আসলে, কিশোর বলল। অফিসগুলো দেখারই লোভ। আপনারটা। আরও কিছু এবং বিশেষ করে জুনের নতুন অফিসটা।
আমি দেখতে চাই খাবার কি করে বানানো হয়, মুসা বলল। আর কি কি জিনিস দেয়া হয় মাংসের সঙ্গে।
ও, আমার পাগল বিজ্ঞানীগুলোকে দেখার শখ তোমার? হাসলেন লারসেন। বেশ। খাঁচা থেকে বের করার ব্যবস্থা করছি ওদেরকে। তারপর, কিশোরের দিকে তাকালেন তিনি। একটা স্পেশাল খাবার দেব তোমাকে। চেখে দেখার জন্যে।
ভয় পেয়ে গেল কিশোর। তাড়াতাড়ি বলল, না না, আমি খাবারের কিছু বুঝি! বুড়ো আঙুল দিয়ে মুসাকে দেখিয়ে বলল, ওকে দেবেন।
কিশোর আর মুসাকে প্রায় ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চললেন লারসেন। আমার নতুন জিনিসটা দেখলে বুঝবে। বিশ্বাসই করতে চাইবে না। আমি নিজেই পারিনি। অথচ আমারই আবিষ্কার।
এলিভেটরে করে উঠে এল তিনজনে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন লারসেন। মাঝে মাঝে কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্যে থামছেন। এই সুযোগে যাকে পাচ্ছে তার সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করছে কিশোর, জুনের অ্যাক্সিডেন্টের ব্যাপারে। একজন অ্যাকাউনটেন্ট জানাল, সে সেদিন ওকে দেখেছে। তবে ব্রিফকেসের ব্যাপারে কিছু বলতে পারল না। কয়েকজন জানাল, কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পার্কিং লটে জুনের মাসট্যাং গাড়িটা দেখেছিল। তবে জোরাল কোন সূত্র কেউই দিতে পারল না।
অবশেষে দুই গোয়েন্দাকে মাটির তলার ঘরে নিয়ে এলেন লারসেন। বন্ধ কাচের দরজার ওপাশে বিশাল গবেষণাগার। ঢোকার অনেকগুলো দরজা। যারা ঢুকছে তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্যে ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা রয়েছে। অপরিচিতজন কিংবা যাদের ঢোকার অনুমতি নেই তাদেরকে ঢুকতেই দেবে না। সাবধান বাণী লেখা রয়েছে দরজার কপালে।
একটা ইলেকট্রনিক বক্সে একটা প্লাষ্টিকের কার্ড ঢুকিয়ে দিলেন লারসেন। খুলে যেতে লাগল কাচের দরজা। মুসা আর কিশোরকে বললেন, আমি যা বলব, সঙ্গে সঙ্গে তাই বলবে। কোড। হ্যাঁ, বলো, মুরগীর বাচ্চার কথা কাউকে বলব না।
তোতাপাখির বুলি আওড়ানোর মত করে বলল দুজনেই।
হ্যাঁ, হয়েছে, তারপর গলা চড়িয়ে ডাকলেন লারসেন, গমগম করে উঠল তার কণ্ঠ, কেঁপে উঠল যেন গবেষণাগারের কাচের দেয়াল, ডন!
এগিয়ে এল একজন বেঁটে, মোটা, টাকমাথা লোক। চোখে গোল্ডরিম চশমা। গায়ে ল্যাবরেটরির সাদা পোশাক। পকেটে একসারি মুরগীর মডেল ঝোলানো, সামরিক বাহিনীর লোকে মেডেল যেভাবে ঝোলায় সে ভাবে। কাছে এসে অনেকটা মিলিটারির মতই স্যালুট করল।
পরিচয় করিয়ে দিলেন লারসেন, ডন বারোজ, বিশাল থাবা দিয়ে চাপড় মারলেন লোকটার পিঠে। বাঁকা হয়ে গেল লোকটা। কল্পনাই করতে পারবে না আমার এখানে আসার আগে কোথায় কাজ করত ডন।
নিশ্চয় ডিজনিল্যান্ডে, ভাবল মুসা। জিজ্ঞেস করল, কোথায়?
পেনটাগন, জবাব দিলেন লারসেন। ওয়াশিংটনে ছিল ওর ল্যাবরেটরি, পেনটাগনের পাঁচ ব্লক দূরে। তাহলে পেনটাগনই ধরা যায়, যদিও ওখানে কাজ করেনি। কাছাকাছি ছিল তো। হাহ হাহ।
আসলে, পেন্টাগন রয়েছে ভারজিনিয়ার আরলিংটনে, পটোম্যাক নদীর ধারে। চুপ করে রইল কিশোর। ভুলটা ধরিয়ে দিল না।
কাঁচুমাচু হয়ে গেছে বেচারা ডন। ভয়ে ভয়ে রয়েছে আবার কখন পিঠে আন্তরিকতার চাপড় পড়ে। একে একে গোয়েন্দাদের নাম বলে গেলেন লারসেন। হাত মেলাল ডন। ঘেমে গেছে হাতের তালু। ঠান্ডা।
ডন একজন সুগন্ধ বিশারদ, লারসেন বললেন। আমার আর অ্যান্ড ডি-র হেড, ভুরু কোঁচকালেন তিনি। বুঝলে না? রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। খুব ভাল কাজ জানে। আমি যা জানি তা-ও শেখাব। ওস্তাদ বানিয়ে ছেড়ে দেব। চিকেন ডন বারোজ হয়ে যাবে তখন। হাহ হাহ হা! ডন, ধর, ছেলেরা ড্রিপিং চিকেন খেতে চায়? দিতে পারবে?
কিশোর আর মুসার দিকে তাকিয়ে সন্দেহ দেখা দিল ডনের চোখে। ওরা সিভিলিয়ান, স্যার?
তাতে কোন অসুবিধে নেই, অভয় দিলেন লারসেন। কোন বছর সেই খাবারটা বানিয়েছিলাম, যেটার নাম দিয়েছিলাম উইং অন আ স্ট্রিং? একটুকরো সাবানের ওপর দড়ি পড়ে থাকতে দেখে যে খাবারটা তৈরির ভাবনা মাথায় এসেছিল আমার?
নাইনটিন এইটি ফাইভ, জবাব দিল ডন।
তারিখ?
মাথা নাড়ল ডন।
সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল কিশোর, বাইশে জুন, উনিশশো পঁচাশি।
দেখলে তো? হেসে বললেন লারসেন। কাকে নিয়ে এসেছি? ওকে আমি পালকপুত্র বানিয়েছি এ জন্যেই। জুনকেও বলে দিয়েছি। ছেলেটা একটা চলমান রেফারেন্স বুক। একেবারে কম্পিউটারের মেমোরি। ডনের দিকে তাকালেন, আর সন্দেহ নেই তো তোমার? যাও, ড্রিপিং চিকেন নিয়ে এসো।
যাচ্ছি, স্যার, এবার আর স্যালুট করল না ডন, তবে ভাব সাব দেখে মনে হলো করতে পারলেই খুশি হত। সেই সঙ্গে খটাস করে বুট ঠুকতে পারলে তো আরও। তবে ঘুরে যখন রওনা হলো, সাধারণ মানুষের মত হেঁটে মার্চ করে এগোল। ল্যাবরেটরির রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে চাবি বের করে তালা খুলল।
ড্রিপিং চিকেনটা কি জিনিস? জানতে চাইল মুসা।
বললে বুঝবে? আচ্ছা, বলি, লারসেন বুঝিয়ে দিলেন, মুরগীর মাংস থেকে পুরোপুরি হাড় আলাদা করে ফেলে, মেশিনে পিষে ফেলা হয়। বিস্কুটের গুঁড়ো মিশিয়ে ভেজে পুরো বাদামী করে ফেলে তার ওপর মাখিয়ে দেয়া হয় সোনালি রঙ করা মাখন। বুঝলে?
ছবি দেখতে পাচ্ছি, কিশোর জবাব দিল।
ছবি?