কি করে দেবে? ঘোড়ায় চড়ার অবস্থা আছে নাকি তোমার?
আজ নেই, তবে যেদিন দরকার সেদিন ঠিকই থাকবে, সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, রেগে গেল লিলি। চোখ থাকলেই দেখতে পাবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাদেরকে। কঠোর কণ্ঠে নিতান্ত অভদ্র ভাবেই বলল, যান, বেরিয়ে যান আমার বাড়ি থেকে! এক্ষুণি!
০৬.
গটমট করে ঘরে ঢুকে গেল লিলি। পেছনে দড়াম করে লাগিয়ে দিল দরজাটা।
এটাই তোমার শেষ সুযোগ! চিৎকার করে বলল পাইক।
বোকা মেয়ে! শুয়োরের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করল নিরেক। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে বলল, ওকে বোঝাও গে। তোমাদের তো বন্ধুই মনে হয়। বলো, পাইকের প্রস্তাব মেনে নিতে। এরকম একটা জায়গা থেকে এর বেশি আর কি আশা করে ও? শুনলাম, ঘোড়াটাও নাকি হারিয়েছে?
খারাপ কথা বাতাসের আগে চলে, আনমনেই বলল রবিন।
রাগে ঠোঁটে ঠোঁট চাপল নিরেক। দামি যেটা ছিল সেটাও গেল। শুকনো কয়েকটা গর্ত আর ধসে পড়া বাড়ি ছাড়া শেষে আর কিছুই থাকবে না। ব্যাংক আর একটা কানাকড়িও দেবে না। সময় ফুরিয়েছে ওর।
ইউনিকর্নের কথা ভাবল কিশোর। সাংঘাতিক দামি একটা জানোয়ার।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে থামল নিরেক, ঘুরে তাকাল কিশোরের দিকে। শীতল এক চিলতে হাসি ঠোঁটে ফুটেই মিলিয়ে গেল। আরেকটা কথা, ঘোড়াটা পালিয়েছে একথা আমি বিশ্বাস করি না। লিলি নিজেই চালাকি করে এ কাজটা করেছে, যাতে ওটা পালাতে পারে।
কেন একাজ করবে? প্রশ্ন করল মুসা।
পাইকের দিকে তাকাল একবার নিরেক। বীমার টাকার জন্যে। অনেক টাকা বীমা করান হয়েছে ঘোড়াটার। কিন্তু লাভ হবে না। আমি নিজে চেষ্টা করব, যাতে সমস্ত শয়তানী ফাঁস হয়ে যায়, টাকা আদায় করতে না পারে কোম্পানির কাছ থেকে। জালিয়াতিটা ব্রা পড়লে জায়গা-সম্পত্তি তো যাবেই, জেলেও যেতে হবে। ওকে।
স্থির দৃষ্টিতে লোকদুটোর নেমে যাওয়া দেখল কিশোর।
ওগুলো মানুষ না কি! ঘৃণায় মুখ বাঁকাল রবিন।
জায়গাটা ওর এত দরকার কেন? নিজেকে প্রশ্ন করল যেন কিশোর। র্যাঞ্চের কি অভাব পড়ল নাকি এই এলাকায়? জায়গা তো আরও আছে।
হয়ত এরকম আর নেই, মুসা বলল।
হু! দুজনের দিকে তাকাল কিশোর। ইউনিকর্ন যেখানে লাফিয়ে পড়েছিল সে জায়গাটা দেখতে যাচ্ছি আমি। আসতে চাও?
নিশ্চয়, বলতে এক মুহূর্ত দেরি করল না রবিন।
মুসা মাথা নাড়ল। যাওয়ার তো খুবই ইচ্ছে। কিন্তু কেরোলিন আন্টিকে যে কথা দিয়ে ফেলেছি, বিকেলে রান্নাঘরে তাকে সাহায্য করব। পরে গেলে হয় না?
দেরি করা উচিত না, কিশোর বলল।
তাহলে আর কি করা, নিরাশ ভঙ্গিতে হাত ওল্টাল মুসা। তোমরাই যাও।
রওনা হলো কিশোর আর রবিন। গোলাঘরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে রবিন বলল, লুক যদি দেখে ফেলে কি বলব?
জানি না। তবে ওর কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমরা।
.
ঘোড়ায় করে সেই শৈলশিরায় চলে এল ওরা, যেখান থেকে হারিয়েছে ইউনিকর্ন। মাটিতে নিজের বুটের আর ঘোড়াটার খুরের ছাপ দেখা গেল। গর্তের কিনারে যেখান থেকে লাফ দিয়েছে সেখানেও রয়েছে, কিন্তু তার পরে আর নেই। একেবারে যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
মুসা হলে এখন জিনভূতের কাজ বলেই চালিয়ে দিত, কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল রবিন।
নদীটা না থাকলে সত্যিই অবাক হতাম। নদীর কিনার দিয়ে হাঁটতে শুরু করল কিশোর। পানি খুব কম। এটাতে লাফিয়ে পড়ে পানিতে পানিতে হেঁটে চলে যাওয়াটা ওর মত ঘোড়ার পক্ষে একেবারে অসম্ভব নয়।
এই চালাকি একটা ঘোড়া করল? প্রশ্ন তুলল রবিন। তীরে উঠে আবার মুছে দিয়ে গেল সব চিহ্ন?
হোঁচট খেয়ে যেন দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। তাই তো! ভাল কথা বলেছ! এই কাজ মানুষ ছাড়া আর কারও পক্ষেই সম্ভব না!
এরপর ভালমত খুঁজতে শুরু করল ওরা। ঘোড়ার চিহ্ন যতটা না খুঁজল তার চেয়ে বেশি খুঁজল মানুষের চিহ্ন। নদীর পাড়ে উজান ভাটিতে বহুদূর পর্যন্ত দেখল। আশপাশের ঝোপ দেখল। কিছুই পাওয়া গেল না। কিছু না। কাপড়ের একটা ছেঁড়া টুকরোও না। কাটা ঝোপে লেগে নেই ঘোড়ার লোম। নদীর পাড়ের নরম মাটিতেও নেই কোন চিহ্ন।
ইউনিকর্নকে বোধহয় এতক্ষণে পেয়ে গেছে লুক, যেন কথার কথা বলল রবিন, গলায় জোর নেই।
কিছুই পেল না ওরা। হতাশ হয়ে ফিরে এল র্যাঞ্চে। রান্নাঘরে মুসা তো আছেই, লিলিও আছে। গলা শুকিয়ে গেছে। দুই গ্লাস সোডা নিয়ে বসল কিশোর আর রবিন। লিলিও সঙ্গ দিল ওদেরকে। একথা সেকথা থেকে চলে এল রোডিও খেলার কথায়। রোডিও রাইডিঙের আশ্চর্য রোমাঞ্চকর সব গল্প লিলির মুখে শুনতে লাগল তিন গোয়েন্দা।
খাইছে! দারুণ খেলা তো! মুসা বলল, আমারও খেলতে ইচ্ছে করছে!
শুনতে যতটা মজা লাগছে, রবিন বলল, নিশ্চয়ই ততটা নয়। খুব কঠিন খেলা।
আসলে এগুলো একেক জনের কাছে একেক রকম। নেশার মত। নইলে এর চেয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলে না লোকে? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও খেলে।
জানালার বাইরে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। আস্তাবলের কাছে দেখা যাচ্ছে লুক। আর জনকে। ইউনিকর্ন নেই ওদের সঙ্গে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে লিলিও তাকাল। তার ঘোড়ার লাগামটা জনের হাতে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল লুক।
রান্নাঘরের দরজা ঠেলে ফোরম্যান ঢুকতেই লিলি বলল, তাহলে পাওয়া যায়নি ওকে? রেসের ঘোড়া
নাহ! বুঝতেই পারছি না কোথায় গেল! রুমাল বের করে ভুরুতে লেগে থাকা ঘাম আর ধুলো মুছল লুক। রোদে শুকিয়ে গেছে চামড়া। কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল, আর তো খুঁজতে যাওয়ার চেষ্টা করবে না, নাকি? বুঝতেই পারছ এসব তোমাদের কাজ নয়। নদীর পাড়ে তোমার বুটের ছাপই মনে হয় দেখেছি, কাল রাতের…