বাধা দিয়ে ম্যাডম্যান বললেন, ওভারস্ট্রীট গাইডে দেখিয়েছ তো? ওরা বলবেই। আরও অনেক দাম হাঁকবে, কিন্তু কিনবে না। শয়তানি আরকি। কি লিখে রেখেছে দেখোনি? কেউ যাতে এসে কিছু বলতে না পারে। লিখেছে, আমাদের কাছে যা আছে, ওগুলো আরও অনেকের কাছেই থাকতে পারে। দামেরও তফাৎ হতে পারে। কাজেই কেনার আগে চিন্তা করে নেবেন। আমরা লাভ করার জন্যেই বসেছি, লাভ করব।
সেটা তো সততার পরিচয় দিয়েছে, কিশোর বলল। লাভ করবে বলেছে ডাকাতিও করছে না, ঠকাচ্ছেও না…এর বেশি আর বলতে পারল না সে। টেনে সরিয়ে নিয়ে গেল তাকে রবিন আর মুসা। নিচু গলায় বলল, কি যা-তা বকছ অনেক বেশি দিতে চাইছে, দিয়ে দাও। খরচ করেছি একুশ ডলার, পাচ্ছি চারশো আর কত!
বেশিই পাব, কিশোর বলল। এক কথায়ই যখন চারশো দিতে রাজি হয়েছে, জিনিসের দাম আরও অনেক বেশি। দরাদরি করতে অসুবিধে কী?
ম্যাডম্যানের দিকে ঘুরতে গেল কিশোর। কিন্তু ঘোরা আর হলো না। দৃষ্টি আটকে গেল নীল সোনালি রঙের ওপর।
ওদেরই বয়েসী একটা মেয়ে। বেশ লম্বা। সুন্দর সোনালি চুল প্রায় কোমরের কাছে নেমে এসেছে। নীল সিল্কের আলখেল্লা গায়ে। ভেতরে পরেছে হলুদ রঙের একটা বাদিং স্যুট, রঙটা এতই উজ্জ্বল, সোনালিই লাগছে। হাত আর পা পুরোপুরি বেরিয়ে আছে। পায়ে হলুদ বুট। হাঁটাও খুব সুন্দর। চোখ ফেরানো যায় না।
কিশোরও ফেরাতে পারছে না।
সেটা দেখে হাসলেন ম্যাড। চোখে লেগে যায়, না? কস্টিউম কনটেস্টে স্টেলারা স্টারগার্লের মত পোশাক পরেছে। কেন প্রতিযোগিতায় জিতে যায় এরা, বুঝি…
হ্যাঁ, দামের ব্যাপারটা, কমিক বিক্রির কথায় ফিরে এল কিশোর। বলেই আবার চোখ ফেরাল মেয়েটার দিকে।
দেখি তো আবার, বলে বাক্সে আবার হাত ঢোকালেন ডিকসন। দশটা কমিক টেনে বের করে বললেন, এগুলো আমি সহজেই বেচতে পারব। আসলে দামও এগুলোরই। ঠিক আছে, একটারই দামদর হোক। তিনশো দিতে রাজি আছি।
শুনছে না কিশোর।
তোমাকে দামের কথা বলছে, কিশোর, কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল রবিন।
জোর করে যেন মেয়েটার ওপর থেকে চোখ সরাল গোয়েন্দাপ্রধান। মেয়েদের দিকে এভাবে সাধারণত তাকায় না সে। নিশ্চয় কোন কারণ আছে, বুঝতে পারছে, তার দুই সহকারী।
মোটামুটি ভালই দাম বলেছেন, বলেই আবার মেয়েটার দিকে ঘুরতে শুরু করল কিশোরের মুখ।
এক পলকের জন্যে যেন ঝিলিক দিয়ে উঠল হলুদ রঙ। পরক্ষণেই লাল কস্টিউম পরা একটা মূর্তির আড়ালে চলে গেল মেয়েটা। মঠবাসী ভিক্ষুর আলখেল্লার মতই লাগছে পোশাকটা, রঙ বাদে। মূর্তিটা আরও কাছে এলে কিশোর দেখল, মুখোশ পরেছে লোকটা। সাদা-কালো মড়ার মুখ। না না, কঙ্কালের মুখ।
আনমনেই মাথা নেড়ে আবার ম্যাডম্যানের দিকে ফিরল কিশোর। অন্যমনস্ক অবস্থাটা চলে গেছে। বলল, তিনশো ডলার বললেন, না? আমাদের সব চেয়ে দামি মাল এগুলোই। যে কেউই কিনতে চাইবে, কেবল এগুলোর জন্যেই…
আলখেল্লা পরা মড়াটা তার প্রায় গা ঘেঁষে চলে গেল। বাদুড়ের ডানার মত দুলে উঠল লাল আলখেল্লার প্রান্ত। বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকাল কিশোর।
নাটকীয় ভঙ্গিতে মূর্তিটাকে হাতে তুলতে দেখল সে। ছড়িয়ে দিয়েছে লম্বা লম্বা আঙুল। টান টান হয়ে গেছে হাতের ফ্যাকাসে চামড়া। চারটে ছোট ছোট বল পড়ল মেঝেতে।
ধোঁয়ায় ঢেকে গেল ম্যাড ডিকসনের স্টলটা।
৩
হঠাৎ এই ধোঁয়া দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল কিছু কমিক ক্রেতা। কিন্তু এই চিৎকার কিছুই না, আসল হট্টগোল শুরু হল ধোঁয়া সরে যাওয়ার পরে।
হায় হায়রে! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন ম্যাড ডিকসন, আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে! ডাকাতি! মাথা ঝাঁকাচ্ছেন বার বার, তাতে এলোমেলো চুল আরও ছড়িয়ে যাচ্ছে। বড় বড় গোঁফ কেমন যেন ফাঁক ফাঁক হয়ে বিকট করে তুলেছে মুখটাকে। গেল কোথায় ব্যাটা! লাল আলখেলা! ক্রিমসন ফ্যান্টম কস্টিউম! খুন করব আমি ওকে।
উধাও হয়েছে লাল পোশাক পরা লোকটা।
কিশোর বলল, ধোঁয়া দিয়ে ঢেকে ফেলেছিল, যাতে কেউ না দেখে ওকে। টেবিল টপকে গিয়ে দামি কমিকগুলো নিয়ে চলে গেছে।
পেছনের কাঠের ডিসপ্লে বোর্ডটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে। সাজানো কমিক বইয়ের মাঝে বড় একটা ফোকর হয়ে আছে। ডিকসনও তাকিয়ে রয়েছেন সেদিকে। ফ্যান ফান নাম্বার ওয়ানের কপিটা নিয়ে গেছে…
সেই কমিকটাই, যেটার জন্যে চাপাচাপি করছিল টেকো লোকটা, নিতে পারেনি, ভাবছে কিশোর।
…আরও নিয়েছে, বলছেন ম্যাড। একগাদা! বিশ থেকে তিরিশ ডলার দাম ওগুলোর। হঠাৎ বদলে গেল বিক্রেতার কণ্ঠস্বর। কেন, দেখতে পেল কিশোর। একটা বই দেখা গেল, তাতে দামের ট্যাগ লাগানো রয়েছেঃ ৪,৫০০ ডলার।
ধোঁয়াটা তেমন স্মার্ট আইডিয়া নয়, কিশোর বলল। এগুলো পুরানো পদ্ধতি। এতে অসুবিধে হলো, চোর নিজেও কিছু দেখতে পায় না। অনেক সময় যেটা নিতে আসে সেটাই ফেলে যেতে হয়। ফেলে গেছে দেখতে পায়নি বলেই।
যা নিয়েছে তা-ই যথেষ্ট, ম্যাড বললেন। আমারগুলো যা পেয়েছে তা তো নিয়েছেই, তোমার যেগুলো আমার হাতে ছিল, সেগুলোও নিয়েছে।
পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগল তিন গোয়েন্দা। ক্রিমসন ফ্যান্টম বা লাল ভূত ওদের কমিকগুলোও নিয়ে গেছে, সব চেয়ে দামিগুলো, যেগুলোর প্রাথমিক দামই উঠে গিয়েছিল তিনশো ডলার।