ব্রডের দিকে হাত নেড়ে ঘোড়া থেকে নামল বেনি। লাগামটা বাঁধল বেড়ায়। কিশোরের দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করল, লিলি কোথায়?
ঘরে।
গিয়ে ওকে বলা দরকার, ইউনিকর্নকে দেখেছে আব্ব।
কোথায়? একসাথে জিজ্ঞেস করল তিন গোয়েন্দা।
আজ সকালে, আমাদের র্যাঞ্চের পশ্চিম ধারে। পাহাড়ে চলেছিল আব্বা তখন।
ও পালিয়েছে জানলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ব্রডের দিকে তাকাল বেনি। কিশোরের দিকে ফিরে বলল, লুক বোলান ফোন করেছিল। ইউনিকর্নই কিনা শিওর না আব্বা, তবে ওরকমই, কালো, বিরাট একটা ঘোড়া।
চলো, রবিন আর মুসার দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর।
গিয়ে কি করবে? ব্রড বলল, কয়েকজনকে নিয়ে লুক চলে গেছে অনেক আগেই।
আরও কয়েকজন গিয়ে খুঁজলে ক্ষতি হবে না।
কপালের ঘাম মুছল ব্রড। চলো, আমিও যাব।
তুমি থাক না? বেনি অনুরোধ করল।
দ্বিধায় পড়ে গেল ব্রড। ইতস্তত করে বলল, না, যাওয়াই উচিত। হাজার হলেও এই র্যাঞ্চে চাকরি করি আমি, যাওয়াটা আমার দায়িত্ব।
মিনিট বিশেক পরে পশ্চিমে কুপারদের র্যাঞ্চের দিকে রওনা হয়ে গেল কিশোর, মুসা আর ব্রড। কুপার র্যাঞ্চের পশ্চিমের পাহাড়ে কয়েক ঘন্টা ধরে খুঁজেও পেল না ঘোড়াটাকে। হাল ছেড়ে দিয়ে ব্রড বলল, বুঝতে পারছি না। গেল কোথায়?
সীমাহীন পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। যে দিকেই তাকায়। সেদিকেই ঘন বন। এরকম জায়গায় সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে একটা ঘোড়া। মিস্টার কুপারের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
ওসব করতে যেও না, তাড়াতাড়ি বলল ব্রড। যা করার লিলিই করবে।
কেন, আমি করলে দোষ কি?
অস্বস্তিতে পড়ে গেছে যেন ব্রড। চোয়াল ডলল। তারপর বলল, কয়েক বছর ধরেই দুটো র্যাঞ্চের সম্পর্ক খারাপ। ডাবল সির কোন মেহমান গিয়ে কথা বলবে, এটা নিশ্চয় ভাল চোখে দেখবেন না মিস্টার কুপার। পারলে লিলি কিংবা লুক গিয়ে বলুকগে, তোমার দরকার নেই।
র্যাঞ্চে ফিরে এল ওরা। লুক ফিরছে। ইউনিকর্নকে আনতে পারেনি। কুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আগেই, বেনি যা বলেছে মিস্টার কুপারও একই কথা বলেছে।
লুককে বলল ব্রড, কিশোর মিস্টার কুপারের সঙ্গে কথা বলতে চায়।
শক্ত হয়ে গেল লুকের ঠোঁট। দেখো, কিশোর, তুমি সাহায্য করতে চাইছ বুঝতে পারছি, কিন্তু এটা তোমার কাজ নয়। আমার। কাজেই যা কিছু করার দায়িত্ব আমারই। লিলির আব্বা মরার সময় আমাকে এ-দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আরেকটা কথা, আমি চাই না, এখানে যে গোলমাল হচ্ছে এটা কুপার জেনে ফেলুক।
কেন?
তাহলে পেয়ে বসবে। আমাদের এখানে গোলমাল আছে শুনলে ঘাবড়ে যাবে মেহমানরা, থাকতে চাইবে না। কুপারের র্যাঞ্চে গিয়ে উঠবে। এটা হতে দিতে পারি না আমরা।
কিশোরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘুরে বাঙ্কহাউসের দিকে রওনা হয়ে গেল লুক।
.
সেদিন বিকেলে ডাক্তারের আদেশ অমান্য করে নিচে নেমে এল লিলি। ঠিকমত পা ফেলতে পারে না, শক্ত হয়ে গেছে যেন জোড়াগুলো। ক্লান্তি আর উল্কণ্ঠায় চেহারা ফেকাসে। তবে আগের রাতের তুলনায় ভালই মনে হচ্ছে তাকে।
চলো, বারান্দায় বসে লেমোনেড খাই, তিন গোয়েন্দাকে প্রস্তাব দিল সে। বিছানায় আর যেতে পারব না।
বারান্দায় চেয়ার পেতে বসল চারজনে। গ্লাসে কয়েকবার চুমুক দিয়ে মুখ ফেরাল লিলি। বলল, শেরিফকে ফোন করে ইউনিকের কথা বলতে হবে। কারও চোখে পড়লেই তাহলে খোঁজ পেয়ে যাব আমরা।
যদি সেই লোকটা গিয়ে শেরিফকে বলে, কিশোর বলল। ডবসি কুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন?
বলেছি। তবে আমার মনে হয় না ইউনিককে দেখেছ। কিশোরের চোখ দেখেই যেন তার মনের কথা পড়ে ফেলল লিলি, মাথা নেড়ে বলল, না না, যা ভাবছ তা নয়। মিথ্যে বলেনি। তবে যেটাকে দেখেছে সেটা ইউনিক নয়, হয়তো কোন বুনো মাসট্যাংকে দেখেছে।
নাহ, কোন আলো দেখতে পাচ্ছি না, বিড়বিড় করে বলল রবিন। ইঞ্জিনের শব্দ শুনে তাকাল রাস্তার দিকে। ওইযে আসছে, আরও গোলমাল!
লম্বা সাদা একটা গাড়িকে আসতে দেখা গেল। ছুটে এসে বারান্দার কয়েক ফুট দূরে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল। গাড়িটা দেখেই লিলির চেহারা আরও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
দরজা খুলে নামল ফিলিপ নিরেক আর হারনি পাইক। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল একজনের পেছনে আরেকজন।
লিলির সঙ্গে কথা বলার আগে কিশোরদের দিকে তাকিয়ে নিল একবার নিরেক, সুস্থ হয়ে গেছ নাকি।
অনেকটা, লিলি বলল।
নিরেকের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাইক। স্টেটসন হ্যাঁটের কানাটা যেন ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর আর তার বন্ধুদের দিকে, চোখে ঠাণ্ডা দৃষ্টি। কত হলে জায়গাটা কিনতে পারব, শোনা যাক, জ্যাকেটের পকেট থেকে চেক বই বের করল সে। একলা কোথাও কথা বলা যাবে?
লিলিকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে সে, বুঝতে পারল লিলি। বলল, দরকার হবে না। আমার কোন আগ্রহ নেই।
কঠিন হয়ে গেল পাইকের চোয়াল। কিন্তু দামটা এখনও শোনইনি।
শুনতে চাইও না, চাঁছাছোলা জবাব দিল লিলি। এটা আমার বাপ-দাদার জায়গা, কোন কিছুর বিনিময়েই কারও কাছে বেচব না, যত দামই দিক না কেন।
কাজটা কিন্তু ঠিক করছ না, হুমকি দেয়ার ভঙ্গিতে বলল নিরেক।
উঠে দাঁড়াল লিলি। আপনাকে আমি বলেছি, ব্যাংকের ধার আমি শোধ করে দেব। সময় শেষ হয়নি, এখনই চাপাচাপি করছেন কেন? যান, জুলাইর পাঁচ তারিখে দিয়ে দেব।