গতকালই যাওয়ার কথা ছিল, রবিন বলল। বুঝে ফেলেছে, জোনসকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর, কাজেই সেই মতই কথা বলতে লাগল গোয়েন্দা সহকারী।
রবিনের দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গে কথা বলছেন জোনস, এই সুযোগে আরেকবার ডালা তুলে ভেতরে দেখার চেষ্টা চালাল কিশোর। হেসে ঠাট্টা করে মাঝে মাঝেই মুসা বলে ওকে, পকেটমার হলেও তুমি উন্নতি করতে পারতে। বাপরে বাপ, কি হাত সাফাই! আসলেই, কাজটা খুব ভাল পারে গোয়েন্দাপ্রধান। অনেক সময় বাজি ধরে মুসা আর রবিনের পকেট মেরে দিয়েছে, টেরই পায়নি। ওরা।
তাহলে তো তোমাদেরকে খুঁজতে কাউকে পাঠাবেই ওরা, জোনস বললেন।
খাপের ভেতরে দেখার জন্যে সাবধানে পাশে ঝুঁকে এল কিশোর।
যে-কোন মুহূর্তে সার্চ পাটি চলে আসতে পারে, রবিন বলল।
আরও তাড়াতাড়ি করা দরকার, মুসা বলল। ওরা এসে পড়ার আগেই আমরা চলে যেতে পারলে ঝামেলা বাঁচত। বলতে বলতে জোনসের একেবারে পাশে চলে এল সে, কিশোরের কাছে, সে-ও দেখার চেষ্টা করল খাপের ভেতরে কি আছে।
রাইফেলের ওপরের ক্যারিইং হ্যাঁণ্ডেল দেখতে পেল কিশোর। অস্ত্রটার অস্বাভাবিক আকৃতির মানে বুঝে ফেলল।
হঠাৎ আরেকবার দাঁড়িয়ে গেলেন জোনস।
এই কি করছ! রাগত গলায় বললেন তিনি। বলেই কিশোরের হাতটা চেপে ধরে এক ঝটকায় সরিয়ে দিলেন। পিছিয়ে গেলেন এক পা। সরু হয়ে এল চোখের পাতা। খাপ থেকে টান দিয়ে বের করে নিলেন রাইফেল।
হু, যা ভেবেছি, বিড়বিড় করল কিশোর, এম সিক্সটিন! খাপটা তৈরিই হয়েছে এভাবে, যাতে এম-১৬ রাইফেলের বিশেষ হ্যাঁণ্ডেল, পিস্তল গ্রিপ আর ফোলা ম্যাগাজিন জায়গা হয়ে যায়।
কি বলো? কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল রবিন।
এম সিক্সটিন প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ভিয়েতনামের যুদ্ধে, বলতে থাকল। কিশোর, দুরুদুরু করছে বুক। এখন পৃথিবীতে বেশ জনপ্রিয় অস্ত্র এটা। তবে এগুলো ব্যবহার হয় মানুষ শিকারের জন্যে, জানোয়ার নয়। কে আপনি, মিস্টার, জোনস? আমাদেরকে নিয়ে কি করার ইচ্ছে?
চেয়েছিলাম ভাল কিছুই করতে, জবাব দিলেন জোনস, তোমরা তা হতে দিলে না। বেশি ছোঁক ছোঁক করলে তার ফল ভাল হয় না কোনদিনই। আর কোন উপায় রাখলে না আমার জন্যে। যাও, পাহাড়ে চড়। আমার সঙ্গেই যেতে হচ্ছে। তোমাদের।
.
১১.
এই, এসো তোমরা, মিনমিন করে বলল কিশোর, মিস্টার জোনসের মাথা গরম করে দিয়ে লাভ নেই। পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলল সে।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে তার এই আচমকা পরিবর্তনে অবাক হয়ে গেল রবিন আর মুসা। কি করতে চাইছে? ভাল অভিনেতা কিশোর পাশা। ছোট বেলায় মোটোরামের অভিনয় করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল। অভিনয় যে করছে বোঝাই মুশকিল, মনে হয় এক্কেবারে স্বাভাবিক। তবু, যেহেতু চেনে ওকে, দুই সহকারীর মনে হলো, এই মুহূর্তে অভিনয়ই করছে সে।
হাঁট! শীতল কঠিন গলায় আদেশ দিল সোনালিচুল লোকটা।
হাঁটতে লাগল রবিন আর মুসা। পেছনে রাইফেল তাক করে ধরে এগোল জোনস।
মিস্টার মিলফোর্ডের কাছেই নিয়ে যাচ্ছেন তো আমাদের? ফিরে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চুপ! ধমক দিয়ে বলল জোনস, কোথায় নিয়ে যাব সেটা আমার ব্যাপার। একদম চুপ!।
আপনিই তাহলে আমার বাবাকে কিডন্যাপ করেছেন? বিশ্বাস করতে পারছে না রবিন। কেন করলেন?
তোমাদের মতই ছোঁক ছোঁক করছিল, বিশেষ করে তোমার ওই বন্ধুটির মত, কিশোরকে দেখিয়ে বলল জোনস। সেজন্যেই আটকাতে হল। লাভ হয়নি কিছুই। একটা কথাও বের করতে পারিনি মুখ থেকে।
নীরবে পশ্চিমমুখো হেঁটে চলল ওরা। পাহাড়ে চড়ার জন্যে একটা সুবিধেমত জায়গা খুঁজছে। জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে কিশোর, জিভ বের করে ফেলবে, যেন কুকুরের মত। এত জোরে হাঁটাবেন না আমাদেরকে, প্লীজ! অনুনয় করে বলল।
হাঁট! আবার ধমক লাগাল জোনস। আস্তে যাওয়া চলবে না!
হাউফ! করে মুখ দিয়ে বাতাস ছাড়ল কিশোর। শেওলায় ঢাকা একটা পাথরে পা ফেলল ইচ্ছে করেই, সড়াৎ করে পিছলে গেল পা, চিত হয়ে পড়ে গেল রবিনের গায়ে।
টলে উঠল রবিন। তাল সামলাল কোনমতে।
চোখ মিটমিট করল মুসা। পরক্ষণেই বুঝে ফেলল কি চালাকি করেছে কিশোর আর রবিন।
ভ্রূকুটি করল জোনস। দ্বিধায় পড়ে গেছে।
একটা মুহূর্তের দ্বিধা। সেটাই কাজে লাগাল মুসা। পাই করে ঘুরল। কারাতের প্রচুর প্র্যাকটিস চিতার মত ক্ষিপ্র করে তুলেছে ওকে। চোখের পলকে সোজা হয়ে গেল ভাজ করা কনুই, থাবা লাগল রাইফেলে। কারাতের হাইশু-ইউঁকি। জোর। থাবা খেয়ে একপাশে সরে গেল ভারি রাইফেলের নল।
ভাগ! ভাগ! চিৎকার করে বলল রবিন আর কিশোরকে।
পলকে যেন পায়ে হরিণের গতি চলে এল দুই গোয়েন্দার। তৃণভূমির ওপর দিয়ে ছুটল পশ্চিমের বনের দিকে।
এক লাফে সামনে চলে এল মুসা। শক্ত ঘুসি লাগাল জোনসের পুরু বুকে, কারাতের ওই-জুকি।
টলে উঠল যেন পাহাড়। পিছিয়ে গেল জোনস। ভারসাম্য হারাল। হাত থেকে রাইফেল ছাড়ল না।
বনের দিকে দৌড় দিল মুসা।
শট শট করে গাছে বিধল একঝাঁক বুলেট। বাতাসে উড়তে লাগল পাইনের নীড়ল, বাকল আর ধুলো। ভয়ে চিৎকার করে, আকাশে উড়ল পাখি। ঝাঁপ দিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। বুকে হিঁচড়ে চলে এল ঝোপের ভেতর।
ডক! হিলারি! চেঁচিয়ে ডাকল জোনস। কোথায় গেলে? আলসের দল! জুলদি বেরোও! ধর ব্যাটাদের! পালানর চেষ্টা করছে!