একটা মুহূর্ত নীরব হয়ে রইল তিনজনে।
হাড়গুলো দেখার জন্যে থেমেছিলে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। তোমাদের জন্যে ভাবনা হচ্ছিল।
আরও খারাপ খবর আছে তোমার জন্যে। খুলিটাতে বুলেটের ফুটো দেখেছি।
গুলি করা হয়েছে? কে করল? কেন করল?
হ্যারিস হেরিং-এর দুর্ঘটনার কথা বলল কিশোর। তিন গোয়েন্দা আর রবিনের বাবাকে খুন করে যে দুর্ঘটনার মত করে সাজাতে চায়, সেকথাও বলল।
তুমি বোঝাতে চাইছ, জন বলল, তোমাদের মতই চাচাও কিছু সন্দেহ করেছিল, এই জায়গাটা দেখে ফেলেছিল বলেই তাকে মরতে হয়েছে?
হতে পারে।
চুপ করে ভাবল জন। বলল, অনুষ্ঠানে দাদা জেনেছেন, বিদেশী ডাইনী এসে আমাদের অসুস্থ করে তুলেছে। ডাইনীর লোভ খুব বেশি, সে যা চায় সেটা দিয়ে দিলেই কেবল তাকে ধ্বংস করা সম্ভব।
তাহলে জোনসই সেই ডাইনী।
কিন্তু যা চায় সেটা দিয়েই ধ্বংস করতে হবে, এর মানে কি? বুঝতে পারছে না রবিন।
জানি না, হাত ওল্টাল জন। চাচার বাকলসটা পকেটে রেখে দিল। চলো, খুঁজে বের করি। চওড়া একটা চাকার দাগ দেখিয়ে বলল, এটা মিস্টার জোনসের উইনিব্যাগোর দাগ। এসো। দাগটাকে অনুসরণ করে দুলকি চালে ছুটতে আরম্ভ করল সে।
ওর পেছনে ছুটল কিশোর আর রবিন। জনের ট্র্যাকিঙের ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছে। সরু রাস্তা ধরে এসে বার্চ আর পাইনের জঙ্গলে ঢুকল ওরা। গতি কমাল জন। সতর্ক হয়ে চলতে লাগল এখন থেকে।
বাতাসে পাইনের সুগন্ধ বেশিক্ষণ খাঁটি থাকতে পারল না, ভেজাল ঢুকে নষ্ট হয়ে গেল, গুহার কাছে যে দুর্গন্ধ পেয়েছে, সেই একই দুর্গন্ধ এখানেও।
এ থেমে গেল জন। পাওয়া গেছে। মিস্টার জোনসের উইনিব্যাগো। ওটা নিয়েই আমাদের গাঁয়ে যায়, খাবার, গুলি, দিয়ে আসে। বাচ্চাদের জন্যে খেলনা নিয়ে যায়।
পথের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে দামি অনেক বড় গাড়িটা। গুহার কাছ থেকে সরিয়ে এনে বর্জ্য পদার্থের বিষক্রিয়া-সীমানার বাইরে এনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। গাছপালার ভেতরে।
ওটার দিকে পা বাড়াতে গেল জন।
দাঁড়াও! ওর হাত ধরে ফেলল কিশোর। ভেতরে লোক থাকতে পারে। ওদের কাছে রাইফেল আছে।
মাটিতে জুতোর ছাপ দেখাল জন। সোলের নিচে চারকোনা খোপ খোপ করা। সেই ছাপ পড়েছে ধুলোতে। গাড়ির দিকে এগিয়ে গেছে।
চিনতে পেরেছ? জিজ্ঞেস করল সে।
মাথা নাড়ল কিশোর আর রবিন। পারিনি।
মুসা। ওকে রেখে সবাই চলে গেছে। এই যে দেখো, বুটের দাগ।
মুসাকে ধরে ফেলেছে! গুঙিয়ে উঠল কিলোর।
জনের দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকাল দুই গোয়েন্দা। এসো, পা বাড়াল আবার জন।
সাবধানে যাও, হুঁশিয়ার করল কিশোর। জোনস কাছাকাছিই থাকতে পারে।
পা টিপে টিপে গাড়ির কাছে চলে এল তিনজনে। জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল। দুজন মানুষকে দেখা গেল ভেতরে। ধাতব কিচেন চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখে কাপড় গোঁজা। একজন মুসা। আরেকজন…
বাবা! চিৎকার করে উঠল রবিন।
.
১৫.
প্রথমেই মুসা আর মিলফোর্ডের মুখের কাপড় টেনে বের করা হলো।
বাবা, ঠিক আছ তুমি?
এখন হলাম, মলিন হাসি ফুটল মিলফোর্ডের ঠোঁটে। কপালের জখমটার ফোলা কমেনি, আরও লাল হয়েছে। ডাক্তার ছাড়া হবে না। এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েই আগে ডাক্তার ডাকবে, কোমল গলায় বাবাকে কথা দিল রবিন।
তোমাকে ধরল কি করে, মুসা? বাঁধন খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নেতিয়ে রয়েছে সহকারী গোয়েন্দা। গাধা যে আমি, মাথায় গোবর পোরা, সে জন্যেই ধরেছে! বনের ভেতর দিয়ে কোন শর্টকাট রয়েছে, ডক চেনে, আমার অনেক আগেই এসে ওর ট্রাকগুলো বের করে নিয়েছে।
বাঁধনমুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন মিলফোর্ড আর মুসা। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে, ডলে ডলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে লাগলেন।
থ্যাঙ্কস, বলতে বলতেই হাত বাড়িয়ে রবিনের মাথা থেকে নীল ক্যাপটা নিয়ে মাথায় চাপালেন মিলফোর্ড। কিছু মনে করলে না তো?
আরে না না, কি যে বলো। তোমার জন্যেই তো রেখেছিলাম, হাসতে হাসতে বলল রবিন। এতদিন পর খুশির হাসি ফুটেছে তার মুখে। তারপর মনে পড়ল জনের সঙ্গে বাবার পরিচয় নেই। পরিচয় করিয়ে দেয়া দরকার।
দ্রুত সেরে উঠল মুসা। হাত-পা ঝাড়া দিয়ে, কয়েকটা লাফ দিয়ে, শরীরের আড়ষ্টতা বিদেয় করে দিয়ে এগিয়ে গেল গাড়িতে রাখা রেফ্রিজারেটরের দিকে। খিদেয় মরে যাচ্ছি আমি। ডালা খুলে বের করল মাখন, রুটি আর ফলের রস।
সবাই গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল খাবারের ওপর।
ভেতরে জায়গা বেশি নেই, জিনিসপত্রে ঠাসাঠাসি, তারই ভেতরে কোনমতে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন মিলফোর্ড। মাথা ঘুরে উঠল। টলে পড়ে যাচ্ছিলেন, কোনমতে তাক ধরে সামলালেন। ধপ করে বসে পড়লেন আবার চেয়ারে। তোমাদেরকে দেখে খুশি লাগছে। আমি যখন ছিলাম না তখন কি কি ঘটেছে বলো তো?
সব কথা খুলে বলল রবিন। শেষে বলল, হ্যারিস হেরিং মারা গেছে, বাবা। জোনস তাকে খুন করেছে।
আদেশ দিয়েছে জোনস, মিলফোর্ড বললেন, আর কাজটা সেরেছে ডক। হেরিঙের পিছে লেগে ছিল, জেনে গিয়েছি সে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। হিলারি সেসনার ইলেকট্রিক্যাল সিসটেমে গোলমাল করে দিয়েছিল আমাকে খুন করার জন্যে। কেবিনের ফায়ার ওয়ালের পেছনে জট পাকিয়ে থাকা একগাদা তারের মধ্যে ছোট একটা বোমা রেখে দিয়েছিল। স্বীকার করেছে সব।
ইলেকট্রনিক ফিউজ ব্যবহার করেছিল নিশ্চয়, মুখভর্তি খাবারের ফাঁক দিয়ে কোনমতে বলল কিশোর। ফলে মাটিতে থেকেই ওটা ফাটাতে পেরেছে জোনস।