এই, অত বকর বকর করো না, ধমক দিয়ে বলল ব্রড। কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের কাজ করতে হবে। লুক তোমাকে বলল না ঘোড়াটোড়া নিয়ে অত মাথা ঘামাবে না? আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও।
কথা কানেই তুলল না কিশোর। রহস্যময় ঘটনাই ঘটছে, তাতে আর কোন সন্দেহ নেই তার।
এর সমাধান করতেই হবে। সোজা এগিয়ে গেল ইউনিকর্নের স্টলের দিকে। ওটা খালি। লাথি মেরে চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে খড়। ভেঙে ফেলা হয়েছে একটা স্টলের দরজা। ভাঙা কাঠে লেগে রয়েছে কালো কয়েকটা লোম, ঘোড়ার লোম। নাল পরান খুরের দাগ পড়েছে কয়েক জায়গায়। তবে যে বাক্সটায় খাবার। দেয়া হয় সেটা ঠিকই আছে দেখা যাচ্ছে। খড়, একটা ফিড ব্যাগ, একটা পানির বালতি, আর অর্ধেক খাওয়া একটা আপেল।
সব কিছুই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোর। তাড়াতাড়ি রওনা হলো জেনারেল উইলি কেমন আছে দেখার জন্যে।
দিগন্তের দিকে হেলে পড়ছে চাঁদ। ঠাণ্ডা বাতাস লাগছে মুখে। অবাক হয়ে ভাবছে, কেন ওরকম খারাপ হয়ে গেল একটা ঘোড়া? কি কারণে হতে পারে? অসুখ-টসুখ করেছে? নাকি কেউ আতঙ্কিত করে দিয়েছে হারিকেনকে।
ভালই আছে জেনারেল। ঘরে চলল কিশোর।
রান্নাঘরের দরজা ঠেলে খুলে দেখল টেবিল ঘিরে বসে রয়েছে রবিন, মুসা, লিলি আর কেরোলিন। ওকে দেখে হাসল সবাই। রবিন বলল, এতক্ষণে এলে।
লিলিকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, আপনার তো এখন শুয়ে থাকার কথা?
ঠিক বলেছ, সুর মেলালেন কেরোলিন। ডাক্তার কাপলিং জানলে রেগে। যাবেন।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল লিলি। সবই বুঝি, কিন্তু বিছানায় থাকতে যে ইচ্ছে করে না!ইউনিকর্নকে ছাড়া রেখে কি ঘুম আসে? উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে জানালার বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকাল সে। টেবিলে রাখা চায়ের কাপটা তুলল, হাত কাঁপছে। কিশোরকে বলল, এইমাত্র এসেছিল লুক। বলল, তুমি নাকি ইউনিকের। পিছু নিয়ে বনে ঢুকেছিলে। খাদের মধ্যে লাফিয়ে পড়ে গায়েব হয়ে গেছে ও।
সে রকমই মনে হলো, একটা চেয়ার টেনে বসল কিশোর। কি কি করে। এসেছে বলতে লাগল। বলা শেষে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য করল লিলিকে। নিজেও গেল সঙ্গে। বিছানায় শুয়ে কম্বলে গা ঢেকে লিলি বলল, কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। তোমাকে…
শেষ করতে দিল না ওকে কিশোর, কি আর দেবেন? ধন্যবাদ পাওয়ার কাজ এখনও তো করতেই পারলাম না। ইউনিককে হারানো উচিত হয়নি আমার।
ওকে খুঁজে বের করবই আমরা, ফিসফিস করে নিজেকেই যেন বলল লিলি। করতেই হবে।
নিজের ঘরে ফিরে এল কিশোর। অনেকক্ষণ ধরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে ক্লান্তি অনেকটা দূর করে এসে ঢুকল রবিন আর মুসার ঘরে।
ওরা তখনও ঘুমায়নি।
কি ব্যাপার? ঘুম আসছে না? জিজ্ঞেস করল রবিন।
তোমরাও তো জেগে আছ।
তা আছি, হাই তুলল মুসা। আর বেশিক্ষণ থাকব না। তা কি ভেবে আবার এলে?,
এলাম। মনে উত্তেজনা থাকলে ঘুম আসতে চায় না তো, তাই…
তা বটে। ও, হ্যাঁ, ভুলেই গিয়েছিলাম, রবিন বলল, তুমি যাওয়ার পর ফিলিপ নিরেক ফোন করেছিল। লিলিকে চেয়েছিল। ওকে কি বলল সে জানি না, তবে মুখ কালো হয়ে যেতে দেখলাম লিলির। কি হয়েছে, জিজ্ঞেস করেছি, বলল না। বলল, ও কিছু না। শুধু বলল, আগামী দিন পাইককে নিয়ে নিরেক এখানে আসবে কথা বলতে।
আরও খবর আছে, চোখ নাচিয়ে বলল মুসা।
তার মানে তোমরাও বসে থাকোনি, খুশি হয়ে বলল কিশোর। কি খবর?
কেরোলিনের আন্টির সঙ্গে অনেক কথা বলেছি আমি, রান্নাঘরে, মুসা বলল। ব্রড জেসন নাকি মহিলার বোনের ছেলে।
তাতে কি? রবিনের প্রশ্ন।
গাল চুলকাল মুসা। হয়তো কিছুই না। কিন্তু ডবসি কুপারের ওখানে কাজ করে এসে যদি আবার এখানে ঢোকে, খটকা লাগে না মনে? শুরু থেকেই তো ওর খালা ছিল এখানে, তখন ঢুকল না কেন?
হ্যাঁ, সত্যি খটকা লাগে, মুসার সঙ্গে একমত হয়ে বলল কিশোর।
কেরোলিনের আন্টি আরও বলেছেন, নিজের আঙুলের নখ দেখতে দেখতে বলল মুসা, কিছু দিন ধরেই নাকি অদ্ভুত আচরণ করছে ঘোড়াগুলো।
শুধু ঘোড়াই না, কিছু কিছু শ্রমিকও করছে, হাই তুলল কিশোর। এমন ভাব করছে, বোঝানর চেষ্টা করছে, যেন এক রাতেই নষ্ট হয়ে গেছে হারিকেন। ওদের এই কথা মানতে রাজি নই আমি। এবং ওরা যে ভুল করছে এটা প্রমাণ করে ছাড়ব।
.
পরদিন সকালে নাস্তা সেরে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। কোরালের বেড়ায় হেলান দিয়ে দেখতে লাগল ব্রডের কাজ। একটা ঘোড়ার বাচ্চাকে আরোহী নিতে শেখাচ্ছে। পিঠ বাঁকিয়ে, নেচেকুদে, ঝাড়া দিয়ে অনেক চেষ্টা করছে ঘোড়াটা ওকে পিঠ থেকে ফেলার, পারছে না।
কয়েক বছর আগে ব্রড ব্রংকো রাইডার ছিল, মুসা বলল। কিছু কিছু লোকাল রোডিওতে ফার্স্ট প্রাইজও পেয়েছে। কেরোলিন আন্টি বলেছেন আমাকে।
ছেড়ে এল কেন? জানতে চাইল কিশোর।
বলেনি, আমিও জিজ্ঞেস করিনি। জানার চেষ্টা করব নাকি?
কর। আস্তাবলের দিকে তাকাল কিশোর। ওখানে ঢুকে তদন্ত করে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন গিয়ে সুবিধে করতে পারবে না। অনেক লোক কাজ করছে ভেতরে বাইরে। ইউনিকনের স্টলে তদন্ত করতে হলে একা একা গিয়ে করতে হবে। কাউকে দেখান চলবে না। লুক আর জন গিয়ে ইউনিককে পেল কিনা কে জানে।
এই সময় দেখল লম্বা পাওয়ালা একটা মাদী ঘোড়ার পিঠে চেপে আসছে বেনি কুপার।