এতক্ষণে জোনসের হাসির কারণটা বুঝতে পারল মুসা। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল।
কি হলো? চিৎকার করে উঠল কিশোর।
সামনে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে জোনস কোম্পানির বিশাল এক ট্রাক। হিলারি কিংবা অন্য কেউ চালান দিয়ে এসেছিল বোধহয়, তাকে রেডিওতে নির্দেশ দিয়েছে জোনস। মুসা যেটা চালাচ্ছে সেটাও অনেক বড় গাড়ি। ট্রাকটা যেভাবে। পথ জুড়ে রয়েছে, তাতে ছোট ফোক্সওয়াগেনকেও পাশ কাটিয়ে নেয়ার জো নেই। এটা তো অসম্ভব।ট্রাকের সামনে পেছনের বাম্পারের সঙ্গে গাছ ছুঁয়ে আছে।
ফাঁদে পড়েছি! চিৎকার করে জানাল মুসা।
স্কিড করে থেমে গেল গাড়ি। ট্রাকের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল হিলারি, হাতে এম-১৬, মুসার দিকে তাক করা। বেল্টে ঝুলছে ওয়াকি-টকি।
জানালার কাছে উঠে এল গাড়ির ভেতরের চারজন।
এবার? গুঙিয়ে উঠল রবিন।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে আরম্ভ করেছে কিশোর।
অ্যাই, ঘটে যদি কিছুটা বুদ্ধিও থাকে, চেঁচিয়ে আদেশ দিল হিলারি, আর খেপামি কোরো না। ভালয় ভালয় নেমে এসো। তোমাদেরকে মারতে মানা করেছে। বস্, বেঁচে গেলে। তাই বলে গোলমাল সহ্য করব না।
দলবল নিয়ে এখুনি চলে আসবে জোনস, মিলফোর্ড হুঁশিয়ার করলেন।
একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। আমি হিলারির নজর সরিয়ে রাখি, তোমরা সব সারি দিয়ে নেমে একেকজন একেকদিকে পালাও…
অ্যাই, কথা কানে যায় না! ধমক দিয়ে বলল হিলারি। জলদি নাম!
সাবধান! মিলফোর্ড বললেন।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দরজার হাতল ধরে দ্বিধা করল। তারপর লম্বা দম নিয়ে টান দিয়ে খুলে ফেলল পাল্লা। দুহাতে মাথা চেপে ধরে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার অভিনয় শুরু করল। ওওওহ! ওওওহ! ককাতে লাগল সে। মাটিতে নেমে টলতে টলতে এগোল হিলারির দিকে। মরে যাচ্ছি! ব্যথায় মরে যাচ্ছিরে বাবা!
ভুরু কুঁচকে ফেলেছে হিলারি। মোরগের মত গলা লম্বা আর মাথা কাত করে তাকিয়ে রয়েছে। চোখে সন্দেহ। কিশোরের দিকে তাক করেছে এখন রাইফেল।
আমি মরে যাচ্ছি! টলতে টলতে আরও দুই পা আগে বাড়ল কিশোর। বাঁচান আমাকে! মরে গেলাম!
সরো! চেঁচিয়ে উঠল হিলারি।
আরেকটু এগোল কিশোর। টলে পড়ে যাচ্ছে যেন এরকম ভঙ্গি করে প্রায় পায়ের ওপর গিয়ে পড়ল হিলারির। ধরে সামলানর জন্যে চেপে ধরল ওর রাইফেল ধরা হাত। ঠেলে রাইফেলের নল সরিয়ে দিল আরেক দিকে।
তাকিয়েই ছিল মুসা। লাফিয়ে নামল মাটিতে। পেছনে রবিন, জন আর মিলফোর্ড।
জুডোর এক প্যাঁচে হিলারিকে মাটিতে ফেলে দিল কিশোর। শরীর দিয়ে চেপে ধরল।
সরো! সরো! চেঁচাতে লাগল হিলারি।
পালাচ্ছে! পেছন থেকে জোনসের চিৎকার শোনা গেল! ধরো ওদেরকে!
দলবল নিয়ে ছুটে আসতে লাগল সে।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। বনের দিকে দৌড় দিয়েছে রবিন আর মিলফোর্ড। মুসা যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে বনে ঢোকার মুখটার দিকে। সেদিকেই ছুটল গোয়েন্দাপ্রধান। ঝড়ো হাওয়ার মত ছুটছে জন, জোনস কোম্পানির একটা ট্রাকের দিকে।
মোড়লও ছুটছেন, কিশোরকে ধরার জন্যে। জনের চেয়ে কম ছুটতে পারেন না। দ্রুত কমছে দুজনের মাঝের দূরতু। সাঁ করে ঘুরে গিয়ে গুহার দিকে ছুটল কিশোর। আরেকটা বুদ্ধি করেছে। একটু আগে জোনসের ওপর কতটা রেগে গিয়েছিলেন মোড়ল, দেখেছে। সেই রাগটাকেই কাজে লাগাতে চায়।
সব চেয়ে কাছে যে গুহাটা রয়েছে সেদিকে ছুটল কিশোর। পেছনে তাড়া করছেন মোড়ল।
ঢুকে পড়ল কিশোর।
চিৎকার করে ডাকলেন মোড়ল, বেরোও! জলদি বেরোও! ওটা পবিত্র জায়গা! তোমাদের ঢোকার অধিকার নেই।
তাহলে জোনস আর তার লোকেরা ঢুকল কি ভাবে? চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ওরা আমাদের মানুষকে সাহায্য করে। ঈশ্বর সেটা বুঝবেন। আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছিল। মিস্টার জোনস আসাতে বেঁচেছি।
বাঁচলেন আর কই? অসুখে তো মরতে চলেছেন।
সেটা মিস্টার জোনসের দোষ নয়। বেরোও!
আসুন ভেতরে, ডাকল কিশোর। দম নিয়ে দেখুন, কেমন নাক আর গলা জ্বালা করে। মারাত্মক বিশাক্ত বর্জ্য পদার্থ রয়েছে এই ড্রামগুলোতে।
ড্রামগুলোর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন মোড়ল, না, তা হতে পারে না। মিস্টার জোনস বলেছেন, এগুলোতে বিস্ফোরক রয়েছে। আমাকে রেখেছেন পাহারাদার। এখানে বাইরের কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে জানাতে বলেছেন। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা এখন বেশি, অনেক প্রতিযোগী আছে তার। ওরা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। সে জন্যেই সব কথা বাইরের লোকের কাছে গোপন রাখতে বলেছেন। ওয়াকি-টকি দিয়েছেন যোগাযোগ করার জন্যে। জায়গাটার ভাড়া দেন। তিনি, সেই টাকায় গাঁয়ের লোকে.দরকারী জিনিস কিনতে পারে। এখানে জিনিস রাখার অধিকার তার আছে। যা খুশি রাখুক, আমাদের নাক গলানর কিছু নেই। থামলেন মোড়ল। বিষণ্ণ স্বরে বললেন, ভাড়ার টাকাটা এখন আমাদের খুবই দরকার। গাঁয়ের দুঃসময় যাচ্ছে।
কিন্তু বিষাক্ত বর্জ্য যে অসুস্থ করে ফেলছে আপনাদেরকে একথাটা ভেবেছেন?
কিশোরের চারপাশে একপাক ঘুরলেন মোড়ল। রাইফেলের নল নেড়ে আদেশ দিলেন, বেরোও!
জোনস হল সেই বিদেশী ডাইনী, যার কথা বলেছেন শামান, গুহামুখের দিকে এগোতে এগোতে বলল কিশোর। আবার রোদের মধ্যে বেরিয়ে বলল, আপনি আসলে ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে। আমি জানি, গুলি করতে পারবেন না।
দ্বিধা করলেন মোড়ল। তারপর রাইফেলের নল কিশোরের পিঠে ঠেসে ধরে ঠেলে নিয়ে চললেন জোনসরা যেখানে অপেক্ষা করছে সেখানে।