আপনি কেন, বাইরের কেউই পারবে না, কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ব্রড, কিশোর কিংবা কুপার কেউই টের পাননি। ঘুরে তাকাল কিশোর। ব্রডকে যেন আর এখন চেনাই যায় না। পরিষ্কার জিনস, প্রেইড শার্ট আর রুপার বাক্স ওয়ালা বেল্ট পরেছে। ঠিক এরকম বাকলসওয়ালা বেল্টের বাড়িই সেদিন আস্তাবলে খেয়েছিল কিশোর, মনে আছে। তাহলে কি ব্রডই তাকে মেরেছিল? নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এখানে অনেকেই বেল্টে রুপার বাস লাগায়। ইউনিকনের চুরির দায়টা ওর ওপর চাপানর মতও কোন প্রমাণ তার হাতে নেই।
ব্রডকে দেখেই কঠিন হয়ে গেল কুপারের চেহারা। কিন্তু তোয়াক্কা করল না ব্রড।
মুসা তোমাকে খুঁজছে, কিশোরকে বলল সে। বেনির দিকে তাকিয়ে কোমল হল দৃষ্টি। দ্রুত হেঁটে চলে গেল আরেক দিকে।
কিশোরও সরে গেল ওখান থেকে। তবে মুসার কাছে না গিয়ে পিছু নিল ব্রডের। আস্তাবলের দিকে চলেছে লোকটা। ডাক দিল সে, এই যে, শুনুন।
থেমে গেল ব্রড। বুটের গোড়ালিতে ভর দিয়ে ঘুরল। কর্কশ গলায় বলল, এখানে নয়, তোমার বন্ধু পার্টিতে।
জানি। আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে চাইছি।
কথা বলার মোটেও ইচ্ছে নেই ব্রডের। কি কথা?
সেদিন রাতে, আমি যখন আস্তাবলে..
মনে আছে। অনেক প্রশ্ন করেছিলে। আমি তখন হারিকেনকে ঠাণ্ডা করছিলাম।
না না, তার পরে। আমি যখন আবার একা গেলাম…
ভয়ানক বোকামি করেছ! এবারেও কথা শেষ করতে দিল না কিশোরকে ব্রড। হারিকেনের মেজাজ তখন চরমে!
হাল ছাড়ল না কিশোর, সেদিন রাতে ওই সময় আপনার লেকে থাকার কথা, ক্যানু রেস হচ্ছিল।
শক্ত হয়ে গেল ব্রডের চোয়াল। সরু হয়ে এল চোখের পাতা। তুমি তখন। আস্তাবলে কি করছিলে?
সূত্র খুঁজছিলাম।
অ্যাঁ! ও, শুনেছি, তোমার নাকি ধারণা ইউনিক চুরি হয়েছে, কে করেছে সেটা জানার জন্যে তদন্ত চালাচ্ছ। হেসে উঠল ব্রড। বড়ই যেন মজা পাচ্ছে এরকম। একটা ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, এখানে কোনই রহস্য নেই কিশোর পাশা, কাজেই রহস্যভেদের চেষ্টা বৃথা। আমার পরামর্শ শুনলে, বাদ দাও এসব…
ব্রডের বেশি কথাও ভাল লাগছে না কিশোরের, বলল, মেরে আমাকে বেশ করে ফেলা হয়েছিল। পেছন থেকে কে জানি এসে মাথায় বাড়ি মারল।
এতক্ষণে হাসি বন্ধ হল ব্রডের। বলো কি? কই, আমি তো কিছু শুনিনি?
কার কাছে শুনবেন? কাউকে বলিনি তো।
এরকম কিছু ঘটতে পারে না, এটাই বোধহয় বলার জন্যে মুখ খুলেও থেমে গেল ব্রড। জিজ্ঞেস করল, তারপর?
আমার বন্ধুরা গিয়ে বেহুশ দেখতে পেল আমাকে।
লোকটাকে দেখেছ?
না। তবে রুপার বাল্সওয়ালা বেল্ট দিয়ে বাড়ি মেরেছিল, দেখেছি, আপনি যেটা পরেছেন সে রকম।
রেগে গেল ব্রড, তুমি বোঝাতে চাইছ আমি মেরেছি? নিজের বেল্টের দিকে আঙুল তুলে বলল, এটা আমি পুরস্কার পেয়েছি কয়েক বছর আগে রোডিও খেলায়। অনেকেই পেয়েছে। আজ রাতে পাটিতেই অন্তত দশবারোজনের কোমরে দেখতে পাবে।
কার কার?
লিলি, জন, লুক, ভাবছে ব্রড, এই র্যাঞ্চের দুজন শ্রমিক। বাইরের তো আছেই।
কুপার র্যাঞ্চের?
আছে।
বেনি কুপারের?
কয়েকটা আছে। বেনির কথা বলার সময় কোমল হল ব্রডের কণ্ঠ, পরের কথাটা বলতে গিয়েই নিমের তেতো ঝরল যেন, ওর বাবারও আছে।
চমৎকার, ভাবল কিশোর। ব্রডের কথা ঠিক হলে এ এলাকার অর্ধেক মানুষেরই আছে রুপার বাক্স। ওটাকে সূত্র হিসেবে ধরে তদন্ত করতে যাওয়া আর খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা একই কথা।
আস্তাবলের দিকে আবার পা বাড়িয়ে ব্রড বলল, দেখো, আমার সত্যিই কাজ আছে। ঘোড়াগুলোকে খাবার দিতে হবে…
আর একটা কথা, তাড়াতাড়ি হাত তুলল কিশোর, আপনি কুপারের ওখানে চাকরি করতেন, তাই না?
থমকে গেল ব্রড। ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি করে জানলে?
কাগজে পড়েছি।
পুরানো ইতিহাস! বিড়বিড় করল ব্রড। তাহলে নিশ্চয় জানো, চুরির অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছিল আমাকে?
বড় শাস্তি দিতে পারেননি বলে নিশ্চয় হতাশ হয়েছিলেন মিস্টার কুপার?
আঙুল মুঠো করে ফেলল ব্রড। ওর সঙ্গে আমার কোনদিনই বনিবনা ছিল না। আমাকে পছন্দ করেনি। বেনির সঙ্গে নাকি আমাকে একেবারেই মানাবে না। মেহমানদের জিনিস চুরি করি আমি, একথাটা যেই জানল, সুযোগ পেয়ে গেল। বের করে দিল আমাকে র্যাঞ্চ থেকে। শাসিয়ে বলল; আর যেন কখনও বেনির। সঙ্গে দেখা না করি।
রাগটা ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছে ব্রডের।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, তারপর এখানে চাকরি নিলেন?
দেখ, উল্টোপাল্টা কিছু ভেবে বসো না। লিলির সঙ্গে আমার কোন মন। দেয়ানেয়ার ব্যাপার নেই। আমাকে আর দশজন কর্মচারীর মতই কাজে নিয়েছে। কেরোলিন আন্টি বলেকয়ে রাজি করিয়েছে তাকে। তারপর থেকে আমি সৎ হয়ে গেছি। ঠিকমত কাজ করছি। সবাইকে বোঝানোর জন্যে যে, যা করেছি তার জন্যে আমি অনুতপ্ত, আর কোনদিন করব না ওরকম কাজ।
লোকটাকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর। তাহলে আপনি বলতে পারবেন না ব্যানারদের জিনিস চুরি করে কে আমার ব্যাগে রেখে গেল?
তোমার ধারণা আমি করেছি? মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তোমার? এখানেও ওরকম কোন বদনাম হলে র্যাঞ্চে চাকরির আশা আমার শেষ। কেউ আর আমাকে কাজ দেবে না। তাছাড়া এই চাকরিটা খুব ভাল। বোকামি করে মরার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। ইয়ে, ওদের ব্যাগ থেকে টাকাপয়সা চুরি গেছে নাকি কিছু?