সুমাতো কমিক লেখা স্টলটা চোখে পড়ল ওদের। অনেক বড়। ডান পাশের অর্ধেক জুড়ে দেয়াল ঘেঁষে বিরাট এক দোকান সাজানো হয়েছে। খরিদ্দারও প্রচুর।
টেবিলের কাছে যাওয়ার আগে দ্বিধা করল তিন গোয়েন্দা। সব কিছু দেখে নিয়ে তারপর যেতে চায়।
পাঁচজন অল্পবয়েসী লোক দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপাশে। খরিদ্দার সামলাচ্ছে। একজনের এক কানে দুল। সে কথা বলছে একটা ছোট ছেলের সঙ্গে। একটা থান্ডারবীম কমিকের তিন নম্বর সিরিজটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দিয়ে দিলাম চার ডলারেই। বইটার মলাটে নায়কের ছবি আঁকা। নিজের চোখ থেকে লেজার রশ্মি বের করে ট্যাঙ্ক ফুটো করে ফেলছে। তোমার ভাগ্য ভাল, খোকা। পেয়ে গেলে। এখানে আর কোন দোকানে এই কমিক পাবে না।
তাড়াতাড়ি টাকা বের করে দিল ছেলেটা, যেন দেরি করলেই হাতছাড়া হয়ে যাবে ওই অমূল্য সম্পদ।
নিচু গলায় দুই বন্ধুকে বলল রবিন, আসার সময় এইমাত্র দেখে এলাম আরেকটা স্টলে, এক ডলারের কমিকের স্কুপে ফেলে রেখেছে ওই একই জিনিস।
মুসা বলল, পঞ্চাশ সেন্ট দিয়ে আমি নতুন কিনে পড়েছি।
সুমাতো স্টলের আরও কাছাকাছি এসে তিন গোয়েন্দা দেখল এক জায়গায় একটা টেলিভিশনে ভিসিআর লাগিয়ে রেখেছে একজন সেলসম্যান। শজারুর কাটার মত খাড়া খাড়া চুল, গায়ে কালো টি-শার্ট। অ্যাসট্রোঅ্যাইসেস কমিকের কিছু দৃশ্য দেখাচ্ছে। ইদানীং টিভিতে বেশ গরম করে রেখেছে ওই নতুন সাইন্স ফিকশনটা। বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। লোকটা বলছে, এই পার্টটা টিভিতে আসতে আরও দুএক হপ্তা লাগবে। চালাকি করে আগেই জোগাড় করে ফেলেছি আমরা। শহরের কেউ দেখার আগেই পেয়ে যাচ্ছেন। জলদি নিয়ে নিন, শেষ হওয়ার আগেই।
বলে খরিদ্দারদের দিকে কি-করে-ফেলেছিনু-রে এমন একটা ভঙ্গিতে তাকাল সে।
বছর বিশেক বয়েসের এক তরুণ টাকা বাড়িয়ে দিল।
ফিসফিস করে মুসা বলল, অযথা টাকা খরচ করছে। কয়েকদিন অপেক্ষা করলে বিনে পয়সায়ই দেখতে পারত। চাইলে ভিসিআরে রেকর্ডও করে নিতে পারত।
টাকা দিচ্ছে একটা জালিয়াতি করে আনা টেপের জন্যে, রবিন বলল।
নিশ্চয় ঘুষ দিয়ে নিয়ে এসেছে। নয়ত সিন্ডিকেট যখন টিভি কোম্পানিতে পাঠাচ্ছিল ছবিটা, তখন স্যাটেলাইট বীম দিয়ে ধরে রেকর্ড করে ফেলেছে। মহা শয়তান ব্যাটারা!
কত রকমের পাগল যে আছে দুনিয়ায়, কিশোর বলল। টাকাও আছে খরচও করছে। ওরা কিনছে বলেই ঠকানোরও সুযোগ পাচ্ছে। দেখি, আমরা কি করতে পারি?
এগিয়ে গেল কিশোর।
একজন সেলসম্যান মুখ তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, বলো, কি করতে পারি?
দ্বিধা করছে তিন গোয়েন্দা।
ও, তোমরা কিনবে না? বেশ, না কিনলে সরে দাঁড়াও। যারা কিনবে তাদের জায়গা দাও।
না, কিশোর বলল, আমরা কিনব না।
স্টলের কাছ থেকে সরে এসে রবিনের দিকে তাকাল সে। বলল, এরা ডাকাত। বেচতে পারব না এদের কাছে। ওটা কোথায় দেখেছিলে? চার ডলারেরটা যেখানে এক ডলারে বিক্রি করে?
ওদিকে, রবিন বলল। ইমারজেন্সি একজিটের কাছে। কি যেন একটা নাম। পাগল না উন্মাদ, কি যেন।
স্টলের নামের সঙ্গে ম্যাড কথাটা জুড়ে দেয়া হয়েছে অবশ্য, তবে মালিক সত্যি পাগল কি-না কে জানে! যদিও তাঁকে দেখলে পাগল বলেই সন্দহ হবে। এলোমেলো কোঁকড়া কালো চুল, পুরু গোঁফ। দোকানের নাম ম্যাড ডিকসনস ওয়ার্ল্ড। তরুণ সহকারীকে ডেকে বললেন, জনি, চট করে ওপরে গিয়ে আরও কয়েক বাক্স কমিক নিয়ে এসো। তারপর ঘুরতেই চোখ পড়ল লম্বা, বিষন্ন চেহারার একজন মানুষের দিকে। চাঁদিতে টাক। তিনপাশে পাতলা চুল, ধূসর হয়ে এসেছে।
ধমকে উঠলেন ম্যাড, আবার এসেছেন?
ভদ্রলোক বললেন, ফ্যান ফানের কপিটার জন্যে সাড়ে তিনশো দিতে রাজি আছি।
মাথা নাড়লেন ডিকসন। পাঁচ।
আরও বিষন্ন হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। দর কষাকষি শুরু করলেন, ঠিক আছে, সাড়ে চার।
ছয়।
কিন্তু লেখা তো রয়েছে মাত্র সাড়ে চারশো! মরিয়া হয়ে উঠলেন যেন ক্রেতা।
এখন আর ছয়ের কমে বেচব না। জনাব পাগলও কম যান না। বুনো দৃষ্টি ফুটেছে চোখে।
হাত মুঠো করে ফেললেন ক্রেতা। বেশ ছয়ই দেব। হাসি ফুটল পাগলের চোখে। বলতে বেশি দেরি করে ফেলেছেন। এখন সাত।
চোয়াল স্কুলে পড়ল লোকটার। সাত! বেচতে চান না নাকি কারও কাছে?
কারও কাছে বেচতে চাই না কথাটা ঠিক নয়। আপনার কাছে চাই না।
ঝটকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ক্রেতা। গটমট করে চলে গেলেন। সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। মিস্টার ডিকসনের দিকে ফিরে বলল, কাস্টোমারদের সঙ্গে এরকম আচরণই করেন নাকি?
সবার সঙ্গে করি না। যারা বেশি বিরক্ত করে, ঘাড়ে এসে চাপতে চায়, তাদের সঙ্গে করি। বড় একটা কমিক পাবলিশিং কোম্পানিতে চাকরি করে। ভীষণ বিরক্ত করে এসে। কিশোরের বাক্সটার দিকে তাকালেন ডিকসন। তোমরা কি জন্যে এসেছ? কিনবে, না বেচবে?
বেচব। বাক্সটা টেবিলে রেখে ডালা খুলল কিশোর।
ভেতরের জিনিসগুলো দেখলেন ডিকসন। ভাল জিনিস কিছু আছে। চোখ চকচক করছে তার। সিলভার এজ-এর বই দুটো তো বেশ ভাল কন্ডিশনে আছে। তাছাড়া কিছু নাম্বার ওয়ানস…ঠিক আছে, যা আছে, আছে। পুরো বাক্সটাই বেচে দাও। চারশো ডলার দেব।
দাম শুনে কান গরম হয়ে যাচ্ছে টের পেল কিশোর। বুঝল, মুখেও রক্ত জমছে। শুরুতেই এত! তার পরেও বলল, মাত্র চার? অর্ধেকও তো বলেননি। দাম জানা আছে আমার…