আসলে, কিশোর বলল, ঋণী যদি হতে হয় কারও কাছে, গান গাওয়া ডাক্তারের কাছে হোন। শামানের মেসেজটা কি ভাবে কাজে লাগিয়েছে বুঝিয়ে বলল সে।
এদিক ওদিক তাকাতে লাগল জন। নিওমো কোথায়?
নিঃশব্দে কখন বনে ঢুকে গেছে ইনডিয়ান লোকটা, খেয়ালই করেনি কেউ।
ওকেও টাকা খাইয়েছে জোনস, মোড়ল বললেন জনকে, টাকা খাইয়ে দলে নিয়ে নিয়েছে। ওই ব্যাটাই পিকআপের ব্রেকটা খারাপ করে রেখেছিল। আরেকটু হলেই মেরে ফেলেছিল বেচারাদের।
তাহলে তো পালানোর চেষ্টা করবে।
যাবে কোথায়? ধরবই আমি ওকে, দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন মোড়ল। এগুলোকে বেঁধেছেদে এখন ট্রাকে তোলো…
জোনসের গাড়িটায় তুলতে হবে, মিলফোর্ড বললেন। ওটাতে জরুরী দলিলপত্র আছে। নিয়ে যাব পুলিশের কাছে। প্রমাণ এবং আসামী একসাথে পেয়ে গেলে পুলিশের সুবিধে হবে।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালেন মোড়ল। জন যাবে আপনাদের সাথে। কাছের থানাটা কোথায় দেখিয়ে দেবে।
নিওমোর কি হবে? জানতে চাইল মুসা।
আমাদের নিজেদেরও পুলিশ আছে, মোড়ল বললেন।
চাচা হলেন আমাদের পুলিশ প্রধান, বলল জন।
আমেরিকান সরকারের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে কিছু শর্ত দেয়া আছে, মোড়ল জানালেন। তার মধ্যে একটা হল, আমাদের সমাজে যেসব অপরাধ ঘটবে, সেগুলোর সাজা দেবার ভার আমাদের, পুলিশ নাক গলাতে আসবে না। আসামীদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষমতাও আছে আমাদের।
দাদা হলেন আমাদের বিচারক, জানিয়ে দিল জন।
জোনস আর দুই সহচরের হাত-পা বেঁধে গাড়িতে ভোলা হলো। মোড়ল গিয়ে বড় ট্রাকটাকে রাস্তা থেকে সরালেন। গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসল মুসা। জানালা দিয়ে মুখ বের করে ফিরে তাকাল। বিদায় জানিয়ে হাত নাড়লেন ডুম। এই প্রথম তার গম্ভীর মুখে হাসি দেখতে পেল সে।
ঘুরে দাঁড়ালেন মোড়ল। হালকা পায়ে ঢুকে পড়লেন বনের ভেতর।
.
ডায়মণ্ড লেকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল গোয়েন্দাদেরকে জন। এই রাস্তাটার কথাই তিন গোয়েন্দাকে বলেছিল তার বোন মালটি, মাত্র আগের দিন, অথচ ছেলেদের মনে হল সেটা হাজার হাজার বছর আগের কথা।
ডায়মণ্ড লেকে পৌঁছল ওরা। ছোট, সুন্দর একটা পার্বত্য শহর। চকচকে সুইমিং পুল পেরিয়ে এল ওরা, গল্ফ কোর্সের পাশ কাটাল। টেনিস কোর্ট, ঘোড়া রাখার জায়গা, ব্যাকপ্যাক কাঁধে পাহাড়ে ঘুরতে বেরোনো ভ্রমণকারী, ছবির মত সুন্দর দামি দামি বাংলো দেখল। ব্যক্তিগত বিমানবন্দরের ওপর ঘুরছে বড় একটা লিয়ারজেট বিমান।
যাক, জোরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল মুসা, এলাম শেষ পর্যন্ত।
আমার খিদে পেয়েছে, ঘোষণা করল কিশোর।
হায় হায়, আমার খিদেটা তোমার পেটে চলে গেল কি করে! হেসে বলল সহকারী গোয়েন্দা! খিদে খিদে তো কেবল আমি করতাম!
মিস্টার মিলফোর্ড বললেন, আমার একটা টেলিফোন দরকার প্রথমে। তারপর গোসল।
রবিন বলল, আমার ডাক্তার দরকার। বলে জানালা দিয়ে মুখ বের করতেই দেখল পথের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনটি সুন্দরী কিশোরী মেয়ে। ওর দিকে চোখ পড়তেই হাসল। হাত নাড়ল একজন। রবিনও তার জবাব দিল। শিস দিয়ে উঠল একটা মেয়ে।
জন তো অবাক। মেয়েরা শিস দেয়? উল্টো হয়ে গেল না ব্যাপারটা?
মুচকি হাসল মুসা। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল, তিন গোয়েন্দার অভিধানে উল্টো বলে কোন কথা নেই। এই তো, আমার খিদে কিশোরের পেটে চলে গেল, যে খেতেই চায় না। রবিনের দিকে তাকিয়ে মেয়েরা শিস দেয়, অথচ চিরকাল জেনে এসেছি মেয়েদের দিকে তাকিয়েই ছেলেরা শিস দেয়…
তোমরা আসলেই স্পেশাল, জন বলল। একটা কাজ করা দরকার। দাদাকে গিয়ে বলতে হবে, তোমাদের জন্যে যাতে একটা অনুষ্ঠান করে। তোমাদের ওপর অশুভ শক্তির নজর পড়েছে, সে জন্যেই এত বিপদ গেল। সেটা কাটানো দরকার। তোমরা যাবে তো?
নিশ্চয়ই! সাথে সাথে জবাব দিল মুসা। তোমাদের রান্না সত্যিই চমৎকার! আর তোমার বোন মালটি খুব ভাল মেয়ে!
কি ব্যাপার, মুসা, পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করল রবিন। ঘটনাটা কি?
না, কিছু না! লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি বলল মুসা।
কিশোর তাকিয়ে রয়েছে সিয়েরা মাদ্রের বরফে ঢাকা নীলচে সাদা চূড়ার দিকে। স্বপ্নিল হয়ে উঠেছে তার সুন্দর মায়াময় চোখ। বিড়বিড় করে আনমনে বলল, প্রেমে যদি সত্যিই পড়তে হয় কারও, তাহলে ওগুলোর…ওই বরফে ছাওয়া পাহাড়, রূপালি ঝর্না, নীল আকাশ, চিল…
অ্যাই, কি বিড়বিড় করছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
চমকে যেন স্বপ্নের জগৎ থেকে ফিরে এল গোয়েন্দাপ্রধান, অ্যাঁ!…না, কিছু না!…ও, থানা এসে গেছে?
‘ডায়মণ্ড লেক পুলিশ স্টেশন’ লেখা বাড়িটার ওপর চোখ পড়েছে তার।