এই তো, ভাল কথা, লুক বলল। নিরেক কিছু বলার আগেই কিশোরের দিকে ফিরে বলল, যাও, ঘরে যাও। তোমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলগে বসে। আমি লিলিকে খুঁজতে যাচ্ছি। লম্বা লম্বা পায়ে বাঙ্কহাউসের দিকে রওনা হয়ে গেল সে।
বনের ভেতর কোথায় কোন বিপদে পড়ে আছে লিলি, কে জানে! ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না কিশোরের। সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠেই কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকাল।
গাড়িতে উঠছে নিরেক আর পাইক। পাইকের খসখসে কণ্ঠ শুনতে পেল, ভেব না, ফিলিপ। নিজের কষ্টই কেবল বাড়াচ্ছে লিলি। কাজ হবে না এতে। র্যাঞ্চটা আমি দখল করবই।
ডাইনিং রুমেই রবিন আর মুসাকে বসে থাকতে দেখল কিশোর। এখন ওদের সঙ্গে রয়েছেন কেরোলিন।
লিলি ফেরেনি? জিজ্ঞেস করল মুসা।
মাথা নাড়ল কিশোর। না। আমাদের এভাবে বসে থাকাটা বোধহয় উচিত হচ্ছে না।
আমারও তাই মনে হয়, কেরোলিন বললেন। মেহমানদেরকে বলিগে। যারা যেতে রাজি হয়, যাবে।
আমি তো যাবই, মুসা বলল।
আমিও, বলল রবিন।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল সুইং ডোরের পাল্লা। ভেতরে ঢুকল লুক। চোখে। উল্কণ্ঠার ছায়া। কেরোলিনকে বলল, আমরা লিলিকে খুঁজতে যাচ্ছি। মেহমানরা যেন কেউ ঘর থেকে না বেরোয়। এরাও।
তিন গোয়েন্দাকে দেখাল সে। এমনিতেই যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় আছি। আবার কেউ কিছু করে বসুক…
কিন্তু এরা গোয়েন্দা…
গোয়েন্দা-ফোয়েন্দা আমাদের দরকার নেই! রেগে উঠল লুক। এখানে খুন হয়েছে নাকি, যে তদন্ত করবে? এখন আমাদের দরকার ভাল ট্র্যাকার, যে বনের ভেতরে চিহ্ন দেখেই হারান মানুষকে খুঁজে বের করতে পারবে, গোয়েন্দা লাগবে না। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল সে। তারপর কেরোলিনকে। বলল, জন কয়েকজনকে নিয়ে দক্ষিণের পাহাড়ে চলে যাবে। আমি আর ব্রড বেরোব গাড়িতে করে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ফিরে আসব। কিশোরের দিকে আঙুল তুলল সে। তোমরা ঘরে থাক। সাহায্য যদি করতেই হয়, বসে থাক ফোনের কাছে। বলা যায় না, লিলির ফোনও আসতে পারে। বেরিয়ে গেল সে।
কয়েক মিনিট পরে একটা গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার শব্দ শোনা গেল।
লুক যা-ই বলে যাক, মানতে রাজি নয় কিশোর। ওই লোকটার আদেশ শুনবে কেন সে? এখানে বসে বসে আঙুল চুষতে একেবারেই ভাল লাগছে না তার। দুই সহকারীর দিকে তাকাল।
বসেই থাকবে? রবিনের প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল কিশোর। না। জেনারেলকে নিয়ে বেরিয়ে যাব পাহাড়ে খুঁজতে।
জানতাম, হাসি ফুটল রবিনের মুখে।
কিশোরও হাসল। বলল, তবে লুক একটা কথা ঠিকই বলেছে, ফোনের কাছে কাউকে থাকতে হবে।
কে থাকবে? হাসি মিলিয়ে গেল রবিনের।
তুমিই থাকো না?
হ্যাঁ, থাক, প্লীজ! অনুরোধ করলেন কেরোলিন। মেহমানদেরকেও সঙ্গ দেয়া। দরকার, মাতিয়ে রাখা দরকার, যাতে অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে। একাজটা তোমার চেয়ে ভাল আর কেউ পারবে না।
কাঁধ ঝুলে পড়ল রবিনের। হতাশ হয়েছে। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আচ্ছাহ!
গুড বয়। উঠে গিয়ে প্যানট্রিতে ড্রয়ার ঘাটাঘাটি শুরু করলেন কেরোলিন। কয়েকটা পুরানো ম্যাপ এনে টেবিলে বিছালেন। আঙুল রেখে রেখে দেখিয়ে দিতে লাগলেন কোন কোন রাস্তা লিলির পছন্দ। শেষে বললেন, যে পথ ধরেই যাক, হট ম্প্রিঙের দিকেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ওদিকটাতেই যায়। গরম পানির ঝর্নাটার কথা বললেন তিনি।
দেখেছি ওটা আজকে, ম্যাপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার। ভাবছে, ঠিক কোন জায়গাটায় হারিকেনকে নিয়ে গিয়েছিল লিলি?
ধরো ফোন এল, কিংবা লিলি ফিরে এল, কি করব তখন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
একজন র্যাঞ্চ হ্যাণ্ডকে বলবে ফাঁকা গুলি করতে। তাহলেই আমি আর মুসা বুঝব, লিলি নিরাপদে আছে। ফ্লেয়ার থাকলে ভাল হত, জ্বালতে পারতে।
আছে তো, কেরোলিন বললেন। এখানে ওঁসক জিনিসের দরকার হয়। তাই রাখি। ট্যাক রুমে আছে। ফাঁকা গুলি করার জন্যে অন্য কাউকে দরকার নেই, আমিই পারব।
হাসল কিশোর। তাহলে খুবই ভাল। হট স্প্রিঙের দিকেই যাব আমরা। চল, মুসা। চেয়ারের হেলানে ঝোলান জ্যাকেটটা তুলে নিয়ে দরজার দিকে চলল সে।
চাঁদ উঠেছে। হলুদ আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। র্যাঞ্চের এখানে ওখানে বিচিত্র নীল আর ধূসর ছায়ার খেলা। দূরে লাল আলো নেচে নেচে এগিয়ে যেতে দেখা। গেল, নিশ্চয় লুকের গাড়ির। দক্ষিণের মাঠের দিকে চলেছে ও।
কয়েক মিনিটেই ঘোড়া বের করে জিন পরিয়ে ফেলল কিশোর আর মুসা, সকালে যে দুটো নিয়েছিল ওরা সেগুলোকেই নিল। ক্যাকটাসের পিঠে চড়ল মুসা। জিজ্ঞেস করল, ওরাতো গেছে দক্ষিণে। আমরা?
উত্তরে, জবাব দিল কিশোর।
জেনারেলের পিঠে চড়ল সে। রাশ টেনে ইঙ্গিত দিতেই ছুটতে শুরু করল ঘোড়া। পিছু নিল ক্যাকটাস।
সকালে যে পথে গিয়েছিল ওরা সেপথেই এগোল।
ঠিক পথেই যাচ্ছি তো? মুসার প্রশ্ন। গাছপালার দিকে তাকাচ্ছে বার বার। রাতের বেলা এসব জায়গা ভাল না, শুনেছি…
দোহাই তোমার, মুসা, ভূতের কথা শুরু করো না আবার!
চুপ হয়ে গেল মুসা।
তবে রাতের বেলা বনের চেহারাটা কিশোরেরও ভাল লাগছে না। টর্চের আলোয় কেমন ভূতুড়ে লাগছে পাইন গাছগুলোকে। ঠিক পথেই যাচ্ছি। সকালে এদিক দিয়েই গিয়েছিলাম।
ভাবতে ভাবতে চলেছে কিশোর। একসময় আনমনেই বলল, আশ্চর্য!
কি? জিজ্ঞেস করল মুসা।