হু, জোরে নিঃশ্বাস ফেলল লিলি।
বেড়ায় হেলান দিল কিশোর। পাইককে বলতে শুনেছি, যেভাবেই হোক, র্যাঞ্চটা আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেবেই। নিরেকের কাছে বলেছে।
সে-ই এর পেছনে নয় তো?
সরাসরি হ্যাঁ না বলে কিশোর বলল, ওর সম্পর্কে আরও জানতে হবে আমাকে।
মুখ বাঁকাল লিলি। আমি আর জানতে চাই না। যত কম জানি ততই ভাল। আমার জন্যে। ওই লোকটাকে দেখলেই ভয় লাগে আমার। কেঁপে উঠল সে। কোনদিনই র্যাঞ্চ আমি ওর কাছে বেচব না। আকাশের দিকে তাকাল। এক রত্তি মেঘ নেই কোথাও। আজ রাতেই আমি ঘোষণা করে দেব, আবার রোডিও খেলব। আমি। এখন কেবল ইউনিকর্নকে দরকার আমার। ওকে পেতেই হবে।
পাব। খুঁজে বের করব, কথা দিল ওকে কিশোর। ডবসি কুপারের র্যাঞ্চে যাব। আমি। তাকে জিজ্ঞেস করব সত্যিই ইউনিকর্নকে দেখেছে কিনা।
আমার বিশ্বাস হয় না, লিলি বলল। অন্য কোন ঘোড়া দেখেছে কুপার। ইউনিককে নয়।
তবু, কথা আমি বলতে যাবই।
যাওয়ার দরকার নেই। আজ রাতে বারবিকিউ পার্টিতে দাওয়াত করেছি, আসবে। বেড়ার ওপরের রেইলে চাপড় মারল লিলি। যাই, কাজ করিগে। পরে কথা হবে।
বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল কিশোর। কিছুদূর যাওয়ার পর আস্তাবলের দিক থেকে ব্রডকে যেতে দেখে সেদিকে এগোল। কাঁধের ওপর দিয়ে একবার ঘুরে তাকিয়ে গিয়ে একটা স্টেশন ওয়াগনে উঠে চালিয়ে নিয়ে চলে গেল লোকটা। আরেকবার আস্তাবলের ভেতরে দেখার সিদ্ধান্ত নিল কিশোর।
আস্তাবলের ভেতরে অন্ধকার, শান্ত, কেমন একটা তেলতেলে গন্ধ। ঘোড়াগুলো সব বাইরে। সোজা ইউনিকনের স্টলের দিকে এগোল কিশোর। সব আগের মতই রয়েছে, কিছুই বদল হয়নি। খড় ছড়ানো, খাবারের বাক্সটা অর্ধেক ভরা, হুকে ঝোলান পানির বালতি, দরজার পাল্লা ভাঙা। মেরামত করা হয়নি। একবার দেখে। ঘুরতে যাবে এই সময় মনে হলো কি যেন একটা বাদ পড়েছে। কিংবা কিছু একটা গোলমাল হয়েছে, সব ঠিকঠাক নেই। ভাল করে আরেকবার দেখল সে। কই, সবই তো ঠিক আছে? সত্যিই আছে তো?
আনমনেই একবার ভ্রূকুটি করে হারিকেনের স্টলের দিকে তাকাল সে। ওটাও একই রকম রয়েছে, কেবল খড়ের রঙটা অন্য রকম লাগছে। বদলানো হয়েছে। বোধহয়।
কিশোরের মন বলছে, মূল্যবান একটা সূত্র রয়েছে আস্তাবলের ভেতরে। নজরে পড়ছে না। গভীর ভাবনায় ডুবে থেকেই আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এল সে, রওনা হল বাড়ির দিকে। রান্নাঘরে ঢুকে দেখল কাজ করছে মুসা আর রবিন।
ময়দা মাখাচ্ছে মুসা। রবিন পেঁয়াজ কুচি করছে। সসপ্যানে মাংস ভাজছেন। কেরোলিন।
আমি কোন সাহায্য করতে পারি? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নিশ্চয়, জবাব দিল রবিন। বাকি পেঁয়াজগুলো যদি কেটে দিতে… চোখ ডলতে লাগল সে। লাল হয়ে গেছে। পানি বেরোচ্ছে পেঁয়াজের ঝাঁজে।
মাংসে টমেটো সস আর বীন মেশাতে মেশাতে কেরোলিন অনুরোধ করলেন, কনগুলো যদি পরিষ্কার করে আন, খুব ভাল হয়।
যাচ্ছি। প্যানট্রিতে এসে ঢুকল কিশোর। কর্ন বের করার জন্যে হাত বাড়াতেই ঠেলা লেগে ছড়িয়ে পড়ল একগাদা খবরের কাগজ। পুরানো হতে হতে হলদে হয়ে গেছে।
দূর! কাগজগুলো আবার তুলে ঠিক করে রাখতে লাগল সে।
আধ ঘন্টা পরে ডিনার তৈরি হয়ে গেল। রান্নাঘরে এসে ঢুকল লুক বোলান। থমথমে চেহারা। জিজ্ঞেস করল, লিলি কোথায়?
মনে হয় দোতলায়, কেরোলিন বললেন।
না, এই তো, দরজার কাছ থেকে বলল লিলি। পরনে কালো জিনস, গায়ে লাল-সাদা চেক শার্ট, মাথায় টকটকে লাল হ্যাট।
খারাপ খবর আছে, লুক বলল। ইউনিককে পাইনি। মনে হয়, চিরকালের জন্যেই গেল।
ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল লিলি। বিড়বিড় করে বলল, বিশ্বাসই করতে পারি না!
বিশ্বাস তো আমিও করতে পারছি না, লুক বলল। শেষ পর্যন্ত শেরিফকে জানাতে বাধ্য হয়েছি। দশ মাইলের মধ্যে পাড়াপ্রতিবেশী যত আছে, সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি। কেউ কিছু বলতে পারল না। কেউ দেখেনি ওকে।
লুকিয়ে রয়েছে হয়তো কোথাও, কিশোর বলল।
কোথায়? ভুরু কোঁচকাল লুক। কোনখানে?
এখনও জানি না। তবে কেউ ইচ্ছে করে লুকিয়ে রেখেছে ওকে।
পাগল! ফেটে পড়ল লুক, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ছেলে! শহরে তোমরা কিভাবে গোয়েন্দাগিরি কর, জানি না, তবে এখানে আমরা কোন কিছু চুরি যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি, তারপর চোরকে ধরার চেষ্টা করি।
কিশোর তো সেটাই করতে চাইছে, লিলি বলল। ওর ধারণা, ইউনিককে চুরি করা হয়েছে।
হায় হায়, বলে কি! চোখ বড় বড় হয়ে গেল কেরোলিনের।
লুকের চোখে অবিশ্বাস ফুটল। এসব অতি কল্পনা। ঘোড়াটা পালিয়েছে, এটাই সহজ জবাব।
তাহলে পাচ্ছি না কেন ওকে? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর। আটকে রাখা না হলে ও এতক্ষণে চলে আসত। গৃহপালিত কোন জানোয়ারই বাড়ি ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকে না।
পাগল হয়ে গেছে! মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেল লুক।
এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন কেরোলিন। তারপর বললেন, এখানে আমিই সামলাতে পারব। তোমরা গিয়ে ঘরটর গোছগাছ কর।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। অ্যাপ্রন খুলতে একটা মুহূর্ত দেরি করল না। তবে রবিন বলল, তোমরা যাও। আমি আসছি।
ঘরে এসে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিল কিশোর। এসে বসল মুসার বিছানায়। বলল, সেই অনুভূতিটা হচ্ছে আবার আমার। কোন কিছু মিস করলে, ধরি ধরি করেও ধরতে না পারলে যেটা হয়। জরুরী কোন একটা সূত্র।