অতটা আশা কোরো না, পাশ থেকে বলে উঠল হুফার। কখন এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করেনি তিন গোয়েন্দা কিংবা ডিকসন। অন্য কমিকে সই করে দিতে রাজি আছি, ওটাতে নয়।
হুফার, প্লীজ, অনুরোধ করলেন ডিকসন। এখন তো আর…
তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হুফার। মাথা নেড়ে বলল, বেশ, দিতে পারি। তবে লাভের কমিশন দিতে হবে আমাকে।
আজব লোক, এই কমিকের মানুষগুলো, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললেন ডিকসন। টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। খালি ব্যবসা…
মাঝখান থেকে কিশোর বলল, একমাত্র এডগার ডুফার বাদে। তাকে তো দেখছি না?
হ্যাঁ, মাথা দোলাল হুফার, এডের লোভটোড নেই। গোন্ড রুমে গেলেই পাবে তাকে। রক অ্যাসটারয়েডে ডুবে রয়েছে। প্রোজেকটরটা জায়গামত বসিয়ে ফেলা হয়েছে আবার। গিয়ে দেখগে, লোকের কি ভিড়।
লুকানোর জায়গা খুঁজে বের করেছিল বটে মরগান, রবিন বলল। সব তো ফাঁস হয়ে গেছে। তার দলের এখন কি হবে? বান্দাবাজি করে নিশ্চয় অনেক লোকের পকেট মেরেছে?
তা তো মেরেছেই, ডিকসন বললেন। ভাওতা দিয়ে অনেক লোককে ঠকিয়েছে। টাকা এনেছে অনেক কমিক বিক্রেতা আর সংগ্রাহকের কাছ থেকে। আসল ভেবে সাদা-কালো যে সব কমিক কিনেছিল ওরা, সেগুলোর কথা ভেবে এখন কপাল চাপড়াচ্ছে। ওরা তো ভেবেছিল অনেক কমে অনেক দামি জিনিস পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে ঠকবে, কল্পনাও করতে পারেনি।
গম্ভীর হয়ে গেল হুফার। ঠকিয়েই যেত, যদি বেশি লোভ করতে গিয়ে জাল অটোগ্রাফের শয়তানিটা না করত। তবে একটা ব্যাপার ভালই হয়েছে। ধরা না পড়লে আরও অনেক বেশি ঠকানোর ব্যবস্থা করত। রঙিন কমিক ছেপে তাতে জাল অটোগ্রাফ দিয়ে পাইকারী হারে ঠকাত মানুষকে।
ওদেরও দোষ আছে। অনেকেরই, মুসা বলল। শুনেছি, জেনেশুনেই ঠকে ওরা। কয়েকজনকে নাকি গিয়ে বলেছে মরগান, দেখুন তো সইটা জাল কি-না? ওরা দেখেছে, চিনেছেও। বলেনি। জানে, জাল হলে আসলের চেয়ে দাম বেড়ে যাবে। বেশি দাম যদি চেয়ে বসে আবার মরগান, সে জন্যে বলেছে, না আসলই। তারপর তাড়াতাড়ি তার হাতে দামটা ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছে। ভেবেছে, আহা কি লাভটাই না করলাম!
ওদের এই লোভের জন্যেই খেলাটা খেলতে পেরেছে মরগান, কিশোর বলল। অনেককেই দলে টেনেছে সে, এমন কি নীল বোরামকেও। ভুলটা করেছে হুফারকে কনভেনশনে দাওয়াত দিয়ে। অটোগ্রাফ দেয়া ফ্যান ফানটা বিক্রি করে দিয়েছে বোরাম, একথা যদি জানত মরগান তখন, তাহলে ভুলটা আর করত না।
মাথা ঝাকাল হুফার। হ্যাঁ, তাহলে বুঝে যেত, ওই অটোগ্রাফ আমার চোখে পড়লেই সব ভেস্তে যাবে।
বইটা কেনার জন্যে দেখলে না, কি রকম পাগল হয়ে গিয়েছিল বোরাম! হাসলেন ডিকসন।
কিন্তু যেহেতু আপনি বেচলেন না, কিশোর বলল। চুরি করতে বাধ্য হলো মরগান। এভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিল সে। হুফারকেও বের করে দিতে চেয়েছিল কনভেনশন থেকে। ডাকাতি হলে সবাই ভাববে, হুফারই কাজটা করেছে। মানে মানে তখন কেটে পড়বে সে, এই ছিল মরগানের ধারণা। যত ভাবে সম্ভব, হুফারকে ঠেকাতে চেয়েছিল, যাতে অটোগ্রাফটা তার চোখে না পড়ে। সে বুঝতে পেরেছিল, পড়লে তার সমস্ত জারিজুরি ফাস হয়ে যেতে পারে। লাটে উঠতে পারে অবৈধ ব্যবসা।
আমি যে এখানে আমার ধান্দায় এসেছি, এটাও জানত না সে, হুফার বলল।
ভুল আরও করেছে, বলল রবিন। ডাকাতির পর আমাদের তিনজনকে, বিশেষ করে কিশোরকে উৎসাহিত করেছিল কেসের তদন্ত করার জন্যে। কিশোর পাশা যে কি চিজ সেটা কি আর ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিল। এ কাজ করেছে সে নিজেকে সন্দেহমুক্ত রাখতে। এবং সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছে।
তবে ঘোলা পানি কম খাওয়ায়নি আমাদের, স্বীকার করল কিশোর। মিরিনার ব্যাগে কমিকগুলো রেখে তো মহাদ্বিধায় ফেলে দিয়েছিল আমাকে।
হেসে উঠল মুসা, কিন্তু বেচারা জানত না, দ্বিধায় পড়লে যে খেপা বাঘ হয়ে যায় কিশোর পাশা।
তোমরাও কি আর কম নাকি? এক ঘুসি খেয়েই তো পাগল হয়ে উঠলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে।
অনেক সময় নষ্ট করেছেন ডিকসন। ওদিকে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে তার সেলসম্যানেরা। ওদেরকে সাহায্য করতে যেতে চাইলেন তিনি। ছেলেদের বললেন, যা-ই বলো, তোমাদের মত গোয়েন্দা আমি আর দেখিনি। সাংঘাতিক ছেলে তোমরা তোমাদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লেগেছে আমার। ইয়ে, পুরানো কমিক পেলেই চলে আসবে আমার দোকানে। দোকান তো চেনোই। কেনার মত হলে কিনে নেব। এক এক করে তাকালেন ওদের মুখের দিকে। তো, এখন যে মাপ করতে হয় আমাকে?
নিশ্চয়ই, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কমিকগুলো কিনে নেয়ার জন্যে…
জলদি ভাগ, হেসে রসিকতা করল হুফার। নইলে আবার তোমাদের অটোগ্রাফ চেয়ে বসবে। বাপরে বাপ, এমন ব্যবসায়ী আমি আর দেখিনি!
ডিকসন আর হুফারকে গুড-বাই জানিয়ে দরজার দিকে রওনা হলো তিন গোয়েন্দা। ভিড় ঠেলে কিছুদূর এগোতেই দেখতে পেল ক্যামেরার ফ্ল্যাশারের ঝিলিক। মিরিনা জরডানের ছবি তুলছে উৎসাহী তরুণেরা।
কিশোরকে দেখেই উজ্জ্বল হলো মিরিনার মুখ। কিশোর!
উম‥হাই! কোনমতে বলল কিশোর। এড়িয়েই যেতে চায়। কেস শেষ, মিরিনার ব্যাপারেও তার আগ্রহ শেষ।
কিন্তু এত সহজে তাকে রেহাই দিল না মিরিনা। এগিয়ে এল। আমাকে বিখ্যাত করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ওরা, কিশোর। তবে আমি তো জানি, এ সবের পেছনে আসল ক্রেডিটটা কার। তোমার। নইলে বিখ্যাত হওয়া তো দূরের কথা, অপমানিত হয়ে এই হোটেল থেকে বিদেয় হতে হত আমাকে। তুমি আমাকে চুরির অপবাদ থেকে বাঁচিয়েছ, তুমি আমাকে কিডন্যাপ হওয়া থেকে রক্ষা করেছ। মরগানকে ধরার জন্যে ফাঁদটা তুমিই পেতেছ। কিশোর, কি বলব তোমাকে, তোমার মত মানুষ আমি সত্যিই দেখিনি! তুমি একটা লোক বটে!