কি মনে হলো তোমার? শামান জিজ্ঞেস করল, তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে?
মাথা ঝাঁকাল জন। হাতের মাছগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে এলাম পানি থেকে।
ঠিক কাজটাই করেছ। কি শিখলে?
শিখলাম, বিনা কষ্টে যা হাতে আসবে তার কোন মূল্য নেই। মাঝে মাঝে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে ওসব জিনিস।
খুশি হয়ে মাথা ঝাঁকাল গান গাওয়া ডাক্তার। ঈশ্বর তোমাকে কি নির্দেশ দিলেন?
ঠিক জায়গায়, কিন্তু আর্শীবাদ ছাড়া!
মানে বুঝেছ?
না।
কৌতূহলী হয়ে জনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা।
কিছুই তো বুঝলাম না, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল জন। তার দেখাই পাইনি।
যা-ই হোক, ঈশ্বর তোমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, শামান বলল। সেটাকে কাজে লাগাবে।
চোখ নামিয়ে ফেলল জুন। লাগাব, দাদা।
পরের অনুষ্ঠানে অবশ্যই উৎসবের পোশাক পরবে তুমি।
পরব, দাদা। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে হাসল জন। ঝকঝকে উজ্জ্বল হাসি। গুড লাক। বলেই রওনা হয়ে গেল সে। দৌড়ে চলে গেল, দমকা হাওয়ার মত।
গুড বাই, তরুণ যোদ্ধারা, তিন গোয়েন্দাকে বলল শামান। পৃথিবীতে। কেবল নিজেকে বিশ্বাস করবে, আর কাউকে না।
ভিড়ের দিকে চলে গেল সে। হাসিমুখে কথা বলতে লাগল তার ভক্তদের।
ওই দেখো, মোড়ল, পঞ্চাশ গজ দূরের একটা টিনের কুঁড়ে দেখাল মুসা।
ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হালকা-পাতলা এক ইনডিয়ানের সঙ্গে কথা বলছেন, ডুম। জিনসের সামনের দিকে হাত মুছছে লোকটা। মাথা ঝাঁকাচ্ছে। তারপর মোড়ল চলে এলেন খাবার টেবিলের দিকে, লোকটা চলে গেল ঘরের ভেতরে।
জোনস ট্রাকিং কোম্পানি লেখা বাক্সগুলোর সামনে থেকে সরেনি এখনও কিশোর। তার সামনের বাক্সটায় প্লেট রাখা। তাতে কিছু আলুভাজি রয়ে গেছে। শেষ করে ফেলার জন্যে চামচ দিয়ে তুলতে যাবে এই সময় চোখে পড়ল। সিগারেটের গোড়াটা। একটা বাক্সের কাছে পড়ে আছে। মাটিতে।
ঝুঁকে গোড়াটা তুলে নিল সে। হলদে হয়ে গেছে কাগজ, দোমড়ানো। একই রকমের সবুজ রঙের বন্ধনী লাগানো ফিল্টারের জোড়ার কাছে, সকালে যেটা পেয়েছিল সেরকম।
কিশোর, মুসা জিজ্ঞেস করল, কি ওটা?
দেখো। সকালের পাওয়া গোড়াটা পকেট থেকে বের করে ফেলেছে। কিশোর। পরে যেটা পেয়েছে সেটাও একই সাথে হাতের তালুতে রেখে বাড়িয়ে ধরল।
খাইছে!
এর মানে কি? রবিনের প্রশ্ন।
জানি না, জবাব দিল কিশোর। রেখে দিই। কাজে লেগেও যেতে পারে। কখন যে কোন জিনিসটা দরকার হয়ে পড়ে, আগে থেকে বলা যায় না।
ভিড় থেকে বেরিয়ে কিশোরদের দিকে এগিয়ে এল এক কিশোরী। আমি মালটি জনজুনস। জনের বোন। হেসে একটা চাবি বের করে ফেলে দিল রবিনের হাতে, মোড়ল বললেন পিকআপটা পাবে। চালানোর জন্যে তৈরি করা হচ্ছে। খেয়েছ তো ভালমত?
খেয়েছি, জবাব দিল রবিন। মেয়েটাকে দেখছে। চেহারাটা খুব সুন্দর। লম্বা। চুল। ঢিলাঢালা সাদা পোশাক পরেছে। গলায় নীলকান্তমণির মালা। তার চোখও লাল। আসলেই কি তুমি জনের বোন? না এটাও সম্মান দেখানোর জন্যে বলা?
একটা মুহূর্ত অবাক হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে রইল মালটি। তারপর বুঝতে পেরে হাসল। না না, আমি সত্যিই তার বোন।
আর কোন অনুষ্ঠান হবে তোমাদের?
এবার শামান গান গাইবে আর নাচবে। তারপর প্রার্থনা করবে। ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার জন্যে তৈরি হচ্ছে। ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করবে, কি কারণে অসুখ হয়েছে আমাদের। কি করলে সারবে। সেই মত কাজ করে আমাদের সারিয়ে তুলবে তখন।
আবার নিশ্চয় নাচ-গান?
হ্যাঁ। ওষুধের ব্যবস্থাও আছে।
কিশোর জানতে চাইল, ভিশন কোয়েস্টটা কি জিনিস?
মনোযোগী হলো মালটি। জনের কোয়েস্টের কথা শুনেছ তাহলে? কি মেসেজ দিলেন ঈশ্বর?
ভাবল কিশোর। বলল, ঠিক জাগায়, কিন্তু আশীর্বাদ ছাড়া। এ কথাগুলোর মানে বুঝতে না পেরে মাথা নাড়ল মালটি। ঈশ্বরই জানেন কি বলেছেন। জন বুঝতে পেরেছে?
না। গান গাওয়া ডাক্তার তাকে এটা নিয়ে ভাবতে বলেছে, রবিন বলল। কেন, এমন কি জরুরী, এটা?
কারণ… চুপ হয়ে গেল মালটি। চোখ মুদল। খুলল। আমাদের চাচা, আমাদের সত্যিকারের চাচা হারিয়ে গেছে। বাবা চলে যাওয়ার পর আমাকে আর জনকে বড় করেছে এই চাচাই। বাবা হারিয়ে গেছে বহু বছর আগে। এখন হারাল আমাদের চাচা। এক মাস হয়েছে। সমস্ত জঙ্গলে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে বের করতে পারেনি জন।
অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে এই এলাকায়, রবিন বলল। আমার বাবাও হারিয়ে গেছে।
মাথা ঝাঁকাল মালটি। চোখে বিষণ্ণতা। জনতার দিকে চোখ পড়তে তাকিয়ে রইল সেদিকে। হালকাপাতলা সেই লোকটা, যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোড়ল, হাত নেড়ে মালটিকে ইশারা করছে।
তোমাদের পিকআপ রেডি, লাল চোখ ডলতে ডলতে বলল মালটি।
পথ দেখিয়ে গায়ের আরেক প্রান্তে তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে এল সে। পথে। কয়েকটা বেঁধে রাখা কুকুর দেখতে পেল ওরা, আর উঁচু উঁচু মাটির দেয়ালে একটা জায়গা ঘেরা। ওটা হলো শোধনাগার। দেহকে ওখান থেকে পবিত্র করে আনে লোকে।
একটা কথা বলতে পারবে? পকেট থেকে সিগারেটের গোড়া দুটো, বের। করে মালটিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর, এই জিনিস এখানে কে খায়?
না, অবাক হয়েছে মেয়েটা।
হতাশ হয়ে আবার ওগুলো পকেটে রেখে দিল গোয়েন্দাপ্রধান।
পুরানো ট্রাক আর জীপের মাঝে ঝকঝকে নতুন লাল একটা পিকআপ দেখে ওটা কার জিজ্ঞেস করল মুসা।