কি? মুসা জিজ্ঞেস করল।
সেটাই তো বুঝতে পারছি না। হাতের তালুতে থুতনি রাখল কিশোর। যদি খালি বুঝতে পারতাম কে ইউনিকর্নকে চুরি করেছে আর ব্যানারদের জিনিসগুলো। আমার ব্যাগে রেখেছে…।
এবং কে হারিকেনকে ওষুধ খাইয়েছে,মুসা বলল। এই তো?
যদি খাইয়ে থাকে। যাই হোক, এই মুহূর্তে এটাও প্রমাণ করতে পারছি না। আমরা।
তারমানে যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে গেছি, এগোতে পারিনি একটুও?
আলমারির আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। আনমনে মাথা দোলাল, অনেকটা সেই রকমই।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল রবিন। চকচক করছে। চোখ। চিৎকার করে বলল, পেয়ে গেছি। ধরে ফেলেছি ব্যাটাকে!
সতর্ক হল কিশোর। আহ, আস্তে! দরজা লাগাও!
দরজাটা লাগিয়ে দিল রবিন। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, কে সব কিছুর পেছনে বুঝে ফেলেছি!
.
০৯.
কে? একসাথে জিজ্ঞেস করল কিশোর আর মুসা।
ব্রড জেসন! অ্যাপ্রনের পকেট থেকে হলদে হয়ে আসা একটা খবরের কাগজ বের করল রবিন। স্থানীয় কাগজ, নাম ক্রনিকল। বাড়িয়ে ধরল সেটা কিশোরের দিকে।
গল্পটা ছয় মাসের পুরানো। কুপার র্যাঞ্চের মেহমানদের টাকা আর জিনিসপত্র চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল ব্রডকে। র্যাঞ্চ থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাকে কুপার। কুপার র্যাঞ্চের কথাও বিশদ লেখা রয়েছে স্টোরিটায়। অনেক বড় জমজমাট র্যাঞ্চ। ওটার মালিক বিখ্যাত রোডিও খেলোয়াড় বেনি কুপারের বাবা ডবসি কুপার। টুরিস্ট জায়গা দেয়া ছাড়াও রোডিও খেলার উপযোগী ঘোড়ার প্রজনন করেন। বিচিত্র সব সরীসৃপের ছোটখাট একটা চিড়িয়াখানাও আছে র্যাঞ্চে।
বের করলে কি করে ওটা? জিজ্ঞেস করল মুসা।
বিছানার পাশে বসল রবিন। হাসল। প্যানট্রিতে একগাদা কাগজ দেখে কৌতূহল হল। গিয়ে দেখতে লাগলাম কাগজগুলো। কিছু পেয়ে যাব ভাবিনি, এমনিই দেখছিলাম। চোখে পড়ে গেল হেডলাইনটা।
ব্রড কেন ইউনিকর্নকে ছেড়ে দেবে? তার কি লাভ?
যেহেতু বেনি কুপার তার গার্লফ্রেণ্ড।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের মুখ। ঠিক। লিলি প্রতিযোগিতায় নামলে বেনির সর্বনাশ। জিততে পারবে না।
কেরোলিন আন্টির কাছে শুনলাম প্রতিযোগিতাটা টেলিভিশনে দেখাবে, রবিন জানাল। যে জিতবে, তাকে নাকি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে।
বাপরে! গাল ফুলিয়ে ফেলল মুসা, বিরাট টাকার ব্যাপার!
সেই সঙ্গে সম্মান এবং খ্যাতি, কিশোর বলল।
সহজেই ধরে নেয়া যায়, রবিন বলল, বান্ধবীর জন্যে এসব অকাজ করছে। ব্রড। স্যাবোটাজ করে চলেছে ডাবল সিকে।
ওরকম জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না অবশ্য, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। কারণ কিছুই প্রমাণ করতে পারিনি আমরা এখনও।
রহস্যময় হাসি হাসল রবিন। পারিনি, করে ফেলব। ধবধবে সাদা একটা স্টেটসন হ্যাট খাঁটি কাউবয় কায়দায় মাথায় বসিয়ে দিয়ে বলল, চলো।
কোথায়? মুসার প্রশ্ন। পার্টিতে?
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আমি যাচ্ছি ব্রড জেসন আর ডবসি কুপারের সঙ্গে কথা বলতে।
.
এক ঘণ্টা পরে বারবিকিউ সস, সদ্য বেক করা কর্নব্রেড আর স্ট্রবেরি পাইয়ের সুবাস ভুর ভুর করতে লাগল বাতাসে। খোলা একটা নিচু জায়গায় হাজির হল মেহমানেরা, যেখানে এই বিশেষ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বারবিকিউ হয়। খোলা জায়গায়। মূল খাবার হয় আস্ত গরু, ভেড়া কিংবা শুয়োরের ঝলসান মাংস। গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে চামড়া ছাড়ানো, নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে দেয়া আস্ত এক গরু। নিচে আগুন জ্বলছে। সেই আঁচে সেদ্ধ হচ্ছে মাংস, চর্বি গলছে চড়চড় শব্দ করে, কাবাবের জিভে-পানি-আসা গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। গাছের ডালে ঝুলছে অনেকগুলো লণ্ঠন। সেই সাথে অনেক মানুষের কথাবার্তার গুঞ্জন এক বিচিত্র পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ওখানে হাজির হলো তিন গোয়েন্দা। ডাবল সির মেহমানরা তো রয়েছেই, আশেপাশের অনেক র্যাঞ্চ থেকেও অনেকে এসেছে। নিয়ম হলো যার যার খাবার। প্লেটে তুলে নিয়ে খেতে হবে। কিশোরও নিল। চঞ্চল দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে পরিচিতি অপরিচিত মানুষের ওপর। বেনিকে দেখতে পেল। লণ্ঠনের আলোতেও ঝলমল করছে চুল। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন লম্বা, বলিষ্ঠ একজন মানুষ। চুল সাদা। ভারি কণ্ঠস্বর, হাসিটাও তেমনি ভারি।
আমি যাচ্ছি, রবিনের কানে কানে বলল কিশোর। লোকজনের ভেতর দিয়ে এগোল বেনির দিকে। কাছে গিয়ে হেসে হাত নেড়ে স্বাগত জানানোর ভঙ্গিতে বলল, হাই।
হাই। কিশোর পাশা না? এমন ভঙ্গিতে তাকাল, বেনি, যেন চিনতে পারছে না কিশোরকে।
হ্যাঁ, জবাব দিয়ে পাশের ভদ্রলোকের দিকে তাকাল কিশোর।
আমি ডবসি কুপার, বেনির বাবা, গমগম করে উঠল ভদ্রলোকের গলা। হাত বাড়িয়ে কিশোরের হাতটা চেপে ধরে ঝাঁকি দিলেন। ওয়েলকাম টু মনটানা।
থ্যাঙ্ক ইউ।
শুনলাম, তুমি ডিটেকটিভ?
ঝট করে বাবার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল আবার বেনি।
ঠিকই শুনেছেন, দরাজ হাসি হাসল কিশোর। ইউনিকর্নকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি আপাতত। রাতের বেলা আস্তাবল থেকে পালিয়েছে।
শুনেছি, কুপার বললেন। বেনির কাছেই শুনলাম। পরে আমার র্যাঞ্চের পশ্চিম ধারে ওরকম কালো একটা ঘোড়াকে দেখেছিও। এখন মনে হচ্ছে ওটা ইউনিকর্ন নয়। অন্য ঘোড়া। ভুলটা কিভাবে করলাম বুঝতে পারছি না। ঘোড়ার ব্যাপারে তো এরকম ভুল আমি করি না। তবে, ইউনিকর্ন আর হারিকেনকে আলাদা করে চিনতে পারব না, এটা ঠিক। দুটো ঘোড়াই অবিকল এক রকম। এত মিল কমই দেখা যায়।