মুসার মনে পড়ল কস্টিউম কনটেস্টের কথা। সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছে অনেকে। তাদের ঠিক মাঝখানেই পড়েছে সে। তীরে দাঁড়ানো অনেকের চোখেই বিরক্তি দেখতে পেল। কারণ আছে। আচমকা পানিতে পড়ে ওদেরকে ভিজিয়ে দিয়েছে সে।
তার পরেও কয়েকজন টেনেটুনে তুলল ওকে। ওদের মাঝে তার বন্ধু কিশোর আর রবিনও রয়েছে।
কি হয়েছে? জানতে চাইল রবিন।
ভিড় সরানোর চেষ্টা করছে কিশোর।
দেখলাম ঢুকলে, রবিন বলছে, একটু পরেই দেখি দরজা দিয়ে উড়ে বেরোলে। ব্যাপারটা কি?
উড়তে সাহায্য করা হয়েছিল আমাকে। এমন জোরে ঘুসি মারল…
তোমার মত মানুষও সামলাতে পারল না, কথাটা শেষ করে দিল রবিন। কে মারল? হুফার? না লাল আলখেল্লা পরা লোকটা?
মাথা নাড়ল মুসা। আমার মনে হয় না ভূতটা হুফার। ওর ঘরে কোন কস্টিউম দেখলাম না। আমাকে যে মেরেছে তার গায়ে মোষের জোর। সারা গায়ে পেশী আর পেশী। মুখ দেখতে পারিনি। ফ্রগ মিউট্যান্টের মুখোশ পরা ছিল।
হুঁ, আনমনে বিড়বিড় করল কিশোর। দুজন জুটল এখন। একজন কমিক লিখে হিরো হয়ে গেছে, আরেকজন মুখোশ পরে ভিলেন সেজেছে, চুরি করে ঢুকেছে হুফারের ঘরে। মুখ তুলল। দুজনের মাঝে সম্পর্ক নেই তো?
ওই যে, এসে গেছে, নিচু গলায় বলল রবিন।
হোটেলের ব্লেজার পরা একজন লোক এগিয়ে এলেন। পকেটের মনোগ্রাম দেখে বোঝা গেল, তিনি হোটেলের ম্যানেজার। চেহারাটা রুক্ষ, মোটেও আন্তরিক নয়। পেছনে দৌড়ে আসছেন আরেকজন, লুই মরগান।
কি হয়েছিল? কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন ম্যানেজার।
আমি-ইয়ে…পড়ে…গিয়েছিলাম, আমতা আমতা করে জবাব দিল মুসা। প্লাস্টিকের একটা পুল চেয়ারে বসেছে।
পড়ে গিয়েছিলে? কি করে? কোত্থেকে? মুসার ওপর ঝুঁকে দাঁড়ালেন ম্যানেজার।
আমি… মরিয়া হয়ে যেন চারপাশে তাকাল, মুসা। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এল কিশোর।
আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়া দরকার, ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল কিশোর। ব্যালকনিতে ওগুলো কি রেলিং লাগিয়েছেন? এত নিচু! পড়ল তো সেজন্যেই। ভাগ্যিস ডাইভ দেয়ার অভ্যেস আছে ওর। নইলে তো… কেঁপে ওঠার অভিনয় করল গোয়েন্দপ্রধান। দরজার দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে এসেছিল আমার বন্ধু। হঠাৎ দিল হাঁচি। তাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়ে গেল। আপনাদের রেলিংগুলো আরেকটু উচু হলে এই অবস্থা হত না। শুকনোয় পড়ে যদি মরত, পারতেন আর ফিরিয়ে দিতে?
কিশোরের এই ভাষণে থতমত খেয়ে গেছেন ম্যানেজার। সামলে নিয়ে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই হোটেলের গেস্ট?
এগিয়ে এলেন লুই মরগান। হ্যাঁ। রুম নম্বর তিনশো ষোলো। আমার সঙ্গে উঠেছে।
প্রতিবাদ করল না কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে মরগানের দিকে।
তাই! কনভেনশন চীফের দিকে ঘুরলেন ম্যানেজার। দিনটাই আজ খারাপ যাচ্ছে, কি বলেন মিস্টার মরগান? প্রথমে হলো ডাকাতি, তারপর এই কাণ্ড আশা করি আর কোন গোলমাল দেখতে হবে না আজ। বলে রওনা হয়ে গেলে।
গটমট করে হেঁটে যাচ্ছেন ম্যানেজার। সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কিশোরকে জিজ্ঞেস করলেন মরগান, তদন্ত করতে গিয়েই নিশ্চয় এটা ঘটল?
হ্যাঁ, স্বীকার করল কিশোর। তদন্ত করতে গেলে অনেক সময় মাথার ঠিক থাকে না মুসার, উল্টোপাল্টা কাজ করে বসে। বোধহয় পানিতে ঝাপ দেয়ার শখ হয়েছিল। যা-ই হোক, সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু ম্যানেজার যদি তিনশো যোলোতে আমাদের খোঁজ নিতে যান…?
তাহলে তোমাদের পেয়ে যাবেন। ঘরটা তোমাদেরকে দিতে চাই। পাশের ঘরটাই আমার, দুশো আট নম্বর। আমি বুঝতে পারছি, এই কেসের তদন্ত করতে হলে হোটেলের একটা ঘর তোমাদের লাগবেই। চাবি বের করে দিলেন মরগান। তোমার বন্ধুর কাপড় বদলানোও দরকার। তবে, ভিজে কাপড় গায়ে লেপটে সগিম্যান সেজে থাকার ইচ্ছে যদি হয়ে থাকে আমার আপত্তি নেই। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, বিচারক মন্ডলীকে বলে দেব, এই কস্টিউম যেন শো করার ব্যবস্থা করা হয়।
এমন ভঙ্গিতে বললেন মরগান, সত্যি ভেবে বসল মুসা। তাড়াতাড়ি হাত তুলে নিষেধ করল, না না, ওকাজ করবেন না!
হাসলেন মরগান। এগিয়ে গেলেন বিচারকের মঞ্চের দিকে।
তিন গোয়েন্দা চলল ৩১৬ নম্বর কামরায়।
ঘরে দুটো ডাবল বেড আছে, একটা ড্রেসার আছে, আর আছে একটা তালা দেয়া দরজা, যেটা খুললে ৩১৪ নম্বরে ঢোকা যায়।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেল মুসা। এখানে রবিন আর কিশোরের আপাতত কিছু করার নেই। আবার নিচে রওনা দিল দুজনে।
সম্মেলনে যাওয়ার টিকেট চেক করছে এখন অন্য একজন। গোলগাল মুখ, যেন একটা কুমড়ো। এলোমেলো চুল। লোকের টিকেট দেখে হাতের উল্টো পিঠে সীল মেরে দিচ্ছে। দরজা পাহারা দিতে বসেছে এখন সেই মেয়েটা, যার চুল দুই রঙে ডাই করা, যে তিন গোয়েন্দার হাতে সীল মেরেছিল। কিশোরের দিকে একবার চেয়েই মুখ ফিরিয়ে নিল সে। কিন্তু রবিনের দিকে তাকিয়েই রইল। হাসল। বলল, হাই, আমার নাম ডোরা।
রবিন তার মধুরতম একটা হাসি উপহার দিল মেয়েটাকে। ডোরা! চমৎকার নাম! আমার খুব পছন্দ। আচ্ছা, ভোরা, ওই স্মােক বম্ব ফাটার পর কালো আলখেল্লা পরা কোন মানুষকে কি এখান দিয়ে যেতে দেখেছ?
রবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল মেয়েটা। মাথা নাড়ল।
এডগার ডুফারের বর্ণনা দিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করল ডোরাকে, ওরকম কাউকে যেতে দেখেছে কি-না।