বনের ভেতরে রবিন আর মিলফোর্ডের পিছু নিয়েছে নিওমো।
ডকের সঙ্গে নদীর কিনারে লড়ছে মুসা। এম-১৬টা কেড়ে নিতে চায়।
ভাতিজা! চিৎকার করে জনকে ডাকলেন মোড়ল।
ট্রাকের ড্রাইভিং সিটে চেপে বসেছে জন। ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করছে।
খোলা দরজার কাছে গিয়ে তার দিকে রাইফেল তাক করল হিলারি।
ভাতিজা, বোকামি কোরো না! আবার বললেন মোড়ল। নেমে এস!
আটকা পড়েছে সবাই, বুঝতে পারছে কিশোর। যে কোন মুহূর্তে এখন। ওদেরকে গুলি করে মেরে ফেলার আদেশ দিতে পারে জোনস। ওদের বাঁচিয়ে রাখার আর কোন কারণ নেই।
ওদেরকে সরিয়ে দেয়ার পর নিশ্চিন্তে আবার এই উপত্যকার রাজা হয়ে বসবে। জোনস। বাধা দেয়ার কেউ থাকবে না। দুষিত করতে থাকবে উপত্যকার পরিবেশ, অসুস্থ হতে থাকবে গাঁয়ের লোক। মরবে। ডাইনী খোঁজা চালিয়ে যাবে ইনডিয়ানরা, কিন্তু খুঁজে আর পাবে না। ঠেকাতেও পারবে না। গান গাওয়া উৎসব চালিয়ে যেতে থাকবে ওরা, একের পর এক মেসেজ পাঠাতে থাকবে ঈশ্বরের কাছে, লাভ হবে না কিছুই।
মেসেজ! অনুষ্ঠানের সময় জনকে দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে গান গাওয়া ডাক্তারঃ ডাইনী যা চায়, তাকে তাই দিয়ে দাও, ধ্বংস হয়ে যাবে সে!
দ্রুত চারপাশে তাকাল কিশোর। জোনস ডাইনী হয়ে থাকলে এখন সে চাইছে ওরা সবাই ধরা পড়ুক। আশার আলো উঁকি দিল তার মনে…মস্ত ঝুঁকি হয়ে। যাবে..কিন্তু আর কোন উপায়ও নেই।
জন! মুসা! রবিন! চিৎকার করে ডাকল কিশোর। সবাই চলে এস! ধরা দাও!
কক্ষণো না! বলেও শেষ করতে পারল না মুসা, ধা করে তার পেটে রাইফেলের বাঁট দিয়ে বাড়ি মারল ডক।
জনেরও নামার ইচ্ছে নেই। কিন্তু হিলারির রাইফেলের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছেটা করতেই হল।
ঝোপের ভেতর থেকে মিলফোর্ডের কলার ধরে টেনে বের করে আনল নিওমো। রবিন বেরোল তার পাশে। বাধাও দিল না, কিছু করতেও গেল না।
এই, চলে এসো তোমরা! আবার ডাকল কিশোর। আর কোন উপায় নেই আমাদের!
অবাক হয়েছে সবাই। রেগে গেছে মুসা আর জন। কেবল রবিন বুঝতে পারছে, কোন ফন্দি করেছে কিশোর পাশা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে সবাই জোনস যেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
আপনি জানেন, মোড়লকে বলল কিশোর, জোনস আমাদের মেরে ফেলবে!
না, মোড়লের এখনও ধারণা, কিশোর ঠিক কথা বলছে না, মারবে না। কেবল বের করে দেবে এই এলাকা থেকে।
বের করে দেয়ার জন্যেই কি আমাদের যে পিকআপটা দিয়েছিলেন, তার ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছিল?
কি বললে? জবাবের অপেক্ষা না করেই বললেন মোড়ল, পিকআপটাকে পড়ে থাকতে দেখে এসেছি। কিন্তু… চৌকোনা গম্ভীর মুখটাতে এই প্রথম সন্দেহ ফুটল।
খোলা জায়গাটায় হাজির হলো সবাই। জোনের বাকসটা দেখিয়ে মোড়লকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, ওরকম বাকলস আর কে পরত, বলুন তো?
জনের চাচা, জবাব দিলেন মোড়ল।
জন, দেখাও, কিশোর বলল।
পকেট থেকে বাকলস বের করে মোড়লকে দেখাল জন। উপত্যকায় পেয়েছে। এটা কিশোর। একটা কঙ্কালের পাশে। কঙ্কালের খুলিতে গুলির ফুটো।
চমকে গেল ডক। জোনসের দিকে ফিরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, আমি বার বার বলছি এগুলোকে শেষ করে দেয়া দরকার, ওই বুড়ো ইনডিয়ানটার মত, নইলে গোলমাল করবেই! আপনি শুনছেন না! আমি আর এসবের মধ্যে নেই, চললাম!
ট্রাকের দিকে দৌড় দিল ডক।
এই, দাঁড়াও, গাধা কোথাকার! জোনস বলল।
থামল না ডক। জোনস আর কিছু বলার আগেই রাইফেল তুললেন মোড়ল। গুলির শব্দ হলো একবার।
হাত থেকে উড়ে চলে গেল ডকের এম-১৬। ওটাতেই গুলি করেছেন তিনি। ডকের দিকে ছুটল মুসা।
পাঁই করে ঘুরলেন মোড়ল। রাইফেল তাক করলেন জোনসের দিকে।
দাঁড়ান! দাঁড়ান! হাত থেকে রাইফেল খসে পড়ল জোনসের। পিছিয়ে গেল।
শয়তান! রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন মোড়ল, এগিয়ে গেলেন জোনসের দিকে, তুমি আমার ভাইকে খুন করেছ! এখন এই ভাল মানুষগুলোকে খুন করতে যাচ্ছিলে! ধাম করে রাইফেলের বাঁট দিয়ে বাড়ি মারলেন লোকটার পেটে।
ব্যথায় ককিয়ে উঠল জোনস। বাঁকা হয়ে গেল শরীর। থামলেন না মোড়ল। প্রচণ্ড এক ঘুসি মারলেন জোনসের চোয়ালে। একটা মুহূর্ত বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে রইল লোকটার চোখ। তারপরই বুজে এল চোখের পাতা। বেহুশ হয়ে পড়ে গেল মাটিতে।
কারাতে-লাথি মেরে বসল রবিন, হিলারির চোয়ালে। মেরেই গোড়ালিতে ভর দিয়ে পাক খেল একবার, যে পা-টা ভোলা ছিল ভোলাই রইল, সোজা, টানটান। আরেকবার কারাতের মাই-গেরি লাথি খেল হিলারি, হজম করতে পারল না, টু শব্দটি না করে ঢলে পড়ল বসের পাশে।
ডকের হাত চেপে ধরে হ্যাঁচকা টানে তাকে ঘুরিয়ে ফেলেছে মুসা। ভারসাম্য হারাল লোকটা। কনুই দিয়ে তার বুকে কষে এক মাই হিজি-আতি লাগাল সে। আরেকটা লাগাতে যাচ্ছিল, ত্রাহি চিৎকার শুরু করল ডক, থাম! থাম! দোহাই তোমার, আর মের না! আমার কোন দোষ নেই! জোনস যা করতে বলেছে, করেছি! কসম!
এত অনুনয় করলে আর মারে কি করে? লোকটাকে টেনে নিয়ে এল মুসা, ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দিল মাটিতে, বেহুশ বসু আর তার সহকর্মীর পাশে।
তোমাদের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম, তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে বললেন মোড়ল ডুম সোবল। মিস্টার জোনস যে এত বড় শয়তান, কল্পনাই করতে পারিনি!
করবেন কি করে? মিলফোর্ড বলল। ভীষণ ধূর্ত লোক। আপনাদেরকে সাহায্য করছে বলে বলে ভুলিয়ে রেখেছিল। ঠেকার সময় উপকার পেয়েছেন, ফলে আপনারাও তার ওপর নরম ছিলেন।