ও আমাদের সাহায্য করতে চাইছে লুক, লিলি বলল। আমি সাহায্য। চেয়েছি। শেরিফের অফিসে গিয়েছিলে?
না। ফোনও করিনি।
ভুরু কুঁচকে ফেলল লিলি। কেন?
করে কোন লাভ হত না। বরং খারাপ হত। গুজব ছড়াত বেশি, অনেক বেশি লোকে জানত, বদনাম বেশি হত র্যাঞ্চের।
কিন্তু কারও চোখে পড়লে…।
আশপাশের সব র্যাঞ্চারদের খবর দিয়ে দিয়েছি। কাজ হলে ওদেরকে দিয়েই হবে। লিলির দিকে তাকিয়ে কোমল হলো লুকের দৃষ্টি। ভেব না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ওকে পাবই আমরা।
পেলেই ভাল। কোলের ওপর রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল লিলি।
.
ডিনার শেষে সেদিন ক্যানু রেসের জন্যে তৈরি হতে লাগল মেহমানেরা। এই সুযোগে আস্তাবলে গিয়ে একবার তদন্ত চালিয়ে আসা যায়, ভেবে খুশি হয়ে উঠল। কিশোর। সুর্য তখনও ডোবেনি। ইতিমধ্যেই কাজের গতি কমে এসেছে। শ্রমিকদের। কয়েকজন ছুটি নিয়ে শহরেও চলে গেছে। শান্ত হয়ে গেছে র্যাঞ্চ। মুসার কানে কানে বলল কিশোর, আমাকে কভার দাও।
কি করবে?
পাহারা দাও তুমি। কয়েক মিনিট লাগবে আমার। ইউনিকর্নের স্টলটায় ভাল করে দেখতে চাই একবার।
ছায়ার মত এসে নিঃশব্দে আস্তাবলটাতে ঢুকল কিশোর। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল কয়েকটা ঘোড়া। ভেতরে আলো কম, কিন্তু বাতি জ্বালল না সে। বরং পকেট থেকে টর্চ বের করে জ্বালল।
আগের বার যেমন দেখেছিল তেমনি রয়েছে ইউনিকর্নের স্টল। কোন সূত্র নেই। সাবধানে সিমেন্টের মেঝেতে আলো ফেলে দেখতে লাগল সে। আলো ফেলল দেয়ালে, ঘরের আড়ায়। অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়ল না। বেরিয়ে এসে পাশের অন্য স্টলগুলোতে অনুসন্ধান চালাল। নাকি স্বরে ডাকল কয়েকটা ঘোড়া, নাল লাগান খুর ঠকল কঠিন মেঝেতে।
ঘড়ি দেখল কিশোর। পনের মিনিট পার করে দিয়েছে। বেরিয়ে যাওয়া দরকার, নইলে সে কোথায় গেল ভেবে সন্দেহ করে বসতে পারে কেউ।
ফেরার জন্যে ঘুরল কিশোর। হারিকেনের স্টলটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। অস্থির হয়ে আছে ঘোড়াটা। মাটিতে পা ঠুকছে রাগত ভঙ্গিতে।
ঘাড়ের কাছটায় শিরশির করে উঠল কিশোরের। রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। এরকম করছে কেন ঘোড়াটা? ওকে দেখে? নাকি অন্য কেউ আছে ভেতরে? টর্চ নিভিয়ে দিয়ে দম বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগল সে। কান খাড়া করে রেখেছে।
বাঙ্কহাউসে হাসছে কেউ। খুর দিয়ে খড় সরাচ্ছে হারিকেন, মাঝে মাঝে নাকি ডাক ছাড়ছে মৃদু স্বরে। এছাড়া আর কিছু নেই। কাউকে দেখা গেল না আস্তাবলে।
কয়েক সেকেণ্ড পরে টর্চ জ্বালল কিশোর। আলো ফেলে তাকাল হারিকেনের স্টলের ভেতর। মাথার সঙ্গে কান লেপ্টে ফেলেছে ঘোড়াটা, বড় বড় করে ফেলেছে। নাকের ফুটো, পেছনে সরে গেছে যতটা সম্ভব। ওর মুখে আলো ফেলল কিশোর, তারপর পায়ে, আরও সরে যাওয়ার চেষ্টা করল হারিকেন।
পেছনে একটা শব্দ হলো। ধক করে উঠল কিশোরের বুক। ফিরে তাকাতে গেল। প্রচণ্ড আঘাত লাগল মাথায়। একই সময়ে খুলে যেতে লাগল স্টলের দরজা। চোখের সামনে হাজারটা তারা জ্বলে উঠল যেন তার।
ফিরে তাকাল সে। মুখে এসে লাগল রুপার বালসওয়ালা একটা বেল্টের বাড়ি। লাফিয়ে পাশে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেও আঘাতটা এড়াতে পারল না।
বেহুশ হয়ে স্টলের ভোলা দরজা দিয়ে ভেতরে পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে দেখতে পেল, পেছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে উঠছে ঘোড়াটা। প্রবল। বেগে সামনের দুই পা নামিয়ে আনবে হয়ত তার ওপর, খুর দিয়ে গেঁথে ফেলবে পেট, বুক। কিন্তু কিছুই করার নেই তার।
.
০৭.
কিশোর! কিশোর! বহুদূর থেকে যেন ভেসে এল মুসার কণ্ঠ।
চোখ মেলার চেষ্টা করল কিশোর। তীক্ষ্ণ ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল মাথার একপাশে। দুর্বল কণ্ঠে বলার চেষ্টা করল, মুসা, আমি এখানে! স্বর বেরোল না। চোখ মেলল। আস্তাবলের একধারে উজ্জ্বল আলোর নিচে পড়ে আছে সে, মুখের ওপর ঝুঁকে আছে মুসা আর রবিন।
যাক, খুলেছে, মুসা বলল। কি হয়েছিল, কিশোর?
মাথার পেছনটা ডলতে ডলতে কিশোর বলল, কে জানি বাড়ি মেরেছে।
কে? জানতে চাইল রবিন।
চোখ কুঁচকাল কিশোর। মাথা ঝাঁকাল। জানি না। কেবল একটা রুপার বাস দেখেছি। হারিকেনের স্টলের সামনে ছিলাম। দরজা খুলে গেল। ভেতরে পড়ে গেলাম।
মুসা বলল, দরজাটা এখন লাগানো। ঘোড়াটাও ভেতরেই রয়েছে।
যে মেরেছে তাহলে সেই টেনে সরিয়ে এনেছে।
তার মানে খুন করার ইচ্ছে ছিল না, বিড়বিড় করল রবিন। ঠিক আছে, থাক, আমি ডাক্তার কাপলিংকে ডেকে আনি।
না, লাগবে না। আমি ভাল হয়ে যাচ্ছি। মিথ্যে বলেনি কিশোর। চোখে। আলো সয়ে আসতেই মাথার দপদপানিটা কমতে লাগল। কনুইয়ে ভর দিয়ে উঠে বসল। আরও পরিষ্কার হয়ে এল মাথার ভেতরটা।
সত্যি লাগবে না? ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন।
না। মাথার ব্যথাটা থাকবে কিছুক্ষণ, বুঝতে পারছি। এক-আধটা ট্যাবলেট খেয়ে নিলেই সেরে যাবে।
ডাক্তারে দেখলে অসুবিধে তো কিছু নেই? জোর করতে লাগল রবিন। কিছুতেই কিশোরকে রাজি করাতে না পেরে উঠে গিয়ে আলো নিভিয়ে দিল। তিনজনে বেরিয়ে এল আস্তাবল থেকে। বিকেলের বাতাস একগোছা কোঁকড়া চুল উড়িয়ে এনে ফেলল কিশোরের মুখে। সরানর চেষ্টা করল না সে। বাতাসটা ভাল লাগছে। বলল, কেন মারা হলো আমাকে বুঝতে পারছ তো? কেউ একজন চাইছে না, আমরা তদন্ত করি। হয়ত সূত্রটুত্র রয়ে গেছিল, সরিয়ে ফেলতে এসেছে।