খাদের কাছে পৌঁছে ব্রেক কষে দাঁড়ানর চেষ্টা করল ঘোড়াটা। পিছলে গেল পা। এত গতি এভাবে থামানো সম্ভব হলো না বোধহয়।
আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে দেখল কিশোর, অন্ধকারে হারিয়ে গেল ইউনিকর্ন।
.
০৫.
খাদের পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে গেল জেনারেল। নিচে তাকাল কিশোর। খাদটা তেমন গভীর নয় দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তবে ওইটুকু লাফিয়ে পড়েও আহত হতে পারে ইউনিকর্ন। খাদের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে রুপালি সাপের মত চলে গেছে নদী।
জেনারেলের পিঠ থেকে নেমে একটা গাছের সঙ্গে বাঁধল ওকে কিশোর। টর্চ জ্বেলে নামতে লাগল খাদের ঢাল বেয়ে। নদীর পারে এসে ইউনিকর্নের চিহ্ন খুঁজতে লাগল। কিন্তু কিছুই পেল না।
কান পেতে খুরের শব্দ শোনার চেষ্টা করল। শুনতে পেল না। ইউনিকর্ন কি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল? তারপর ভাটি অথবা উজানে গিয়ে উঠে পড়েছে ডাঙায়? ওর পিঠের আরোহী ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঝোপের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে?
দুই দিকেই টর্চের আলো ফেলে দেখল সে। শেষে হতাশ হয়ে উঠে এল। আবার ওপরে। জেনারেলকে খুলে নিয়ে ফিরে চলল র্যাঞ্চে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনাগুলোর কথা ভাবছে।
বনের কিনারে যেখানে রেখে এসেছিল লুক বোলানকে, সেখানেই রয়েছে। ঘোড়ার পিঠে বসে আছে ব্রড় জেসন। কিশোরকে দেখে এগিয়ে এল। যাক, এসেছ। তোমার পিছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ধরতে পারলাম না। ইউনিক কোথায়?
হারিয়ে ফেলেছি। কি করে খাদের মধ্যে লাফিয়ে পড়ে গায়েব হয়ে গেছে। ইউনিকর্ন, খুলে বলল কিশোর।
হু, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল লুক। আজ আর কিছু করার নেই। অন্ধকারে পাব না। কাল দিনের বেলা খুঁজতে বেরোতে হবে। কিশোরের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল, পরের বার এসব ব্যাপারে তুমি নাক গলাতে আসবে না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দেবে।
লিলি আমাকে সাহায্য করতে বলেছে, গম্ভীর গলায় জানিয়ে দিল কিশোর।
বিড়বিড় করে কি সব বলতে বলতে গিয়ে গাড়িতে উঠল লুক। মোটামুটি যা বুঝতে পারল কিশোর তা হলো, এসব অল্পবয়েসী ছেলেমেয়েদের নিয়ে সমস্যা। এদেরকে কিছু বোঝানো যায় না। নিজের ভালমন্দ বোঝে না।
ব্রডের পাশাপাশি র্যাঞ্চে ফিরে চলল কিশোর।
একসময় জিজ্ঞেস করল ব্রঙকে, আপনার সামনেই আস্তাবল থেকে পালিয়েছে ঘোড়াটা?
না।
আমি মনে করলাম…
বাধা দিয়ে ব্রড বলল, লাথি মেরে ফেলে দিল আমাকে। জখমটা দেখার জন্যে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। আমি ওখানে থাকতেই পালাল ওটা।
তার মানে আপনি পালাতে দেখেননি?
কৌতূহল ফুটল ব্রডের চোখে। কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল, না, তা দেখিনি।
অন্য কেউ দেখেছে?
বলতে পারব না। কেন?
না, ভাবছি, কেউ ওটাকে চালিয়ে নিয়ে গেল কিনা।
ইউনিকর্নকে? হেসে ফেলল ব্রড। অসম্ভব। ওর পিঠে কোন মানুষ চড়তে পারে না।
সে কথা আমিও শুনেছি। আবার ভাবনায় ডুবে গেল কিশোর।
চত্বরে ঢুকে ব্রড় বলল, দাও, জেনারেলকে আমিই রেখে আসি।
লাগবে না, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। ও এখন আমার দায়িত্বে আছে। আমিই দেখাশোনা করতে পারব। বহুবার বহু র্যাঞ্চে বেড়াতে গেছি। ঘোড়া। আমার অপরিচিত নয়।
শ্রাগ করল ব্রড। বেশ, যা ভাল বোঝে। মেহমানদের কথা আমাদেরকে রাখতেই হয়। তবে লুক যা বলেছে, মনে রেখ… উত্তেজিত ঘোড়ার পদশব্দ শুনে চুপ হয়ে গেল সে। আস্তাবলের দিকে তাকাল। আবার কি হল?
ব্রডের পিছু পিছু এগোল কিশোর। আস্তাবলে ঢুকল। আলোয় আলোকিত হয়ে আছে পুরানো বাড়ির ভেতরটা। হারিকেনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কয়েকজন। শ্রমিক।
কি হয়েছে ওর? জিজ্ঞেস করল ব্রড।
বুঝতে পারছি না, বলল একজন চোয়াড়ে চেহারার ব্র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড। মনে হচ্ছে। লুকের কথাই ঠিক। বদ রক্ত বেটাদের শরীরে।
কথাটা মানতে পারল না কিশোর। কিছু বলল না।
এই থাম, থাম, চুপ কর, মোলায়েম গলায় ঘোড়াটাকে বলল ব্রড়। ধীরে ধীরে ঢুকল স্টলের ভেতর।
সেই যে খেপেছে আর থামছে না, জানাল র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড।
এরকম করছে কেন বুঝতে পারছি না! অবাকই হয়েছে ব্রড।
লাথি মেরে মেরে খড় ছিটাচ্ছে হারিকেন।
খারাপ কিছু খেয়ে ফেলেছে বোধহয়, বলল কিশোর। ক্ষতি হয় এরকম কিছু।
ঝট করে তিনজোড়া চোখ ঘুরে গেল তার দিকে। হতেই পারে না! বলল একজন, ঘোড়াকে খাওয়ানো হয় সব চেয়ে ভাল আর দামি খাবার, ঘোড়ার জন্যে যা পাওয়া যায়। নিজের হাতে খাওয়াই আমরা।
তা তো বুঝলাম। কিন্তু হারিকেনের এই মেজাজের তো একটা ব্যাখ্যা থাকবে?
আছে, আরেকজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড বলল, বরক্ত। আর কোন কারণ নেই।
রাতারাতি ঘোড়ার স্বভাব বদলে যেতে পারে না।
তা পারে না, ঘোড়াটাকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে ব্রড। তবে। একেবারেই ঘটে না এটা ঠিক নয়।
হয়ত ওর খাবারে কেউ কিছু মিশিয়ে দিয়েছে, বলল আবার কিশোর।
এই র্যাঞ্চের কেউই কোন ঘোড়ার সামান্যতম ক্ষতি করবে না, জোর দিয়ে কথাটা বলল ব্রড। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, লাথি মেরে থামিয়ে দিল হারিকেন।– ঠিকমত লাগেনি, সামান্য একটু ছুঁয়ে চলে গেল লাথিটা। সরে গেল সে। পরিষ্কার দেখতে পেল এবার কিশোর ঘোড়ার ডান খুরের ওপরে সাদা লোম।
ও যে একেবারে ইউনিকর্নের মত আচরণ করছে! বলল আরেকজন শ্রমিক।
আরে দূর, কি যে বলো, হাত নেড়ে বলল অন্য আরেকজন। ইউনিকর্ন। হ। ইউনিকর্ন যখন শান্ত থাকে তখনই এরকম শয়তানী করে।