পথের ধারে আরেকটা গুহামুখ দেখে ওটার সামনে দাঁড়াল।
কিশোর বলল, এটার গন্ধ এত খারাপ না।
ভেতরে উঁকি দিল রবিন। জানাল, চারকোনা গুহা।
ঢুকে পড়ল দুজনে। ভেতরে আলো খুবই কম, চোখে সয়ে আসার সময় দিল। ওরা। দেখতে পেল অবশেষে। দেখে হা হয়ে গেল। মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত একটার ওপর আকেরটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে শত শত ৫৫-গ্যালনের ড্রাম।
লেবেলে পড়ল কিশোর, পিসিবি এস।
রবিন পড়ল আরেকটার, অ্যাসিড।
পড়তে থাকল কিশোর, অ্যালকালাইন, অক্সিডাইজারস, সালফার স্লাজ।
আতঙ্ক ফুটেছে দুজনের চোখে। রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ! মারাত্মক বিষাক্ত!
সহসা ছায়া ঘন হল গুহার ভেতরে, সূর্যের মুখ কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে। যেন। ঝট করে ফিরে তাকাল ওরা। গুহামুখে এসে দাঁড়িয়েছে একজন মানুষ, আলো আসা ঢেকে দিয়েছে। আটকা পড়ল ওরা!
.
১৪.
তোমরা! রাগত গলায় বলল কণ্ঠটা, তোমরা এখানে কি করছ?
জন, তুমি? কিশোর বলল।
আমরা এখানে কি করে জানলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
আরও রেগে যাচ্ছে জন। বেরোও! বাইরের লোকের এখানে ঢোকা নিষেধ! এটা আমাদের পবিত্র জায়গা। কেউ ঢোকে না এখানে।
ভুল করছ, কিশোর বলল, এস, দেখাচ্ছি, কিসে তোমাদের অসুস্থ করে –তুলছে।
দ্বিধা করল জন। তারপর ভেতরে এসে ঢুকল।
ড্রামগুলো দেখাল কিশোর। একটা ড্রামের তলা ফুটো হয়ে গিয়ে ভেতরের আঠাল পদার্থ চুঁইয়ে পড়ছে মেঝেতে। তীব্র রাসায়নিক গন্ধ।
চুপচাপ দেখল জন। তারপর কিশোর আর রবিনের সঙ্গে চুপচাপ বেরিয়ে এল। বাইরে, খোলা হাওয়ায়, যেখানে ঠিকমত শ্বাস নেয়া যায়।
ড্রামগুলোতে কি আছে বলল কিশোর।
রাসায়নিক বর্জ্য! জন বলল, আমাদের বাতাস আর পানি দুষিত করছে!
করছে। তোমার চোখ লাল হয়ে গেছে, রবিন বলল। আমাদেরও হয়েছে। এটাও এই বর্জ্যের কারণেই।
দুজনের চোখের দিকে তাকাল জন। তাহলে তো ট্রয়কের পানি খাওয়া নিরাপদ নয় আমাদের জন্যে। ওটার মাছও নিশ্চয় বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
বনের জানোয়ারও। নদীতে পানি খেতে আসে ওরা।
এই গুহাটাতে তো গন্ধ কমই, কিশোর বলল। অন্যগুলোর কাছে যাওয়া যায় না, এতই বেশি। ওগুলোতে নিশ্চয় বোঝাই হয়ে আছে ফুটো হয়ে যাওয়া ড্রামে। বর্জ্যের ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে তোমাদের পবিত্র উপত্যকাকে।
কঠিন হয়ে গেছে জনের মুখ। ভাবছে রাসায়নিক বর্জ্যের ভয়াবহতার কথা। রাগে আগুন হয়ে ফুঁসে উঠল, আমাদের পবিত্র জায়গার এই সর্বনাশ কে করছে?
ফ্র্যাঙ্কলিন জোনস। জোনস ট্র্যাকিং কোম্পানির মালিক। চেনো?
নিশ্চয়। আমাদের মোড়ল মাঝে মাঝে গিয়ে তার কাজ করে। আমাদের অনেক সাহায্য করেন মিস্টার জোনস…
সেটা কাছাকাটি থাকার জন্যে, রবিন বলল। এই এলাকায় ঢুকতে যাতে সুবিধে হয়। জোনসই আমার বাবাকে কিডন্যাপ করেছে। কোথায় রাখবে, আন্দাজ করতে পারো?
না। এদিকটায় এর আগে আসিইনি আমি। তবে চেষ্টা করলে খুঁজে বের করে ফেলতে পারব।
গোলাকার জায়গাটার দিকে হাঁটতে হাঁটতে কিশোর জিজ্ঞেস করল, আমাদেরকে বের করলে কি করে? পায়ের ছাপ দেখে?
কাঁধ সামান্য কুঁজো করে হাঁটছে জন। নজর নিচের দিকে। চাকার দাগগুলো দেখছে। দাদা, আমাকে আজ সকালে গান গাওয়া অনুষ্ঠান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তোমাদের জন্যে চিন্তা করছেন তিনি। আমার চাচীর গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে। পড়লাম। রাস্তায় দেখলাম তোমাদের যে পিকআপটা দেয়া হয়েছিল সেটা নষ্ট হয়ে। পড়ে আছে। তোমাদের জুতোর ছাপ অনুসরণ করে আসাটা কিছুই না। প্রথমে চোখে পড়ল দুই জোড়া জুতোর ছাপ তোমাদের পিছু নিয়েছে, তারপর তিন জোড়া। তাড়া করেছিল তোমাদের। তোমরা দৌড়ে পালিয়েছ, দুবার লড়াই করেছ, এক জায়গায় মুসার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছ। বুটের দাগ শুধু তোমাদের পিছু নিয়েছে তারপর থেকে, মুসার পিছু নেয়নি।
এত কিছু বলতে পারলে শুধু চিহ্ন দেখেই? অবাক হয়ে বলল কিশোর।
এ-তো সহজ কাজ। আমি বনের ছেলে, এমনিতেই বন আমার পরিচিত। তার ওপর ট্র্যাকিং শিখেছি চাচার কাছে। সাংঘাতিক ভাল ট্র্যাকার ছিল আমার চাচা।
ট্র্যাকিং করে অনুমান করতে পেরেছ আমাদের পিকআপটাকে কে স্যাবোটাজ করেছে?
কি বললে? চমকে গেল জন।
বোল্টটা করাত দিয়ে কেটে কিভাবে ওদেরকে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলল কিশোর।
মাথা নোয়াল জন। এরকম একটা কাজ কে করল? মুখ তুলল। তোমরা বেঁচে আছ দেখে খুব ভাল লাগছে আমার। মুসা নিশ্চয় ওস্তাদ ড্রাইভার।
একসাথে মাথা ঝাঁকাল রবিন আর কিশোর।
কিশোর, দেখাও না…, কিশোরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করল রবিন।
অ্যাঁ, হ্যাঁ! ইঙ্গিতটা বুঝতে পারল কিশোর। প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ দেয়াটা কঠিন। তবু সত্যি কথাটা জানাতেই হবে। পকেট থেকে রূপার বাকলসটা বের করে জনকে দেখাল সে, দেখ তো, চিনতে পার কিনা?
হাত বাড়িয়ে জিনিসটা নিল জুন। সে যেটা পরেছে অবিকল সেটারই মত দেখতে। আমার চাচার। মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, কোথায় পেলে?
উপত্যকায়, হাত তুলে একটা দিক দেখাল কিশোর। একটা কঙ্কালের পাশে। আসার পথে নিশ্চয় হাড়গুলো দেখে এসেছ?
চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাঁকাল জন। শক্ত হয়ে গিয়ে আবার ঢিলে হয়ে গেল চোয়াল।
এইবার আমি বুঝতে পেরেছি, আমার ভিশন কোয়েস্টের মানে কি ছিল? কি বোঝাতে চেয়েছেন ঈশ্বর! ঠিক জায়গায়, কিন্তু আশীর্বাদ ছাড়া। ঠিক জায়গায়, অর্থাৎ ইনডিয়ানদের পবিত্র এলাকাতেই রয়েছে, কিন্তু তার আত্মা অশান্তই থেকে গেছে, পরপারের ঠিক জায়গায় যেতে পারেনি।