আরেক দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসিটা লুকালেন মিলফোর্ড।
বাবা, চাপাচাপি শুরু করল রবিন, বল না। লোকটা কে? কাউকে বলব না, সত্যি।
সরি। মাথা নাড়লেন মিলফোর্ড। সুদর্শন, ভাল স্বভাবের লোক তিনি। প্রায় ছয় ফুট লম্বা। রবিন এখনও তার উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। চোখে কালো সানগ্লাস, মাথায় লস অ্যাঞ্জেলেস ডজারস বেসবল ক্যাপ, গায়ে নেভি ব্লু রঙের উইণ্ডব্রেকার, বুক পকেট থেকে বেরিয়ে আছে আধ ডজন পেন্সিল। বয়েস এত কম লাগছে, মনে হচ্ছে তিনি রবিনের বাবা নন, বড় ভাই।
কি ধরনের স্টোরি করতে যাচ্ছেন? মুসার প্রশ্ন। কোন সুপার অ্যাথলিটকে নিয়ে? ডায়মণ্ড লেকে পাহাড়ে ওঠার রেকর্ড ভাঙছে না তো কেউ? জাত অ্যাথলিট মুসার প্রথমেই মনে আসে খেলাধুলা আর ব্যায়ামের কথা। না না, বুঝেছি, ওসব না! আগামী মাসে স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইন্যাল যেটা শুরু হতে যাচ্ছে, তারই কোন ব্যাপার…
কিচ্ছু বলব না, আমি, মুসাকে থামিয়ে দিলেন মিলফোর্ড। পত্রিকায় বেরোনোর আগে খবর গোপন রাখা সাংবাদিকের দায়িত্ব।
সে আমরা জানি, রবিন বলল। গোপন সূত্রের সাহায্য ছাড়া,বহুবার শোনা কথাটা যেন উগড়ে দিল সে, পুরো স্টোরি জোগাড় করা কঠিন হয়ে যায় সাংবাদিকের জন্যে।
আর, সুর মেলাল মুসা, সাংবাদিকরা যদি সূত্রদের নাম ফাস করত, তাহলে কেউই আর ভয়ে একাজ করতে আসত না। সূত্ররা সব শুকিয়ে যেত।
হ্যাঁ, গোপন রাখাটা যে কত জরুরী, কিশোর বলল, জানি আমরা। আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন আপনি। পেটে বোমা মারলেও মুখ খুলব না।
হাসলেন মিলফোর্ড। ঠিক। যা জানবে না তা বলতেও পারবে না।
গুঙিয়ে উঠল তিন গোয়েন্দা। কঠিন লোক মিলফোর্ড। লস অ্যাঞ্জেলেসের এতবড় একটা নামকরা পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার খামোকা হননি। কোন স্টোরির ওপর কাজ করছেন এখন, কিছুতেই সেটা জানার উপায় নেই।
কাগজ কোম্পানির ছোট্ট একটা বিমান নিয়ে তিনি ডায়মণ্ড লেকে যাবেন, এটা নিয়ে ফোনে কার সঙ্গে যেন আলাপ করছিলেন, শুনে ফেলেছিল রবিন। গরম কোন খবর, নইলে বিমান নিয়ে এভাবে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত না, বুঝতে পেরেছে। সে। কিন্তু কার ওপর, কেন স্টোরিটা করা হচ্ছে, বিন্দুমাত্র ধারণা করতে পারেনি।
কি করলে আমাদের সঙ্গে নিতে বাধ্য করা যাবে তোমাকে? ফোন রাখতেই বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল রবিন।
মায়া, হেসে বলেছেন মিলফোর্ড। পঞ্চাশ ফুট দূর থেকেই যে মায়াজালে সুন্দরী মেয়েগুলোকে জড়িয়ে ফেলো তুমি, সেই মায়া দিয়ে। তবে আপাতত তোমাদের নিজেদের চরকায় তেল দেয়াটাই ভাল মনে করছি আমি। এটা তিন গোয়েন্দার ব্যাপার নয়।
ওই সময় রবিনদের বাড়িতেই ছিল কিশোর আর মুসা। আরেক ঘরে। তিন গোয়েন্দা নামটা শুনেই কান খাড়া করল কিশোর। মুসাকে নিয়ে চলে এল হলঘরে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করল রবিনকে। জানাল রবিন।
দয়া করুন আমাদের ওপর, মিনতি করে বলেছে মুসা। খাটাতে খাটাতে তো মেরে ফেলেছেন পুরো হপ্তাটা। কত কিছু করে দিলাম। বাগান সাফ করলাম, গ্যারেজ পরিষ্কার করলাম…
হ্যাঁ, অনেক কাজই করেছ, স্বীকার করলেন মিলফোর্ড।
তাহলে দয়া করুন, আবার বলল মুসা। নিয়ে চলুন আমাদের। ছুটি কাটানোর এত সুন্দর জায়গা শুনেছি আর নেই।
নেই কথাটা ভুল, শুধরে দিল কিশোর। আছে, তবে কম। হ্যাঁ, আঙ্কেল নিয়ে চলুন। বিশ্রামটাও হয়ে যাবে আমাদের, সেই সঙ্গে রিক্রিয়েশন।
ছেলেদের অনুরোধ ফেলতে পারলেন না মিলফোর্ড। রাজি হয়ে গেলেন। তবে শর্ত দিলেন একটা। তার কাজে ওরা নাক গলাতে পারবে না। এবং এটা বলেই কৌতূহলী করে তুললেন কিশোরকে। ওই সময় আর কিছু বলল না সে। রাজি হয়ে গেল শর্তে।
গরমের ছুটির সময় কাজ করে কিছু পয়সা জমিয়েছে তিন গোয়েন্দা। এতে হোটেলের শস্তা ঘর ভাড়া আর খাওয়ার খরচ হয়ে যাবে। সুইমিং পুলটা বিনে। পয়সায়ই ব্যবহার করা যাবে। অল্প পয়সা দিয়ে আরও যা যা চিত্তবিনোদন করা সম্ভব, করবে।
এই, দেখ, জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে রয়েছেন মিলফোর্ড। সামনের উপত্যকার দিকে চোখ। ওদিকে দেখ কি দেখা যায়।
বিনোকিউলার দিয়ে দেখল রবিন। তাঁরপর নীরবে সেটা তুলে দিল মুসার হাতে।
আরও কাছে থেকে দেখা দরকার, মিলফোর্ড বললেন। ডায়মণ্ড লেকের কাছাকাছি এসে গেছি আমরা।
সামনের দিকে নিচু হয়ে গেল বিমানের নাক। বদলে গেল ইঞ্জিনের গুঞ্জন।
বিনোকিউলার খোঁজা বাদ দিয়ে মিলফোর্ডের সীটের পেছনে চলে এল কিশোর। সামনের সরু সবুজ উপত্যকাটার দিকে তাকাল। উপত্যকার কিনারে গ্র্যানিটের খাড়া দেয়াল লম্বা হয়ে ছড়িয়ে গেছে উত্তর দক্ষিণে। দেয়ালটার দক্ষিণ মাথায় কয়েক মাইল লম্বা একটা পাহাড়, পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। ওপর থেকে গড়িয়ে পড়ছে রূপালি ঝর্না।
বাহ, দারুণ! কিশোর বলল।
উপত্যকাটার নাম কি? রবিনের প্রশ্ন।
আমারও জানতে ইচ্ছে করছে, জবাব দিলেন মিলফোর্ড। খুব সুন্দর। সামনে দেখ। সুন্দর, না? ডায়মণ্ড লেক এখান থেকে উত্তরে। চল্লিশ-পঞ্চাশ মাইল হবে আর।
ডায়মণ্ড লেক দেখা গেল। ঘন নীল, উজ্জ্বল রোদে যেন নীলা পাথরের মত জ্বলছে। একধারে একগুচ্ছ বাড়ি, পিঁপড়ের সমান লাগছে এখান থেকে। লেকের পাড় আর পাহাড়ের ভেতর দিয়ে দিয়ে চলে গেছে একটা কংক্রীটের রাস্তা, সাদা সরু একটা ফিতের মত দেখাচ্ছে।