তুমি বেশি দৌড়াতে পার। তোমার গায়ে শক্তি বেশি। বনে বেঁচে থাকার। ট্রেনিং আছে। ডায়মণ্ড লেকে গিয়ে কেউ যদি পৌঁছতে পারে, সেটা তুমি।
হয়তো পারব। কি বলতে চাও?
আমি বুঝেছি, রবিন বলল, জোনস আমাদের পিছে লেগে থাকুক, এই তো চাও?
হ্যাঁ,সায় জানাল কিশোর।
দ্রুত একবার হাত মিলিয়ে নিয়ে, গুড বাই আর সি ইউ এগেন বলে পথ থেকে সরে গেল মুসা। হারিয়ে গেল গাছপালার আড়ালে। জোনসের লোকেরা কিশোর আর রবিনকে তাড়া করে নিয়ে যাওয়ার পর আবার এসে পথে উঠবে সে, চলতে থাকবে ডায়মণ্ড লেকের উদ্দেশে।
ছুটে চলেছে কিশোর আর রবিন।
লুকিয়ে পড়ার জায়গা খোঁজা দরকার, কিশোর বলল।
উপত্যকায় চলে গেলে কেমন হয়? বিপদে পড়েছি আমরা, ইচ্ছে করে তো যাচ্ছি না। আশা করি ইনডিয়ানদের মরা দাদারা কিছু মনে করবে না।
ভাল বলেছ! ভীষণ হাঁপাচ্ছে কিশোর।
পথের একটা চওড়া জায়গায় এসে থামল রবিন। এবার আর জোনসও আসছে কিনা না দেখে যাচ্ছি না। আর গিয়ে ওর মুখে পড়তে রাজি নই।
হাসল কিশোর। তারপর হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, রবিন, আমি আর পারছি না! বসতে আমাকে হবেই!
তোমার তো সব সময়ই খালি বসা লাগে! চিৎকার করেই জবাব দিল রবিন। তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না! এরকম সময়েও…।
একটা ভুরু উঁচু হয়ে গেল কিশোরের। ভাবল, আসলেই বলছে না তো? অভিনয় বলে মনেই হলো না। বলল, পার আর না-ই পার, আমি বসছি!
চুপ হয়ে গেল দুজনে। কান পেতে রইল। তিনজনই আসছে, সন্দেহ নেই। দুপদাপ দুপদাপ শোনা যাচ্ছে ওদের পায়ের শব্দ।
সর্বনাশ হয়ে গেছে! বলে উঠল রবিন।
কী?
বোতলটা উঁচু করে ধরল রবিন।
ও, দেয়া হয়নি!
না, মাথা নাড়ল রবিন। পানির অভাবেই শেষে মরে কিনা কে জানে!
.
১২.
লুকিয়ে থেকে কিশোর আর রবিনের কথা সবই শুনতে পেল মুসা। একটু পরেই ভারি পায়ের শব্দ ছুটে চলে গেল তার পাশ দিয়ে।
মুসার কল্পনায় ভেসে উঠল, ভয়ঙ্কর এম-১৬ রাইফেলের চেহারা, যেগুলো বহন করছে জোনস আর তার সহকারীরা। দুই বন্ধুর জন্যে ভাবনা হতে লাগল। তার। জোর করে ঠেলে সরাল মন থেকে দুশ্চিন্তা। ভাবলে কাজ কিছু হবে না। এখন তাকে যা করতে হবে, তা হলো ডায়মণ্ড লেকে পৌঁছানো। নিজেদের কাঁধে। বিপদ নিয়ে তাকে মুক্ত করে দিয়েছে কিশোর আর রবিন, মস্ত ঝুঁকি নিয়েছে, এখন সে যদি কিছু করতে না পারে, সবই বিফলে যাবে।
সারাদিনে অনেক পরিশ্রম করেছে। বিশ্রাম নিতে পারলে ভাল হত। কিন্তু সময় নেই। আর এই মুহূর্তে আলস্যকে প্রশ্রয় দিলে পস্তাতে হবে। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। পায়ের শব্দ আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার সময় দিল। তারপর চলতে শুরু করল একটা বিশেষ ভঙ্গিতে, লাফ দিয়ে দিয়ে, এভাবে চললে গতিও বাড়বে, ক্লান্তও হবে কম। দুর্গম অঞ্চলে টিকে থাকার জন্যে ট্রেনিং নেয়ার সময় এটা শেখানো হয়েছে ওকে।
ঠাণ্ডা হয়ে আসছে আবহাওয়া। বাতাস বাড়ছে। শরশর কাঁপন তুলছে গাছের পাতায়।
জন্তুজানোয়ার চলার সরু একটা পথ ধরে এগোল সে। তৃণভূমিতে বেরিয়ে ওটার ধার দিয়ে এগোল পাহাড়ের দিকে। সাবধান থাকল। দেখেছে, ডক আর হিলারি ছাড়া জোনসের সঙ্গে আর কোন সহকারী নেই, তবু বলা যায় না। খোলা জায়গায় বেরোল না কিছুতেই, গাছের আড়ালে আড়ালে থাকল।
পাহাড়ের কাছে পৌঁছেই ওপরে উঠতে শুরু করল। নিচে থাকার চেয়ে এখন ওপরে থাকা নিরাপদ। নির্জন মালভূমিটার ওপরে উঠে হাঁপ ছাড়ল। দম নিতে নিতে তাকিয়ে দেখল নিচে কোথাও কিছু দেখা যায় কিনা। এখানেই কোথাও রবিনের বাবার ক্যাপটা পড়ে ছিল। সম্ভবত এখান থেকেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু কেন? জবাব খুঁজে পেল না।
বনে ছাওয়া পর্বতের ঢালের দিকে তাকাল সে। বাতাসের বেগ আরও বেড়েছে। এত ওপরে এমনিতেই বেশি থাকে। পাতলা টি-শার্ট ভেদ করে যেন। ছুরির ফলার মত বিধতে লাগল। জ্যাকেট কোমরে জড়ানো রয়েছে, স্পেস ব্ল্যাঙ্কেটটা পকেটে। দুটোই লাগবে, তবে পরে। রবিনের কাছ থেকে বোতলটা না এনে ভুল করেছে। মনে পড়েছে অনেক দেরিতে। ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না। তখন আর। খাবার বলতে সাথে রয়েছে কিছু ক্যাণ্ডি, তবে এটুকু আছে যে এর জন্যেই ধন্যবাদ দিল ভাগ্যকে।
উত্তরে ঘুরল সে। কাঁধে আর পিঠে পড়ছে রোদ। লক্ষ্য রাখতে হবে এটা। এখন সূর্যই তার একমাত্র কম্পাস।
ঘন হয়ে জন্মে থাকা কতগুলো গাছের কাছে উঠে গেছে পাহাড়ের একটা চূড়া। সেখানে উঠে এল সে। পথ খুঁজতে লাগল। কিছুই নেই, কোন পথই চোখে পড়ল না। শেষে গাছের ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চলল উত্তরে।
খাড়া হয়ে আসছে ঢাল। চলার গতি আপনাআপনিই কমে গেল ওর। দিগন্তের দিকে দ্রুত নেমে চলেছে সূর্য। খাড়াই বেয়ে ওঠার পরিশ্রমে ঘামে ভিজে গেছে ওর শরীর।
একটা জায়গায় এসে সমান হয়ে এগিয়ে গেল কিছুদূর পথ, তারপর আবার। উঠে গেল। _ একটা শৈলশিরায় এসে পড়ল মুসা। দাঁড়িয়ে গেল। তাকিয়ে রয়েছে নিচের দিকে।
অবাক কাণ্ড! অলৌকিক ব্যাপার মনে হচ্ছে ওর কাছে।
পুবে-পশ্চিমে চলে গেছে একটা কাঁচা রাস্তা, ইনডিয়ানদের পথটার দ্বিগুণ চওড়া। মনে হয় এটাই সেই রাস্তা, কাঠ চালান করার জন্যে তৈরি করা হয়েছে, মালটি যেটার কথা বলেছিল।
শৈলশিরা থেকে নেমে এসে পথের ওপর দাঁড়াল মুসা। একটা কাজের কাজ হয়েছে পথটা পেয়ে গিয়ে। দারুণ খুশি লাগছে ওর। অন্ধের মত আর বনের ভেতরে পথ হাতড়ে মরতে হবে না। এখন একটা গাড়ি যদি পেত, ইস্…