সংক্ষেপে সব জানাল কিশোর। শুনেটুনে মুসা বলল, ভাল। পুলিশকে খবর দেব?
তাতে এই তিনটেকে জেলে ভরতে পারব বটে, কিশোর বলল, কিন্তু গভীর জলের মাছটা ফসকে যাবে। লুই মরগানকে আটকাতে পারব না আমরা।
কেন নয়? জালিয়াতি যে করেছে এটা তো ঠিক?
কমিক বুক জালিয়াতি, হুফার বলল, এই অপরাধে জেলে ঢোকানো যাবে বলে মনে হয় না। উকিলই ভাল বলতে পারবে।
কিন্তু আইন তো ভঙ্গ করেছে সে?
পাবলিশিং কপিরাইট অমান্য করেছে, এটা বলা যায়, কিশোর বলল। এধরনের অপরাধে লোকের শাস্তি হয় বটে, তবে জেলে যায় না। জরিমানা টরিমানা দিয়েই খালাস পেয়ে যায়।
শহর ছেড়ে চলে যাবে সে, ডিকসন বললেন।
দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে, বলল কিশোর। তাহলে জরিমানাও দিতে হবে না। দেখি, আগে জেনে নিই, কি ধরনের শয়তানি চলছিল এখানে। তারপর বুঝেশুনে কিছু একটা করা যাবে।
ধমক দিতেই যা জানে গড়গড় করে বলে দিল এক সেলসম্যান। এখানে, এই মাটির নিচের ঘরে কমিক বই ছেপে নকল জিনিসটা আসল বলে ধরিয়ে দেয়া হত সংগ্রাহকের হাতে।
ভাল আয় করেছে, হুফার বলল। শ খানেক কমিক ছাপতে ব্ল্যাক অ্যাও হোয়াইটে বড় জোর হাজার দুয়েক ডলার লাগে। প্রতিটি বই কম করে হলেও পঞ্চাশে গছাতে পারবে বোকা সংগ্রাহকগুলোকে। তাতে লাভ থেকে যাবে তিন হাজার। সোজা কথা নয়। লেখক কিংবা আর্টিস্টকে কমিশনের জন্যে একটা পয়সাও দিতে হবে না। লাভ সবটাই নিজের পকেটে পুরতে পারবে প্রকাশক।
কিন্তু সব কিছু বন্ধ করে দিচ্ছে মরগান, কিশোর বলল। প্রেসও বন্ধ করে দিয়ে এখানকার পাট চুকিয়ে চলে যাওয়ার মতলব। তারমানে আরও কোন ব্যাপার আছে। একজন সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার, বল তো?
আরেক ফন্দি করেছে, লোকটা বলল। এবার কালারে ছাপবে।
কালার? ভুরু কোঁচকাল হুফার। তাতে তো অনেক গল্প। একশো ছাপথেই বেরিয়ে যাবে বারো হাজার! চুরি করে ছাপতে গেলে প্রেস থেকে তো আর পারবে না, নিজেকেই করতে হবে সব কিছু। এসটাবলিসমেন্ট কস্ট অনেক। টাকা পাবে কোথায়?
তাইওয়ান, সিঁড়ির গোঁড়া থেকে জবাব দিল নরিস। হাত-পা বাঁধা হয়ে বসে আছে। চারপাশে তাকাল বিরক্ত চোখে। ওরই মত আরেক শয়তান প্রিন্টারের সঙ্গে ওখানে যোগাযোগ হয়েছে মরগানের, চুক্তিও করেছে। এখানে ছেপে চোরাচালান হয়ে চলে আসবে আমেরিকায়। আপাতত চিনামাটির জিনিসের বাক্সে করে আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে মরগান। পুরো উপকুলে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছে তার। আমাদের সবাইকে ব্যবসায় লাগাবে বলে লোভ দেখিয়েছিল। টাকার অঙ্ক হিসেব করে দেখিয়েছিল। রাজি না হয়ে পারিনি।
এখন আর কি, কিশোর বলল, জেলে গিয়ে পচুনগে। বেশি লোভ করলে এরকমই হয়।
সেলারেই তিনজনকে বেঁধে ফেলে রেখে বেরিয়ে এল ওরা। দোকানের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। গাড়িতে বসে আছে মিরিনা। এরকম একটা পরিবেশে এভাবে বসে থাকতে ভাল লাগছিল না ওর। ওদের দেখে অস্বস্তি দূর হলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, খবর কি তোমাদের? সব ভাল? চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। আমাকে বের করে দিল সেলসম্যানগুলো। চুরি করে ঢুকতে হয়েছে তখন মুসা আর রবিনকে।
আমরা ভাল। কি কি ঘটেছে মিরিনাকে জানাল কিশোর। এখন গিয়ে মরগানকে ধরতে হবে, পালানোর আগেই।
কি করে আটকাব? মুসার প্রশ্ন।
ডাকাতির অভিযোগে, সমাধান দিল রবিন। যদি কোনভাবে ওটার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারি ওকে, চোরাই কমিকগুলো খুঁজে বের করতে পারি, তাহলেই হবে।
সন্তুষ্ট হতে পারল না মিরিনা। বলল, অনেকগুলো যদি এসে যাচ্ছে।
কনভেনশনে ফিরে কোলাহল আর লোকের হুড়াহুড়ি যেন জোর একটা ধাক্কা মারল ওদের। আশা করেছিল, সুমাতো কমিকের মতই এখানেও দেখবে ভাঙা মেলা, লোকজন কম, সবাই পোটলাপুঁটলি গোছগাছ করে বাড়ি ফেরার তোরজোর করছে।
দুই রঙা চুলওয়ালা মেয়েটার শোচনীয় অবস্থা। কুলিয়ে উঠতে পারছে না আর বেচারি। একই সাথে দুটো কাজ করতে হচ্ছে। হাতে সিলও মারতে হচ্ছে, দারোয়ানের কাজও করতে হচ্ছে। ফুরসত পেলেই তাকাচ্ছে এদিক ওদিক, নিশ্চয় নরিসকে দেখার আশায়। নরিস যে আর ফিরবে না, জানলেই মুষড়ে পড়বে মেয়েটা, তাই তাকে কিছু বলল না কিশোর।
এবার? কনভেনশন ফ্লোরে ঢুকেই জিজ্ঞেস করল রবিন।
আমাদেরকে দেখে ফেলার আগেই তাকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের, মুসা বলল। গরিলাটাকে পাঠিয়েছে আমাদেরকে বন্দি করার জন্যে। এখন আমাদেরকে ঘুরঘুর করতে দেখলেই সন্দেহ করে বসবে।
ঠিক, একমত হয়ে বলল কিশোর। মরগানকে খুঁজে বের করতে হবে, চোরাই কমিকগুলোও বের করতে হবে।
এই তো, পেলাম, শোনা গেল বাজখাই কণ্ঠ। মোটা শরীর দিয়ে ধাক্কা মেরে ভিড় সরাতে সরাতে এগিয়ে এল ডুফার। খুব উত্তেজিত লাগছে! ব্যাপারটা কি?
খপ করে তার হাত চেপে ধরল হুফার। এড, মরগানকে দেখেছ?
হাসিতে দাঁত বেরিয়ে পড়ল ডুফারের। দাড়ি নেড়ে বলল, ঠিকই আন্দাজ করেছি! খুব উত্তেজনা। হয়েছেটা কি? আবার কিছুতে হাত দিল নাকি?
সে হাসছে, আর কিশোর ভাবছে মরগানের হাতের কথা। ডাকাতির পর পর হাজির হয়েছে লোকটা, লম্বা আঙ্গুলওয়ালা পাতলা হাতজোড়া ডলতে ডলতে। ওই হাতের উল্টো পিঠে সিল ছিল না। কনভেনশন বস হিসেবে তার টিকেট লাগে না।
মরগানের হাত ডাকাতটার হাতের সঙ্গে মিলে যায়, কিশোর বলল, ওর হাতেও কোন সিল নেই। আমার বিশ্বাস, ডাকাতিটা সে-ই করেছে। কিন্তু দুজন লোক তাকে গোল্ড রুমে যেতে দেখেছে, ভাকাতির সময়। ভুরু কোচকাল কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার। ভাবছে।