প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।
আমি নই, এটুকু বলতে পারি। আর দাঁড়াল না ব্রড। দুপদাপ পা ফেলে আস্তাবলের দিকে রওনা হয়ে গেল।
দরজা দিয়ে ওকে ঢুকে যেতে দেখল কিশোর। ভাবছে, সত্যি বলেছে লোকটা? চুরির অভ্যাস ছিল একসময়। ইউনিকর্নকে ও-ই চুরি করল? তাহলে হারিকেনের ব্যাপারটা কি? ঘোড়াকে সত্যিই ভালবাসে ব্রড, এরকম একজন লোক ওষুধ খাইয়ে ক্ষতি করবে একটা ঘোড়ার, আতঙ্কিত করে তুলতে চাইবে? নাকি লুক বোলানের কথাই ঠিক, বদ রক্ত রয়েছে শরীরে তাই খারাপ হয়ে গেছে। হারিকেন? ইউনিকর্ন এখন কোথায়? পাহাড়ে, বনের ভেতরে লুকিয়ে আছে, নাকি কোথাও আটকে রাখা হয়েছে তাকে?
কি ব্যাপার, পার্টিতে ফিরে আসার পর মুসা জিজ্ঞেস করল কিশোরকে, মনে হয় এই দুনিয়ায় নেই?
না, আছি। ভাবছিলাম, আশপাশের র্যাঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
ওর কথার শেষ অংশটা শুনে ফেলল লিলি। বলল, যাওয়ার আর দরকার কি? এখানেই অনেকে আছে। বলে ফেললেই পারো।
কয়েকজনের সাথে কথা বলল কিশোর, লাভ হলো না, জানতে পারল না। নতুন কিছু। পালিয়ে যাওয়ার পর ইউনিকর্নকে দেখেইনি কেউ। তবে এলসা কারমল নামে এক বিধবা মহিলা একটা মূল্যবান কথা বললেন। স্বামীর রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির মালিক। কুপার র্যাঞ্চের পশ্চিমে তাঁর জমি। বললেন, দেখো, ইউনিকর্নের মত শয়তানেরও দিনে দুবেলা খাবার দরকার পড়ে। বড় জানোয়ার, বেশি খাবার দরকার। ওদিকে, যেদিকে ঘোড়াটা লুকিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেদিকে হাত তুলে তিনি বললেন, খাবার খুবই কম। ঘোড়ারা বুদ্ধিমান জানোয়ার, লুকিয়ে পড়ার ওস্তাদ, কোথায় গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে, কে জানে। ওই যে, ব্যাণ্ড শুরু হলো।
একটা কাঠের মঞ্চে উঠে বাজনা শুরু করেছে তিনজন স্থানীয় বাজনদার। সেদিকে এগিয়ে গেল কিশোর। বেনির সঙ্গে কথা বলছে ওখানে লিলি। বেনি বলছে, সত্যিই আবার রোডিওতে ফেরত যাবে?
চাইছি তো। ভাবছি, ইনডিপেনডেন্স ডে থেকে শুরু করব।
বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না? এক বছর ধরে প্র্যাকটিস নেই, পারবে?
পারতে হবে। টাকা দরকার আমার।
বড় বেশি ঝুঁকি নিতে যাচ্ছ। একটা পাগলা ঘোড়ার পিঠে চড়ে…
হারিকেন পাগল নয়।
আব্বাকে লুক বলেছে ঘোড়াটা পাগল হয়ে গেছে। ব্রডও বলেছে। আমি হলে ওরকম একটা বদমেজাজী ঘোড়ার পিঠে কখনই চড়তাম না।
আর কোন কথা হল না। চলে গেল বেনি।
কিশোরের ওপর চোখ পড়ল লিলির। বলল, দেখলে, কেমন করে চলে গেল?
দেখলাম। বেনির ওপর নজর কিশোরের। ব্রডের হাত ধরেছে গিয়ে মেয়েটা। কাছেই রয়েছেন তার বাবা, পরোয়াই করল না। গম্ভীর হয়ে গেছেন কুপার, ভূতপূর্ব কর্মচারীর সঙ্গে নিজের মেয়ের এই আচরণ সহ্য করতে পারছেন না। তিনি। লিলির দিকে ফিরল কিশোর। শুনলাম, কুপার র্যাঞ্চে নাকি কাজ করত ব্রড।
মাথা ঝাঁকাল লিলি। কেন বের করে দিয়েছে জানো?
জানি।
ও, জান। আমি আরও ভাবলাম, তোমাকে বলব, ওর চুরির স্বভাব ছিল। তবে এখন ও ভাল হয়ে গেছে। ব্যানারদের জিনিস ও চুরি করেনি। ইউনিকের নিখোঁজ হওয়ার পেছনেও তার হাত নেই। অহেতুক আর এখন ওর অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করাটা ঠিক হবে না।
পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে বাজনা। আঞ্চলিক গানের সুর বাজাচ্ছে। কয়েক সেকেণ্ড চুপচাপ শুনে আবার বলল লিলি, এই বাজনার পরেই আমি রেডিওতে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করব।
গুড লাক, শুভেচ্ছা জানাল কিশোর। হঠাৎ বলে উঠল, আরি!
কি? কিশোরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে লিলিও দেখতে পেল লম্বা সাদা সেডান গাড়িটা, র্যাঞ্চে ঢুকছে। আবার এল!
আরও খানিকটা এগিয়ে থামল গাড়িটা। বেরিয়ে এল ফিলিপ নিরেক। অন্য পাশের জানালা দিয়ে মুখ বের করে রেখেছে পাইক, নামল না। সোজা লিলির দিকে এগিয়ে এল নিরেক। কাছে এসে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল, যা বলেছিলাম। এটাই ঘটবে।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল লিলি।
কি আর? ব্যাংক সময় দিতে পারবে না। এক মাসের সময় আছে আর। এর। মধ্যে হয় সব টাকা শোধ করবে, নয়ত জায়গা ছাড়বে। এই যে, চিঠি।
এসব আপনি করেছেন! সব আপনার শয়তানী! লিলির চিল্কারে বাজনা থামিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল বাদর্কেরা। মেহমানদের চোখও ঘুরে গেল এদিকে।
বেশ, আমি করেছি, তাতে কি? নির্লজ্জের মত বলল নিরেক। ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গেও কথা বলেছি। ওরা বলেছে, ইউনিকনের জন্যে পয়সা দেবে না। যে যে কারণে টাকা দেয়ার কথা তার কোনটাই ঘটেনি বলে তাদের বিশ্বাস। মরেনি, জখম হয়নি, চুরি যায়নি। ওদের ধারণা, তুমিই কোথাও নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছ।
শক্ত হয়ে গেছে লিলির কাঁধ। টাকা কি চাইতে গেছি নাকি আমি ওদের কাছে? কথাই বলিনি।
বললেও দেবে না। ঘুরে গাড়ির দিকে রওনা হলো নিরেক।
তাড়াহুড়া করে লিলির কাছে এসে দাঁড়ালেন কেরোলিন। একটা গোলমাল হয়ে গেছে। বিকেলে দোকান থেকে সোডা আনতে ভুলে গেছে ব্রড। চা-ও নেই। ডেরিককে ফোন করেছিলাম। দোকান বন্ধ করে দিচ্ছিল, বলেছে আমাদের জন্যেই খোলা রাখবে।
মেহমানদের ওপর চোখ বোলাল লিলি। বেশ, যাচ্ছি।
যেতে আসতে কতক্ষণ লাগে? জানতে চাইল কিশোর।
এই মিনিট বিশেক।
তাহলে আমিই যাই। আপনার বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছে, আপনার। এখানে থাকা দরকার।