…ব্রডকে দেখে থেমে গেল লিলি।
ব্রড এসে বলল, গাড়িটা নিয়ে বিকেলে শহরে গিয়েছিলাম। আসার পর ওখানেই রেখেছিলাম।
চালানর সময় কোন গোলমাল করেনি? জিজ্ঞেস করলেন ফোর্ড। টের পাওনি?
না, একটুও না, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ব্রডের মুখ।
বাজি দিয়ে একাজ করা হয়েছে, ডেপুটির কাছে এসে দাঁড়াল একজন দমকল কর্মী। হাতে একটা কালো খোসা। গাড়ির নিচে লম্বা ফিউজ লাগিয়ে মাথায় জুড়ে দেয়া হয়েছিল বাজিটা। ইঞ্জিনের গড়িয়ে পড়া তেলে লেগে আগুনটা ধরেছে।
তার মানে অ্যাক্সিডেন্ট নয়? আতঙ্কিত স্বরে জিজ্ঞেস করল লিলি।
মাথা নাড়ল লোকটা। না। আমার তা মনে হয় না। ওখানে এভাবে বাজি যাবে কি করতে?
কিশোরের দিকে তাকাল লিলি, কিশোর, আর দরকার নেই। তদন্ত বাদ দাও। আর কোন ঝুঁকি নিতে দেব না তোমাদের।
তদন্ত? ভুরু কোঁচকালেন ডেপুটি। কিসের তদন্ত?
হারানো ঘোড়াটার কথা বলল লিলি।