হলটা কি, ভাবল কিশোর। জানার জন্যে এগোল কোরালের দিকে।
বেড়ার কাছে এসে দাঁড়াল লিলি, সে রয়েছে ভেতরে, বাইরের দিকে দাঁড়াল মেহমানরা। একজন বলল, তুমি কি করবে না করবে জানি না। তবে এই চুরির কথা পুলিশকে জানাবই আমরা।
চুরি?
হ্যাঁ, বলল আরেক মেহমান, সে মহিলা, আমার পার্স চুরি হয়েছে, আমার স্বামীর মানিব্যাগ চুরি হয়েছে।
সত্যি?
তো কি মিথ্যে বলছি নাকি! জ্বলে উঠল মহিলার চোখ। আজ সকালেও আলমারির ড্রয়ারে দেখেছি। নিশ্চয় তোমার কোন কাউবয় ঢুকে চুরি করে নিয়ে গেছে।
ছাই হয়ে গেল লিলির মুখ। মিসেস ব্যানার, একটা কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। এখানকার সবাই খুব ভাল মানুষ।
তাহলে কে নিল? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মহিলা।
দরজা খোলার শব্দে ফিরে তাকিয়ে কিশোর দেখল, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে আসছেন কেরোলিন। মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। এগিয়ে এসে হাতের জিনিসগুলো দেখিয়ে বললেন, এগুলো খুঁজছেন তো আপনারা?
হ্যাঁ, কেরোলিনের বাড়ান হাত থেকে ছোঁ মেরে পার্স আর মানিব্যাগটা নিয়ে নিল মিসেস ব্যানার। কোথায় পেলেন?
দ্বিধা করলেন কেরোলিন। অস্বস্তিভরে তাকালেন প্রথমে কিশোরের দিকে, তারপর লিলির দিকে। কিশোরের ঘরটা পরিষ্কার করছিলাম। বিছানায় রাখা ছিল ওর ব্যাগটা। সরাতে যেতেই কাত হয়ে গেল, আর ওটার ভেতর থেকে পড়ল এদুটো।
বলেন কি? চমকে গেল কিশোর।
শয়তানটা তাহলে তুমিই! কিশোরের দিকে তাকিয়ে চোখে আগুন জ্বলে উঠল মিসেস ব্যানারের। এসব করে পার পাবে ভেবেছ? পুলিশকে অবশ্যই জানাব, যাতে তোমাকে ধরে নিয়ে যায়।
.
০৮.
এতটাই অবাক হয়েছে কিশোর, কথাই সরল না কয়েক সেকেণ্ড। তারপর কোনমতে বলল, আ-আমি কিছু জানি না….আপনার জিনিস আমার ঘরে গেল কি করে?…আশ্চর্য!
দুর থেকে দেখেই কিছু সন্দেহ করেছিল রবিন আর মুসা, এগিয়ে এল শোনার জন্যে। সব শুনে রেগে গিয়ে রবিন বলল, কিশোর চোর না! ওকে যে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মিসেস ব্যানার। তারপর পার্স আর মানিব্যাগের টাকা আর জিনিসপত্র দেখে নিয়ে বলল, সব ঠিকই আছে মনে হয়। যাই হোক, একথা আমি ভুলব না। মানিব্যাগটা স্বামীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দেখ, ঠিক আছে কিনা।
টাকা গুনে নিয়ে মাথা কাত করল মিস্টার ব্যানার, ঠিকই আছে।
ওরা দুজন চলে গেলে লিলি বলল, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। কে ঘটাচ্ছে এসব ধরতেই হবে। পিঠ সোজা করে হেঁটে চলেছে মিস্টার আর মিসেস ব্যানার, সেদিকে তাকিয়ে বলল, এমন কাণ্ড এই র্যাঞ্চে কোনদিন হয়নি। কিছু বুঝতে পারছি না।
আমি পারছি, মুসা বলল। নিশ্চয় সত্যের খুব কাছাকাছি চলে গেছে কিশোর, তাই তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা চলছে।
কিশোরের বাহুতে হাত রাখলেন কেরোলিন, বিশ্বাস করো, তোমাকে দোষ দিইনি আমি। আমিও বিশ্বাস করি না তুমি একাজ করেছ।
হাসল কিশোর। আমি কিছু মনে করিনি। তবে যে একাজ করেছে তাকে আমি ছাড়ব না। ধরবই।
তাই কর, লিলি বলল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন কেরোলিন, সর্বনাশ! এখুনি গিয়ে রান্না বসাতে হবে, নইলে রাতে ঠিকমত খাবারই দিতে পারব না।
সাহায্য-টাহায্য লাগবে আজকে? কেরোলিনকে জিজ্ঞেস করল রবিন। তাহলে আমি আর মুসা করতে পারি…
বাধা দিয়ে মুসা বলল, আসলে, আমার আজ…
করতে ভাল লাগছে না তো? মুসার ইচ্ছে বুঝতে পেরে হাসলেন কেরোলিন। কিন্তু বাবা, আজকে যে আমার সাহায্য দরকার। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। বেতার ওপর স্পেশাল একটা ডিশ করতে যাচ্ছি। একা সামলাতে পারব না। একজন অন্তত এসো।
এই অনুরোধের পর আর কথা চলে না। রবিন, মুসা দুজনেই চলল কেরোলিনের সঙ্গে। ওরা রওনা হয়ে গেলে ডেকে বলল কিশোর, যাও তোমরা। আমিও আসছি।
লিলি বলল, মিসেস ব্যানারের ব্যবহারটা দেখলে? কিশোর বলল, ওরকম চুরি হলে আমিও করতাম। তাকে দোষ দিতে পারছি না। আমার কথা ভেবে যদি লজ্জা পেয়ে থাকেন, ভুলে যান। এসব অভ্যাস আছে আমার। এর চেয়ে বেশি অপমানও হয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত জবাব দিয়ে তারপর ছেড়েছি। এবারেও তাই করব। আসলে, কারও বিপদের কারণ হয়ে উঠেছি আমি। সেজন্যেই চাইছে না আমি তদন্ত করি। ভয় পেয়ে গেছে। থামাতে চাইছে। ইউনিকর্নকে কে পালাতে সাহায্য করে থাকতে পারে কিছু আন্দাজ করতে পারেন?
ও একা একা পালিয়েছে এটা মেনে নিতে পারছ না?
আপনি পারছেন?
শ্রাগ করল লিলি। না, আমিও অবশ্য পারছি না। তবে পুরো ব্যাপারটাই যেন কেমন! কোন চিহ্ন নেই, কিছু নেই…একেবারে হাওয়া!
বনবন করে ঘুরছে যেন কিশোরের মগজের চাকাগুলো। দুটো ব্যাপার হতে পারে। হয় আপনাআপনিই পালিয়েছিল ইউনিকর্ন, সেটাকে কাজে লাগিয়েছে যে ওকে চুরি করেছে। পালানর পর কোনভাবে ধরে তার পিঠে চেপেছে। নয়তো পালাতে সাহায্য করেছে প্ল্যান করেই।
কাকে সন্দেহ করছ? ব্রড জেসন? নিচের ঠোঁটে কামড় দিল লিলি।
হতে পারে। কিংবা এমন কেউ হতে পারে, যে আপনাকে ইনডিপেনডেন্স ডের রোডিওতে শরিক হতে দিতে চায় না। আমার ধারণা, ইউনিকর্নের পালান আর হারিকেনের খেপে যাওয়ার পেছনে একই কারণ। দুটো ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক। আছে।
কি?
এখনও জানি না। কিন্তু ইউনিক আর হারিকেনকে ছাড়া আপনি না পারবেন ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি করে টাকা দিতে, না পারবেন রেডিওতে জিতে টাকা জোগাড় করতে। ধার আর শোধ করা হবে না আপনার। ধার যাতে শোধ করতে না পারেন তার জন্যেও এসব করা হয়ে থাকতে পারে।