করভেটের পেছনে লেগেই রয়েছেন ডিকসন। গালাগাল করছে অন্যান্য ড্রাইভাররা, সরতে বলছে, কানেই তুলছেন না তিনি। থ্রী লেনের দিকে ঘুরে গেল মুসা। সামনে দিয়ে গিয়ে করভেটকে আটকানোর চেষ্টা করল।
আরেকবার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেন মরগান। আবার বাধা দিল আহত ফেন্ডার। পেছনের বাম্পারে গুতো মারল কয়েকবার সাইক্লপস।
সব রকমে চেষ্টা চালিয়েও করভেটকে থামাতে কিংবা রাস্তা থেকে সরাতে পারল না সাইক্লপস আর ইমপালা। কিছুতেই পাশ কাটিয়ে পেরোতে দিলেন না ওদেরকে মরগান। একবার বাঁ পাশে এগিয়ে প্রায় সমান সমান হয়ে গেল সাইক্লপস। ধা করে এসে ওটাকে বাড়ি মারল করভেট, কয়েক জায়গার রঙ তুলে দিল। তুবড়ে গেল বডির ওসব জায়গা। রাস্তায় এই কাণ্ড চলতে দেখে হতবাক হয়ে গেছে অনেক ড্রাইভার। জোরে জোরে হর্ন বাজাতে শুরু করেছে।
রবিন বলল, করভেট বেচারার স্যালভিজ ইয়ার্ডে যেতে আর দেরি নেই।
ভুল বলেনি সে। চমৎকার গাড়িটার করুণ চেহারা হয়েছে। দুই পাশে রঙ চটে গেছে অনেক জায়গায়, তুবড়ে গেছে শরীর। বাম্পারের একটা পাশ খুলে ঝুলছে, রাস্তায় ঘষা লেগে আগুনের ফুলকি ছিটাচ্ছে। বসে যাওয়া ফেন্ডারের চাপে একনাগাড়ে আর্তনাদ করে চলেছে চাকাটা।
ঘষা লেগে রাবার ক্ষয়ে গিয়ে পাতলা হয়ে এল টায়ার, আর সইতে পারল না। বিকট শব্দ করে ফাটল। পাগল হয়ে গেল যেন করভেট। হুঁশজ্ঞান সবকিছু হারিয়ে রাস্তার গাড়িগুলোকে গুঁতো মারার জন্যে ছুটে যেতে লাগল এদিক ওদিক। সবাই সরে যেতে চাইছে পাগলা গাড়ির নাকের সামনে থেকে। ব্রেক কষার ফলে একাধিক টায়ারের কর্কশ শব্দ হলো। হর্ন বাজল। রাগত চিৎকার শোনা গেল ড্রাইভারদের। অবশেষে গাড়িটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেন মরগান।
ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল সাইক্লপস। বাঁ পাশে চেপে আসছে ইমপালা। কোণঠাসা করে ফেলল করভেটকে।
এখন আর কিছুই হারানোর নেই মরগানের। দুটো গাড়ির মাঝখান দিয়ে ভয়ানক ভাবে কাঁপতে কাঁপতে চলেছে তাঁর গাড়ি। থামলেন না এত কিছুর পরেও। দুই সারি গাড়িকে মাঝখান দিয়ে কেটে বেরিয়ে চলে যেতে চাইছেন ডানের রাস্তায়। কিন্তু যেতে দিলেন না ডিকসন।
করভেটের গায়ে প্রায় ঘষা লেগে বেরিয়ে গেল সাইক্লপস। সামনে গিয়ে পথ রোধ করে দাঁড়াল লাল গাড়িটার। থামতে বাধ্য হলেন মরগান। তবে সেটা মুহূর্তের জন্যে। পরক্ষণেই শাঁই শাঁই স্টিয়ারিং কেটে নাক ঘোরাতে শুরু করলেন গাড়ির।
ভ্যান থামতে না থামতেই ঝটকা দিয়ে খুলে গেল এক পাশের দরজা। লাফিয়ে রাস্তায় নামল মিরিনা। ভয় পাচ্ছে বোঝা যায়, তবে ছাড়তেও রাজি নয়। টান দিয়ে গা থেকে খুলে ফেলল আলখেল্লা বুলফাইটারদের লাল কাপড়ের মত করে ধরল। তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল করভেট। সোজা ওটার ডান উইন্ডশীন্ডে আলখেল্লা ছুঁড়ে মারল সে।
সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না মরগান। মোড় নিতে ব্যর্থ হলেন তিনি। অন্ধের মত রাস্তা হাতড়ে বেড়াতে গিয়ে দড়াম করে লাইটপোস্টে গুতো লাগিয়ে বসল করভেট।
পুলিশ যখন হাজির হলো, দেখল, মরগানকে ঘিরে রেখেছে সাতজন লোক। বিধ্বস্ত চেহারা হয়েছে কনভেনশন চীফের, তবে জখম হয়নি কোথাও। হাতে ধরা রয়েছে তখনও ব্যাগটা, যেটাতে রয়েছে ডাকাতির মাল।
১৮
ডাকাতির দায়ে জেলে যেতে হলো মরগানকে। তবে কনভেনশন টীফের জন্যে কনভেনশন থেমে থাকল না। চলল শেষ দিন পর্যন্ত, যতদিন চলার কথা। রবিবারে তো প্রচন্ড ভিড় হলো, সব চেয়ে বেশি ভিড়। সুমাতো কমিকের স্টল খালি, চুটিয়ে ব্যবসা করল অন্য স্টলগুলো।
বেশি ভিড় হলো ম্যাড ডিসনের দোকানের সামনে, লোক জেনে গেছে, একটা অপরাধ চক্রকে ভাঙতে সাহায্য করেছেন তিনি। বিরাট বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে এটা তার জন্যে। বই বিক্রি করে অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠলেন তিনি, তাঁকে সাহায্য করার জন্যে বাড়তি লোক নিয়োগের পরেও।
এরই মাঝে এক ফাঁকে কতগুলো কমিক উল্টেপাল্টে দেখলেন, কেনার জন্যে। বললেন, আরও ভাল অবস্থায় পেলে ভাল হত। দুটো পাতা দুমড়ে গেছে। মলাটটায় একটু টান লাগলেই খুলে চলে আসবে। আরও যত্ন করে রাখা উচিত ছিল তোমার। কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসলেন তিনি।
পারতাম, হেসেই জবাব দিল কিশোর। একটা সুন্দরী মেয়ের বিপদ তো, সাহায্য করতেই হলো। এগুলোর দিকে আর নজর দিতে পারিনি।
বিশ ডলারের তাড়া বের করে নোট গুনতে শুরু করলেন ডিকসন। কয়েকটা বের করে নিয়ে টেবিলে রাখলেন। এই হলো গে কমিকের দাম, বললেন তিনি। আরও কিছু নোট বের করে সেগুলোর সঙ্গে রেখে বললেন, আর এটা হলো গিয়ে বোনাস।
তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। বিশ্বাস করতে পারছে না যেন। যা ইনভেস্ট করেছিল ওরা কমিকগুলোতে, তার অনেক গুণ বেশি ফেরত পেয়েছে। প্রায় আটশো ডলার!
টাকাগুলো পকেটে রাখতে রাখতে কিশোর বলল, মনে হয় অনেক বেশি দিয়ে ফেললেন, মিস্টার ডিকসন। চাইলে এখনও ফেরত নিতে পারেন। ব্যবসা করতে এসেছি আমরা, গলা কাটতে নয়।
কি যে বল! পনেরো মিনিটেই তুলে ফেলব ওই টাকা! হাসিতে দাঁত বেরিয়ে গেল তাঁর। আশা করছি তোমারগুলো থেকেই তুলে ফেলব। আর যদি লাভ তেমন না-ই হয়, কুছ পরোয়া নেই। ফ্যান ফানটা বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলব। যেটাতে জাল অটোগ্রাফ রয়েছে। ওটার জন্যে তো এখন পাগল হয়ে আছে সংগ্রাহকরা। পুলিশের কাছ থেকে ফেরত এলে আর একটা মিনিটও আটকাতে পারব না। চাই কি, বলেকয়ে হুফারের একটা আসল সইও করিয়ে নিতে পারি। তাহলে দাম আরও চড়ে যাবে।