তার মানে সমাধান করার জন্যে একটা কেস পেয়ে গেলাম, বিড়বিড় করল মুসা।
কেস? সমাধান? ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকালেন ম্যাড।
হ্যাঁ, মাথা ঝাকাল কিশোর। পকেট থেকে কার্ড বের করে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এটা দেখলেই এসব কথার মানে বুঝবেন।
তিন গোয়েন্দা!…দাড়াও, দাঁড়াও! টেবিলের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বের করলেন একটা ছোট বাক্স। তার ভেতর থেকে বের করলেন একটা ময়লা প্রায় দোমড়ানো কার্ড। কোণগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
আরি! এ কি কাণ্ড! রবিন বলল, আমাদের কার্ড!
নিশ্চয়, ডিকসন বললেন। অনেক পুরানো। তোমাদের এখনকারটার সঙ্গে মেলে না। এটা বোধহয় প্রথম দিককার ছাপা কার্ডগুলোর একটা। পঁচাত্তর ডলারে বিক্রি করতে পারব।
চোখ মিটমিট করল কিশোর। তার মানে আপনি এটা বিক্রি করবে?
শ্রাগ করলেন ডিকসন। কেন করব না? কিছু কিছু লোক যা পায় তা ই সংগ্রহে রাখে। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত ওদের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। তাহলে তোমরাই সেই লোক, যারা যে-কোন রহস্যের সমাধান করে বলে ঘোষণা দাও। বেশ, তোমাদেরকেই আমার এখন সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন কেন, বলছি আমার কমিকগুলো খুঁজে বের করে দাও। সেই সাথে তোমাদেরগুলোও করো। ওভারস্ট্রীট যা বলেছে, তখন আমি সেই দাম দিয়েই তোমাদের কমিকগুলো কিনব, যাও, কথা দিলাম।
আবার একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল তিন গোয়েন্দা। অবশেষে কিশোর বলন ডিকসনের দিকে তাকিয়ে, বেশ, আমরা রাজি। যে বইগুলো আছে এখনও সেগুলোসহ বাক্সটা তুলে এক হাতে নিয়ে আরেকটা হাত বাড়িয়ে দিল কমিক বিক্রেতার দিকে।
আমার নাম আসলে জেমস ডিকসন, হাসলেন বিক্রেতা। গোঁফের জন্যে হাসিটা অনেকখানিই ঢাকা পড়ে গেল। ওরকম একটা হাস্যকর নাম নিয়েছি স্রেফ প্রচারের জন্যে।
সেটা বুঝতে পেরেছি আমরা। কিশোরও হাসল। আমি কিশোর পাশা। ও মুসা আমান। আর ও রবিন মিলফোর্ড। তাহলে কাজ শুরু করা যাক। প্রথম প্রশ্ন, মিস্টার ডিকসন, বিশেষ কাউকে কি সন্দেহ হয় আপনার?
কাউকে? এখন তো মনে হচ্ছে সবাইকেই সন্দেহ করি। স্টলের আশপাশে ভিড় জমানো জনতাকে দেখালেন তিনি হাত তুলে। তারপর দেখালেন পুরো হলঘর। তুমি জানো না, কারা এসেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সব চেয়ে বড় পাগলগুলোই এখানে ভিড় জমায়। হাসলেন তিনি আবার। তোমাকে অবশ্য পাগল বলছি না, কারণ তুমি কিনতে আসোনি।
তার মানে, আপনি বলতে চাইছেন, এরা সবাই পাগল?
হাত ওল্টালেন ডিকসন। একটা কথা বলতে পারি, সংগ্রহের নেশায় যখন পেয়ে বসে মানুষকে, হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায় অনেকের। বিগড়ে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে যায়। কি সংগ্রহ করল, কিভাবে করল, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা থাকে না। আমার বিশ্বাস, অসুস্থই হয়ে পড়ে তখন ওরা।
চুরিও করে বলতে চাইছেন, কিশোর বলল। চোরটা কি বইগুলো বেচবে? কি মনে হয় আপনার?
অত সহজ হবে না। বিশেষ করে ফ্যান ফানের মত জিনিস। ভ্রূকুটি করলেন ডিকসন। যেখানেই বেচতে যাবে, প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। দোকানদার জানতে চাইবেই, কোথেকে জোগাড় করা হয়েছে ওগুলো।
চোরটা তা বলতে চাইবে না, মুসা বলল।
মাথা ঝাঁকালেন ডিকসন। মুশকিলটা হলো কি, সংগ্রাহকের ব্যাপারে তদন্ত করছ তোমরা। কি যে করবে লোকটা, বলা কঠিন। হয়তো সারাটা জীবনই মাটির তলার ঘরে লুকিয়ে রাখবে কমিকগুলো। বেরই করবে না।
ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছে তিন গোয়েন্দা। কৌতূহলী দর্শক এসে ভিড় জমিয়েছে স্টলের কাছে, তাদেরকে সরিয়ে দিল হোটেলের কর্মচারীরা। আবার নিয়মিত বেচাকেনা শুরু হলো ঘরে। বারো বছরের একটা ছেলে এগিয়ে এল। হাতে একটা সাদা-কালো ছবি। ছবিটা মলাটে সাটা। একজন বন্ধুকে দেখিয়ে বেশ গর্বের সঙ্গে বলল, দেখ দেখ, কি পেয়েছি। পুরো পাতাটাতেই আইজাক হুফারের আর্ট। ক্রিমসন ক্রিস্টমাস থেকে এঁকেছে। মাত্র সত্তর ডলার দিয়ে নিয়ে ফেললাম।
লম্বা, পাতলা, ধূসর চুলওয়ালা একজন লোক এগিয়ে এল। চামড়ার রঙ বেশি ফ্যাকাসে। কোন সময়েই যেন বাইরে বেরোয় না, খালি ঘরে বসে থাকে। বলল, এই খোকা, আমার কাছে বেচে দাও ওটা। পঁচাত্তর দেব।
না, জবাব দিল ছেলেটা।
একটানে ছেলেটার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নিল লোকটা। ওর হাতে গুঁজে দিল কতগুলো নোট। নাও, একশোই দিলাম। অনেক কিছু কিনতে পারবে।
হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে ছেলেটা। ফড়াৎ ফড়াৎ করে টেনে ছবিটা ছিড়ে ফেলল লোকটা। বড় একটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে লাইটার বের করে আগুন ধরিয়ে দিল টুকরোগুলোতে।
কে আপনি? চিৎকার করে উঠল ছেলেটা। আমার জিনিস কেন ছিড়লেন?
বেঁটে, মোটা, কালো চুল, কালো দাড়ি এক লোক এগিয়ে এল। ঠিকই করেছে ছিড়ে। ওর নাম আইজাক হুফার। ওটা তারই আঁকা ছিল।
চোয়াল স্কুলে পড়ল ছেলেটার। আপনিই আইজাক হুফার! একটা অটোগ্রাফ দেবেন?
ছেলেটার বাড়িয়ে ধরা নোটবুকে হেসে সই দিয়ে দিল পাতলা লোকটা।
ইস! দুঃখ করে বলল ছেলেটা, যদি ওই ছবিটাতে আপনার-সই নিতে পারতাম!
হুফারের মুখ থেকে হাসি চলে গেল। ক্রিমসন ফ্যান্টমে জীবনে সই দেব না আমি!
মোটা লোকটা ছেলেদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। কেন রাগল জানো? তুমি নিশ্চয় জানেন না, ওই সিরিজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে হুফারকে। ঠকিয়েছে। হিরোয়িক কমিকস তার সমস্ত শিল্পকর্ম বিক্রি করে দিয়েছে, অথচ একটা পয়সা দেয়নি ওকে। তাই যেখানে যা পাচ্ছে নষ্ট করে ফেলছে সে, যাতে আরও দামি না হয়ে ওঠে, আরও বেশি রোজগার করতে না পারে হিরোয়িক কমিক।