হুফার! ডাক দিলেন ডিকসন। আপনাকেই আমার দরকার ছিল। একটা জিনিস দেখাতাম। সংগ্রহে রাখার মত। মুখ বাঁকালেন তিনি। কিন্তু এখন আর পারব না। চুরি হয়ে গেছে।
তাই! স্টলের কাছে এগিয়ে এল মোটা লোকটা। চোর বলছে তার দোকানে ডাকাতি হয়েছে। চমৎকার!
জ্বলন্ত চোখে লোকটার দিকে তাকালেন ডিকসন। দেখ এডগার, আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না!
তুমি চোর নও বলতে চাও? লোকে পছন্দ করে কিনতে আসে বলে তাদের গলা কাট তুমি। তোমাদের মত লোকেরাই এই কালেকটিং ব্যবসাটাকে মাটি করল! সুযোগ পেয়ে ছিলে ফেল মানুষকে।
স্টলের টেবিল, ঘুরে এডগারের দিকে এগোতে গেলেন ডিকসন। তাঁর হাত চেপে ধরল হুফার। তার হাতের উল্টো পিঠে কনভেনশন স্ট্যাম্প মারা দেখতে পেল কিশোর। ওখানেই থাকুন। এডগার ঠিকই বলেছে। ডাকাতিই চলছে এখানে। কমিক থেকে সবাই লাভবান হয়, কেবল আর্টিস্ট বাদে।
এই যে, ডিকসন! তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে এলেন কনভেনশন চীফ ই মরগান। এইমাত্র পেলাম খবরটা। কি যে কাণ্ড! কারও কোন দায়-দায়িত্ব নেই। আমি এখান থেকে সরেও সরতে পারলাম না, ঘটে গেল…! দুঃখজনক। কি নিয়েছে চোর?
বেশি কিছু না। সব চেয়ে দামি যেটা নিয়েছে সেটা ফ্যান ফানের একটা কপি। তাতে হুফারের কিছু কাজ করা ছিল। হুফারের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলেন ডিকসন। থাকলে এখন ওকে দেখাতে পারতাম।
কমিক বিক্রির ব্যাপারে নানা জনের নানা মত থাকতে পারে, বললেন মরগান। তবে চুরিদারিটা মানা যায় না। এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
তা তো হবেই। চোখ খোলা রাখব আমরা, এডগার বলল। হুফার, চলো, যাই। রক অ্যাস্টারয়েড বোধহয় শুরু হয়ে গেল। এখনও গেলে ধরা যায়।
রওনা হয়ে গেল দুজনে।
কয়েকজন ডিটেকটিভকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি আমি, ডিকসন বললেন। তিন গোয়েন্দার পরিচয় করিয়ে দিলেন মরগানের সঙ্গে।
কার্ডে চোখ বোলালেন মরগান। গোয়েন্দা, না? বেশ বেশ। সাহায্যের দরকার হলে জানিও। আমার এখন কাজ আছে, যেতে হবে। আরেক সমস্যা। গোল্ড রুমে রক অ্যাস্টারয়েডের সিরিয়াল দেখানো হবে, সব কটা, ষাট ঘণ্টা ধরে চলবে। অথচ চালানোর মানুষই এখনও আসেনি। প্রোজেকশনিস্ট। এডগারকে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
জোরে নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। প্রোজেকটর সেট করেই রেখেছি। চালানোর একজন মানুষ পেলেই এখন হয়ে যেত। কস্টিউম প্রতিযোগিতাও শুরু হওয়ার সময় হয়েছে।
কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়েই তাড়াহুড়া করে চলে গেলেন তিনি।
রক অ্যাস্টারয়েড? ঠিক বুঝতে পারছে না রবিন।
চল্লিশ দশকের শেষ দিকে একটা বেশ চালু সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ছিল, বোধহয় সেটার কথাই বলছে, কিশোর বলল। হাতের বাক্সটা আবার টেবিলে নামিয়ে রেখে প্রায় দৌড় দিল লুই মরগানের পেছনে। রবিন আর মুসাও পিছু নিল।
মরগানকে ধরল কিশোর, স্যার, এক সেকেন্ড। একটা সাহায্য করবেন দয়া করে? ওই লোক দুটো কে, বলতে পারেন, একটু আগে যারা মিস্টার ডিকসনের স্টল থেকে গেল?
পাতলা, লম্বা লোকটার নাম আইজাক হুফার। ছবি আকিয়ে এবং লেখক। মোটা লোকটার নাম এডগার ডুফার। হুফারের হাতের লেখা ভাল না, তাই তার কামিকের কথাগুলো লিখে দিতে হয় ডুফারকে। চমৎকার মিলেছে দুজন হুফার এবং ডুফার। হাসলেন মরগান। ডুফারটা পাজি। নিজের সম্পর্কে অনেক উঁচু ধারণা। সবাইকে বলে বেড়ায়, তার অনেক বড় কিছু হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু কমিক প্রকাশকদের জন্যে সেটা হতে পারেনি। খালি গোলমাল করার তালে থাকে এই লোক।
হুফারের সঙ্গে ভাবসাব তো বেশ ভালই দেখলাম, কিশোর বলল।
তা তো থাকবেই। বললাম না দুজনে একসাথে কাজ করে। মাসখানেক আগে হুফার থাকত ওহায়ওতে। আমার বিশ্বাস, লস অ্যাঞ্জেলেসে এসেছে এখানে তার কমিক কেমন চলে দেখতে। ভাল চললে থেকে যাবে। কিন্তু আসার পর থেকে কোন কমিক আঁকতে দেখিনি।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। তারপর বললেন, আমি তাকে কনভেনশনে দাওয়াত করেছি। সম্মান দেখিয়ে একটা ঘরও দিয়েছি থাকার জন্যে। মনে হয় ভুলই করে ফেলেছি।
ঘড়ি দেখলেন মরগান। দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেতে হবে।
তাড়াহুড়া করে তাকে চলে যেতে দেখল তিন গোয়েন্দা।
ভালই একটা কেস মিলল মনে হচ্ছে, মুসা বলল।
সন্দেহ করার মত একজনকে পেয়েও গেলাম, রবিন বলল।
কার কথা বলছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর, ডুফার, না হুফার?
আইজাক হুফার। চুরিটাই সন্দেহজনক। হয়তো সে-ই করিয়েছে, ওই কমিকগুলো তার পছন্দ নয় বলে। ছেলেটার হাত থেকে নিয়ে কিভাবে নষ্ট করে ফেলল দেখলে না। ফ্যান ফানের ছবিগুলোও নিশ্চয় তার পছন্দ ছিল না।
কিন্তু কমিকগুলো চুরি হওয়ার পর পরই এসে উদয় হয়েছিল সে, মনে করিয়ে দিল মুসা। ধোঁয়াও সরে সারেনি তখনও।
হুঁ, মাথা দোলাল কিশোর। লোকটা কোথায় উঠেছে, জানি আমরা। তার ঘরে গিয়ে দেখলেই তো পারি কমিকগুলো আছে কি-না?
রাজি হয়ে গেল অন্য দুজন।
রিসিপশন ডেস্ক থেকে হুফারের রুম নম্বর নিল কিশোর। তিন মিনিট পরেই ৩১৮ নাম্বার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।
একবার দেখেই মাথা নাড়ল কিশোর, এই তালা খুলে ঢোকা সহজ হবে না। বিশেষ যন্ত্রপাতি দরকার।
ভুরু কুঁচকে তালাটার দিকে তাকিয়ে রইল সে। পাশের ৩২০ নম্বর ঘরের খোলা দরজার ওপর চোখ পড়তেই উজ্জ্বল হলো চেহারা। ছোট একটা ঠেলাগাড়ি রাখা দরজার পাশে। তার মানে ঘর যে পরিষ্কার করে সে ওটা নিয়ে এসেছে।