পেয়েছি। দোতলায় চলে গেছে। ভালই আছে, জানাল কিশোর। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল রবিন। চলো। শুনব।
কিশোর আর মুসাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে এল সে। কাপে গরম কোকা নিয়ে একটা নিজে নিল, অন্য দুটোর একটা দিল কিশোরকে, একটা মুসাকে। বলো, কোথায় পেলে?
সব শোনার পর জিজ্ঞেস করল, হারিকেন এই শয়তানীটা কেন করল বলো। তো?
জানি না, কোকার কাপে চুমুক দিল কিশোর।
কিশোর এতে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে, রবিনকে বলল মুসা।
সে আমি আগেই জানি, রবিন বলল। কাল রাতেই বুঝতে পেরেছি।
শ্রাগ করল কিশোর। দেখো, একটা কথা কি অস্বীকার করতে পারবে, কাল। থেকে কয়েকটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে? লিলিও তাই বলছে। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিরেক আর পাইকের কথা আগের দিন যা যা শুনেছিল, সব দুই সহকারীকে খুলে বলল সে।
কোকা শেষ করে ওপরতলায় চলল তিন গোয়েন্দা। নিজেদের ঘরে যাওয়ার আগে লিলিকে দেখতে গেল। আস্তে করে ওর ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে পাল্লা ঠেলে খুলল কিশোর। নাইটগাউন পরে বিছানায় বসে আছে লিলি।
ডাক্তার কি বললেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ইঙ্গিতে ওদেরকে চেয়ারে বসতে বলে লিলি বলল, ডাক্তাররা আর কি বলে? রেস্ট নিতে হবে কয়েক দিন। কিছু হলেই এছাড়া আর যেন কিছুই করার থাকে না মানুষের। আমি থাকব বসে? অসম্ভব! রোডিওর জন্যে তৈরি হতে হবে আমাকে। র্যাঞ্চটাকে বাঁচানর এটাই শেষ সুযোগ।
রবিন হেসে বলল, অত ভাবছেন কেন? আপনি যা এক্সপার্ট, কয়েকদিন প্র্যাকটিস করলেই আবার চালু হয়ে যাবেন।
হাসি ফুটল লিলির মুখে। তা পারব।
হারিকেনকে নিয়ে খেলতে গেলে, মুসা বলল, কার এমন ক্ষমতা, আপনাকে হারায়?
চুপ! আস্তে বলল, কৃত্রিম ভয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল লিলি, বেনি শুনতে পেলে মূৰ্ছা যাবে।
বাইরে মচ করে একটা শব্দ হলো। কাঁধের ওপর দিয়ে দরজার দিকে ঘুরে তাকাল কিশোর। না, কেউ দরজা খুলছে না। আবার লিলির দিকে ফিরল সে। এই সময় বুটের শব্দ কানে এল, হালকা পায়ে হাঁটছে কেউ। কে? আড়ি পেতে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছিল নাকি কেউ?
রবিন আর মুসাও শুনেছে শব্দটা। ঠোঁটে আঙুল রেখে ওদেরকে চুপ থাকতে ইশারা করে পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগোল কিশোর। একটানে খুলে ফেলল পাল্লা। বাইরে উঁকি দিয়ে কাউকে চোখে পড়ল না।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল লিলি।
সেটাই তো জানতে চাই আমি, মনে মনে বলল কিশোর। সন্দেহের কথাটা লিলিকে জানাল না। বলল, কিছু না। মনে হলো কেউ এসেছিল। দরজার কাছ থেকে সরছে না কিশোর। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অন্যান্য ঘরে মেহমানদের কথা শোনা যাচ্ছে, চলাফেরার শব্দ হচ্ছে। লিলির দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, সব ঘরেই লোক আছে নাকি?
ভাবল লিলি। বেশির ভাগ ঘরেই আছে। কেন?
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি, রহস্যময় কণ্ঠে বলল কিশোর।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের চোখে চোখে তাকিয়ে রইল লিলি। তারপর বলল, কেরোলিন তোমাদের কথা সবই বলেছে আমাকে। অনেক জটিল রহস্যের। সমাধান নাকি করেছ তোমরা।
তা করেছি, ফিরে এসে আবার চেয়ারে বসল কিশোর।
রহস্যের গন্ধ যখন পেয়েই গেছ, সাহায্য করো না আমাকে।
কিভাবে?
এই যে অদ্ভুত কাণ্ডগুলো ঘটল, এগুলোর জবাব চাই আমি।
আমিও চাই। আপনি বলাতে আরও সুবিধে হলো আমাদের। দুই সহকারীর দিকে তাকাল কিলোর। কি বলো?
একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল রবিন আর মুসা।
হয়তো দেখা যাবে কোন রহস্যই নেই, সব কাকতালীয় ঘটনা, লিলি বলল। তবে জানা দরকার, মন থেকে খুঁতখুতানি তো দূর হবে।
তা হবে, মাথা কাত করল কিশোর।
আচ্ছা, র্যাঞ্চটাকে স্যাবটাজ করতে চাইছে না তো কেউ?
অসম্ভব কি? চাইতেই পারে, শত্রু যখন আছে… কথাটা শেষ করল না। কিশোর। তাকাল লিলির দিকে। হারিকেনের কথা বলুন। এরকম আচরণ কেন করল কিছু আন্দাজ করতে পারছেন?
আবার মচমচ শব্দ হলো। তারপর টোকা পড়ল দরজায়। খুলে গেল পাল্লা। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে লুক বোলান। মুখে কাদা লেগে আছে। কাপড় ছেঁড়া। রাগে জ্বলছে চোখ।
কেন ওরকম করছে, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমি জবাব দিচ্ছি, রাগে প্রায় চিৎকার করে বলল লুক, সমস্ত ভদ্রতা দূর হয়ে গেছে কণ্ঠ থেকে, ওটা শয়তান! ভাইয়ের মত! সে জন্যেই করেছে! দুটোই শয়তান! আস্তাবলটাকে তছনছ করে। দিয়েছে! হ্যাঁ, যা বলতে এসেছি। ইউনিক শয়তানটা বেরিয়ে গেছে। ধরতে যাচ্ছি, সে কথাই বলতে এলাম।
লিলি কিছু বলার আগেই দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল সে। বুটের শব্দ ও তুলে চলে যেতে লাগল।
দুই লাফে দরজার কাছে চলে এল কিশোর। পাল্লা খুলে দেখল সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে ফোরম্যান। পেছনে এসে দাঁড়াল রবিন আর মুসা। রবিন জিজ্ঞেস করল, ও ওরকম করল কেন?
ঘোড়াদুটোর ওপর ভীষণ খেপে গেছে, কিশোর বলল। শুনলে না, আস্তাবল তছনছ করে দিয়েছে বলল।
কি করবে এখন? মুসার প্রশ্ন।
তোমরা গিয়ে লিলির কাছে বসো, কিশোর বলল, আমি আসছি।
র্যাঞ্চ হাউসের বাইরে চতুরে যেন পাগল হয়ে উঠেছে সবাই। বাঙ্কহাউস, আস্তাবল আর গোলাঘরে ছোটাছুটি করছে শ্রমিকরা।
এগিয়ে গেল কিশোর। একটা পিকআপে উঠতে দেখল লুককে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে গেল গাড়িটা।
কি হয়েছে? একজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ডকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ব্রড। শার্টের একটা হাতা গুটিয়ে ওপরে তুলে রেখেছে। কনুইয়ের কাছে নীল একটা দাগ, ব্যথা পেয়েছে। জায়গাটা ডলছে সে। বিষণ্ণ কণ্ঠে জানাল, ইউনিক পালিয়েছে! মাঠ পেরিয়ে পাহাড়ের দিকে ঘোড়ার খুরের শব্দ চলে যেতে শুনলাম।