অ্যাই, কি হলো? ছবির কি হলো? চিৎকার করে উঠল কয়েকজন দর্শক। এমনকি যারা ঘুমিয়ে ছিল তারাও জেগে উঠে চেঁচামেচি শুরু করল। লোকটা যখন টান দিয়ে প্রোজেকটরের নিচ থেকে ব্যাগটা বের করল, তখন চিৎকার চরমে উঠেছে। কারণ প্রোজেকটরের আলো তখন পর্দা থেকে এতটাই নিচে নেমে গেছে, রক আর গুঙের কেবল মাথাটা দেখা যাচ্ছে। রকের হেলমেট আর গুঙের মাথার অ্যান্টেনা এপাশ ওপাশ করছে প্রোজেকটরের আলো নড়ার সাথে সাথে।
চেঁচামেচিতে ছবির শব্দই শোনা যায় না। কয়েকজন ভক্ত চেঁচিয়ে উঠল যারা চিৎকার করছে তাদেরকে চুপ করানোর জন্যে। তাতে চিৎকার বাড়লই শুধু, কমল না।
সব চিৎকারকে ছাপিয়ে শোনা গেল আরেকটা তীক্ষ্ণ কর্কশ চিৎকার, অ্যাই, তোমরা চুপ করবে! কিছু তো শুনতে পাচ্ছি না!
নিঃশব্দে এগিয়ে এল ওরা সাতজন, ঘিরে ফেলল টেবিলের কাছে দাঁড়ানো মানুষটাকে। এই সাতজন হলো তিন গোয়েন্দা, ম্যাড ডিকসন, আইজাক হুফার, এডগার ডুফার আর মিরিনা জরডান। আবছা আলোতেও স্পষ্ট চেনা গেল লুই মরগানকে।
ব্যাগটা হাতে আঁকড়ে ধরে একটা মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন মরগান। তারপর শ্রাগ করে ব্যাগ থেকে বের করলেন ছোট একটা বল।
থামুন! চিৎকার করে উঠল কিশোর। কিন্তু ততক্ষণে বলটা মেঝেতে পড়ে গেছে।
ঘন ধোঁয়া উঠতে শুরু করল। চিৎকার করে বললেন মরগান, আগুন! আগুন!
আসল ভক্তরা কথাটা কানেই তুলল না। ছবি ঠিক করতে বলছে পিটারকে। ধোঁয়া বাড়ছে, তাতে ঠিক করা ক্রমেই মুশকিল হয়ে উঠছে। যারা একটু কম ভক্ত, তারা গোয়েন্দাদের দলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড় দিল দরজার দিকে। এই সুযোগটা কাজে লাগালেন মরগান। আক্রমণ করে বসলেন মিরিনাকে। ব্যাগ ঘুরিয়ে বাড়ি মারতে গেলেন।
বাড়ি লাগল না, ধাক্কায়ই টলে উঠে পিছিয়ে গেল মিরিনা। তার পাশ কাটিয়ে খোলা দরজার দিকে দৌড় দিলেন মরগান।
পড়ে যাচ্ছিল মিরিনা, কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে আটকাল কিশোর। চিৎকার করে বলল অন্যদেরকে, আসুন! জলদি!
দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরোল ওরাও। হলের অর্ধেক পেরিয়ে গেছেন ততক্ষণে মরগান। সামনে কেউ পড়লে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। পিছু নিল তিন গোয়েন্দা। সামনে একটা ছেলেকে দেখে সোজা ঘুসি মেরে বসলেন মরগান, সরানর জন্যে। চরকির মত পাক খেয়ে দেয়ালের দিকে চলে গেল ছেলেটা।
লবিতে বেরোলেন মরগান। কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা ছুটলেন, লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে, কনুইয়ের গুঁতো মেরে সরিয়ে। সাধারণত যেদিক দিয়ে বেরোনর কথা-সামনের দরজা কিংবা এলিভেটরের দিকে না গিয়ে যাচ্ছেন অন্য দিকে।
বুঝে ফেলল কিশোর। সিড়ি! লোহার সিড়ির দিকে যাচ্ছেন তিনি!
আগে চলে গেল মুসা। দ্রুত কমে আসছে তার আর মরগানের মাঝের দূরত্ব। অবাক হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে লোকে।
মোড়ের কাছে গিয়ে যেন ব্রেক কষলেন মরগান। পরক্ষণেই ঘুরে গেলেন সিড়ির দিকে। একটু পরেই দড়াম করে সিঁড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শোনা গেল।
হ্যাঁঁচকা টানে দরজাটা খুলে ফেলল মুসা। ঢুকে পড়ল ভেতরে। পেছনে বিন্দুমাত্র গতি না কমিয়ে এসে ঢুকল কিশোর আর রবিন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল।
মুসা, চেঁচিয়ে বলল কিশোর। সোজা তোমার গাড়িতে গিয়ে উঠবে। মরগানকে ধরার চেষ্টা কোরো না! আগের বার কিভাবে ওদের দৌড়ে পরাজিত করে দিয়েছিলেন কনভেনশন চীফ, মনে আছে তার।
পার্কিং গ্যারেজে নেমে এল ওরা। ওরাও নামল, মরগানও উঠে পড়লেন লাল একটা করভেট গাড়িতে।
ইমপালার দিকে দৌড় দিল তিন গোয়েন্দা। মুসা ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে দিতে চলতে শুরু করল করভেট, ঘুরে রওনা হয়ে গেল একজিট র্যাম্পের দিকে। এক্সিলারেটরে পায়ের চাপ বাড়িয়ে গাড়িটার পিছু নিল মুসা।
খোলা রাস্তায় যদি চলে যায়, বলল সে। তাহলে আর ধরতে পারব না। ওর গাড়ির ধুলো খাওয়া ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকবে না আমাদের।
কিন্তু থামাবেই বা কি করে লোকটাকে? র্যাম্পে যেতে কোন বাধা নেই।
তারপর, হঠাৎ করেই কর্কশ আর্তনাদ করে উঠল টায়ার। দেখা গেল, একটা থামের আড়াল থেকে বেরোচ্ছে ম্যাড ডিকসনের সবুজ ভ্যান। মরগানের গাড়ির পথরোধ করতে ছুটল একচোখা সাইক্লপস।
গতি বাড়াল করভেট। শাঁই করে একপাশে কেটে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল সাইক্লপসকে। পুরোপুরি পারল না। ধ্রাম করে এসে ওটার পেছনের ডান ফেন্ডারে গুতো মারল সবুজ ভ্যান।
থামলেন না মরগান। গতিও কমালেন না। ভাঙা ফেন্ডার বিচিত্র শব্দ তুলছে।
কয়েক জায়গায় রঙ চটে গেল সাইক্লপসের। কেয়ারই করল না। তীক্ষ্ণ মোড় নিতে গিয়ে কাত হয়েই আবার সোজা হলো। দুলে উঠল একবার। থামল না। করভেটের লেজে লেগে রইল। কাছাকাছি চলে এল ইমপালা।
সেঞ্চরি বুলভারে বেরিয়েই গতি বাড়াল করভেট। যানবাহনের ভেতর দিয়ে পথ করে ছুটতে গিয়ে যেন মাতালের মত দুলছে। খানিক পর পরই কিইচ কিইচ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে টায়ার। রাস্তায় ঘষা লেগে জ্বলে যাচ্ছে। ডানের ফেন্ডারটা চেপে লেগে রয়েছে চাকার সঙ্গে, ক্ষতি করে চলেছে টায়ারের।
মুসার ভবিষ্যতবাণী ঠিক হয়নি। গতি বাড়িয়ে ওদেরকে ধুলো খাইয়ে সরে পড়তে পারেননি মরগান। গতি বাড়ালেই মাতাল হয়ে যায় গাড়ি, নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় আছে এভাবে চললে। গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। আশা হলো তিন গোয়েন্দার। ধরার সুযোগ আছে।