আমি তাকে গোল্ড রুমে দেখেছি, ডুফার বলল। ঘরে ঢুকে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগল প্রোজেকশনিস্ট তখনও আসেনি বলে। সে নিজেই প্রোজেকটরটা চালানোর চেষ্টা করল, পারল না। যন্ত্রটা এমনকি পর্দায় দিকেও সেট করা ছিল না, যে ছবি ফেলা যাবে। মজার কাণ্ড করেছে। ওটাকে চালানোর জন্যে ব্যাগ ব্যবহার করেছে সে।
ব্যাগ? কিসের ব্যাগ? জানতে চাইল কিশোর।
শ্রাগ করল ডুফার। কাঁধে একটা ক্যানভাসের ব্যাগ ছিল। এই কনভেনশনের অর্ধেক লোকের কাঁধেই ওরকম ব্যাগ আছে।
মুসা বলল, কিন্তু আমাদের সাথে যখন দেখা হলো, তখন ছিল না।
রবিন যোগ করল, আর সেটা ডাকাতির বেশি আগেও নয়।
আসল কথা হলো, কিশোর বলল, কি ছিল ব্যাগটার ভেতর?
তোমার কি মনে হয়? মিরিনার প্রশ্ন। কসটিউম?
হতে পারে, ভ্রূকুটি করল কিশোর। কিন্তু সময়ের ব্যাপারটা মিলছে না। পোশাক খুলে এত তাড়াতাড়ি গোন্ড রুমে পৌঁছল কি করে?
ভাল প্রশ্ন, মুসা বলল। গোল্ড রুমে দেখা দরকার। এসো।
দল বেঁধে রওনা হলো সবাই। কনভেমশন ফ্লোর থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাঁয়ে মোড়, তারপর আরেকবার বাঁয়ে মোড় নিতে লম্বা একটা করিডর পড়ল।
একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? হুফার বলল, কনভেনশন ফ্লোরে এদিক দিয়ে যাওয়ার পথটা বড় জটিল। বেশি ঘোরপ্যাচ।
শেষ মাথায়, ডানে গোল্ড রুমের প্রবেশ পথ। বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে আসছে জমজমাট বাজনা। চিৎকার করল একটা মহিলা কণ্ঠ, গান নিয়ে একটা মন্তব্য করল।
বাঁয়ে আরেকটা দরজা, তাতে ডোরনব নেই। ঠেলা দিল কিশোর। নড়ল না পাল্লা। এটা দিয়ে কোথায় যাওয়া যায়? নিজেকেই যেন করল প্রশ্নটা।
এটা একটা ইমারজেন্সি একজিট, ডুফার বলল। জরুরি অবস্থায় বেরোনোর পথ। এর অন্য পাশেই কনভেনশন ফ্লোর।
দরজায় কান পেতে ওপাশে অসংখ্য মানুষের নড়াচড়া আর কোলাহল গুনতে পেল কিশোর। চকচক করে উঠল চোখ। তাহলে এই ব্যাপার। এটা দিয়ে সহজেই কনভেনশন ফ্লোর থেকে ডাকাতি করে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ক্রিমসন ফ্যান্টম। মিস্টার ডিকসনের দোকান থেকে খুব কাছেই হবে মনে হয়।
তার পরেও কথা থাকে, প্রশ্ন তুলল হুফার। কাপড় বদলাল কোথায় সে?
যেখানে ডাকাতি করেছে সেখানেই, জবাব দিল কিশোর। পোশাক বদলের ঘর তো ওখানেই তৈরি করে নিয়েছিল। ধোঁয়া ধোঁয়ার মধ্যেই কাজটা সেরেছিল। মিরিনার দিকে তাকাল গোয়েন্দাপ্রধান। ধোঁয়ার ভেতরে তাকিয়ে কি দেখতে পেয়েছিলে তুমি, বলো তো আবার?
শ্রাগ করল মিরিনা। এক ঝলক লাল। মনে হলো কাঁধের ওপর। ধোয়ার ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তখন সে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কোন দিকে গিয়েছিল?
ভেবে নিল মিরিনা। তখন তো মনে হয়েছিল, মানে আমি ভেবেছি আরকি, সামনের দরজার দিকেই গেছে। এখন মনে হচ্ছে, এই দরজাটার দিকেও আসতে পারে।
হাসল কিশোর। লাল ঝিলিকের মানে হতে পারে, তখন ওটা খুলে ফেলছিল মরগান, ব্যাগে ঢোকানোর জন্যে। কমিক ভরে আনতে যে ব্যাগটা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল।
ডুফার বলল, কিন্তু ডাকাতির আগের ক্ষণে যে তাকে আমি গোন্ড রুমে দেখেছি..
বাধা দিয়ে বলল কিশোর, তা দেখেননি। ডাকাতির খবর শোনার আগের মুহূর্তে তাকে দেখেছেন, ডাকাতি হওয়ার আগের ক্ষণে নয়।
দ্বিধায় পড়ে গেল ডুফার। তাই তো! এটা তো হতেই পারে…হয়তো ঠিকই বলেছ তুমি বুঝতে পারছি…
আমি পারছি না, মুসা বলল।
সামনের দরজা দিয়ে ডাকাতির খবরটা বাইরে বেরোতে মিনিট দুই লেগে গেছে, বুঝিয়ে দিল রবিন।
ঠিক। কিশোর আরও ব্যাখ্যা করে বোঝাল, পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল মরগান, খবরটা হলরুম থেকে বাইরে বেরোনোর আগেই। ছুটে চলে এসেছিল গোন্ড রুমের কাছে। যাতে তাকে লোকে দেখতে পায়, অ্যালিবাই তৈরি হয়, তাকে সন্দেহ না করতে পারে কেউ।
থামল কিশোর। এক আঙুল তুলল। আর একটা ভিন্ন সূত্র রয়ে গেল। সাথে করে ব্যাগটা গোল্ড রুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। ভাবছি, এখনও প্রোজেকটরের গায়ে কোথাও ঝুলছে না তো?
হুফার বলল, গিয়ে দেখলেই তো হয়।
সব চেয়ে ভাল হয়, কিশোর বলল, মরগান যদি যায়। গিয়ে বের করে আনুক ওটা। এক কাজ করা যাক। প্রোজেকশনিস্টকে দিয়ে একটা খবর পাঠানো যাক তাকে।
প্রোজেকটর চালাচ্ছে এখন পিটার, আমার বন্ধু, ডুফার বলল। ওই যে, আমাদের পাশে বসে খাচ্ছিল যে লোকটা সেদিন।
বুঝতে পেরেছি, কিশোর বলল।
তাকে দিয়ে কিছু করানো যায় না?
খবর পাঠাতে চাও তো? যাবে। কি বলতে হবে?
প্রোজেকটর ভীষণ গরম হয়ে গেছে, আগুন লেগে যেতে পারে, হাসল কিশোর, এরকম কিছু?
১৭
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল গোল্ড রুমের দরজা। নাছোড়বান্দা কিছু কমিকের ভক্তের ওপর ছড়িয়ে পড়ল আলো। টেরই পেল না ওরা। গভীর ঘুমে অচেতন। যারা জেগে রয়েছে তারা তাকিয়ে রয়েছে পর্দার দিকে। আলো পড়তেই চিৎকার করে উঠল দুচারজন, এই, বন্ধ করো! দরজা বন্ধ কর!
পর্দায় তখন মাকম্যানের রাজা গুঙের সঙ্গে মরিয়া হয়ে লড়ছে এক অ্যাসটারয়েড।
দর্শকদের আপত্তির পরোয়াই করল না দরজায় দাঁড়ানো লম্বা মানুষটা। সোজা এগোল প্রোজেকটরের দিকে। যাওয়ার সময় ঘষা লাগল পিটারের গায়ে। টেবিলে রাখা ক্যানভাসের ব্যাগটা ধরে টান দিল নিজের দিকে। একপাশে সরে গেল প্রোজেকটর, আলো অর্ধেক পড়ছে এখন পর্দায়, বাকি অর্ধেক বাইরে।
দর্শকরা দেখতে পাচ্ছে রে গান বের করছে রক, কিন্তু যার উদ্দেশে বের করেছে, সেই শত্রুই গায়েব। আলো অর্ধেক সরে যাওয়ায় বাইরে পড়ে গেছে গুঙ।