আর কিছু ঘটেনি তো? একটু আগে বুনের ভেতর গুলির শব্দ শুনেছি।
চট করে দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে নিল কিশোর। ওদের পেছনেই লেগেছিল লোকগুলো, গুলি করে মারতে চেয়েছিল, জোনসকে একথা বললে হয়তো তিনি ভয় পেয়ে যাবেন, ওদের আর লিফট দিতে রাজি হবেন না। তাই মিথ্যে কথা বলুল কিশোর, হবে হয়তো কোন শিকারি-টিকারি।
তাড়াতাড়ি করা দরকার, তাগাদা দিল রবিন।
দ্বিধা করলেন জোনস। মনে হচ্ছে, আরও ব্যাপার আছে, তোমরা লুকাচ্ছ আমার কাছে। ঠিক আছে, বলতে না চাইলে নেই। সাহায্য আমি করব তোমাদের।
তৃণভূমির মাঝখান দিয়ে আগে আগে রওনা হলেন জোনস। সোজা এগিয়ে। চলেছেন পাহাড়ের দিকে। ডানে রয়েছে রবিন, বায়ে কিশোর, আর মুসা রয়েছে পেছনে।
আপনার নামটা পরিচিত লাগছে, কিশোর বলল, বিখ্যাত লোক মনে হয় আপনি?
নাহ, তেমন কিছু না, হাসলেন জোনস। বেকারসফিল্ডে গোটা দুই ছোট রেস্টুরেন্ট আছে আমার। এখানে তোমার বাবা কেন এসেছিল, রবিন?
মিস্টার মিলফোর্ড একজন সাংবাদিক, সেকথা জোনসকে জানাল রবিন। ডায়মণ্ড লেকে খবর সংগ্রহ করতে যাচ্ছিল, সেকথাও বলল।
সিগারেট বের করলেন জোনস। আঁতকে উঠল মুসা, এরকম অঞ্চলে সিগারেট ধরানো ভয়ানক বিপজ্জনক, দাবানল লেগে যেতে পারে। বলতে যাচ্ছিল সেকথা। কিন্তু ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলল কিশোর। যে সিগারেটটা বের করেছেন। জোনস, সেটাতে লম্বা ফিল্টার লাগানো, সাদা কাগজ, আর জোড়ার কাছে সবুজ বন্ধনী। যে দুটো গোড়া কুড়িয়ে পেয়েছে কিশোর, ঠিক একই রকম সিগারেটের। জোনস নামটাও চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু মনে করতে পারছে না কোথায় শুনেছে।
যে লোকটার কাছে যাচ্ছিল বাবা, বলছে রবিন, সম্ভবত তার নাম হ্যারিস হেরিং। পকেট থেকে বাবার নোটবুক বের করে দেখে নিল নামটা। হ্যাঁ, এই নামই। শুনেছেন নাকি নামটা কখনও?
আশ্চর্য! জোনস বললেন, সত্যিই অবাক লাগছে। ওকে চিনি না। কিন্তু আজ সকালে রেডিওতে শুনলাম, গতকাল ডায়মণ্ড লেকে যাওয়ার পথে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে হ্যারিস হেরিং নামে এক লোক। ছুটি কাটাতে এসেছিল সে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে পাশের খাদে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে বেচারা!
তাই নাকি! নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে রবিনের।
চুপ হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। ভাবছে হেরিঙের মৃত্যুর কথা। জোনসের কাঁধে ঝোলানো রাইফেলের খাপের দিকে চোখ পড়ল কিশোরের। ঢাকনাটা বাড়ি খাচ্ছে বার বার। ঢাকনা ওপরে উঠলেই দেখা যাচ্ছে ভেতরের কালো ধাতব জিনিসটার শরীর। ফায়ার আর্মস সম্পর্কে আগ্রহ আছে তার। পড়াশোনা করেছে। রাইফেলটার আকারটা আর দশটা রাইফেলের মত নয়, পেটের কাছটায় ফোলা। শক্তিশালী অস্ত্র।
বুঝতে পারছি তোমরা আর মিস্টার মিলফোর্ড ইমপরট্যান্ট লোক, জোনস বললেন। তোমরা যে এখানে আছ কে কে জানে?
রবিন আর কেউ না বলে দেয়ার আগেই তাড়াতাড়ি জবাব দিয়ে দিল কিশোর, অল্প কয়েকজন। তাদের মধ্যে খবরের কাগজের লোকও রয়েছে।
তাই নাকি, রবিন? রবিনের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জোনস।
তার মাথাটা যখন আরেক দিকে ঘুরে গেছে, খাপের ডালা তুলে ভেতরের জিনিসটা ভালমত দেখার চেষ্টা করল কিশোর।
খচখচ করছে তার মন। সিগারেটের ব্যাপারটা কাকতালীয়, একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। মনে পড়েছে, ইনডিয়ানদের গায়ে লাঞ্চ খাবার সময় যে বাক্সগুলোকে ডিনার টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, ওগুলোতে জোনস। ট্রাকিং কোম্পানির নাম লেখা ছিল দেখেছে। একটা কুঁড়ের সামনে ফেলে রাখা সমস্ত বাক্সতে দেখেছে একই নাম ছাপ মারা। ওই কুঁড়েতে দেখা গেছে হালকাপাতলা লোকটাকে, যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোড়ল, যে ইশারায় মালটিকে জানিয়েছে গাড়ি তৈরি। তার মানে মিথ্যে কথা বলেছেন জোনস, এর আগেও তিনি এসেছেন এই অঞ্চলে। ঘন ঘন এসেছেন।
আড়চোখে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। রাইফেল কেসের ভেতরে দেখার চেষ্টা করছে কিশোর, এটা দেখে অবাক হলো সে। দ্রুত একবার চোখ মিটমিট করেই সামলে নিল। কিশোরকে সাহায্য করা দরকার এখন। মুখে মধুর হাসি ফুটিয়ে তুলে জোনসের দিকে তাকাল সে। কিশোরের কথাই সমর্থন করে জবাব দিল তার প্রশ্নের, হ্যাঁ, জানে। আমাদের যাওয়ার কথা সিটি এডিটরকে জানিয়েছে। বাবা। ম্যানেজিং এডিটরকেও জানিয়ে রেখেছে, কারণ হোটেলের বিলগুলো ওই মহিলাকেই শোধ করতে হবে।
পাশে কাত হয়ে ঝুঁকে এসেছে, খাপের ভেতর উঁকি দেবে এই সময় আচমকা দাঁড়িয়ে গেলেন জোনস।
ঝট করে খাপ থেকে হাত সরিয়ে আনল কিশোর। ঝুঁকে জুতোর ফিতে বাঁধার ভান করল, যেন খুলে গেছে ওটা।
শেষবারের মত লম্বা একটা টান দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেটটা মাটিতে ফেলে জুতো দিয়ে পিষে মারলেন জোনস। এরকম জায়গায় সিগারেটের গোড়া ফেলাটা যেন সইতে পারল না মুসা, অনেক সময় জুতো দিয়ে থেঁতলানো সিগারেটেও আগুন থেকে যায়, পুরোপুরি নেভে না, আর সেটা থেকে সৃষ্টি হয় আগুন, বিড়বিড় করে এসব কথা বলে নিচু হয়ে গোড়াটা তুলে নিয়ে পকেটে রেখে দিল, নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে বলে।
তোমরা কখন যাচ্ছ বলা হয়েছে? আবার হাঁটতে আরম্ভ করেছেন জোনস। উঁচু, ধূসর দেয়ালটার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছেন তারা।