চাঁপাকলা, না? রাগ প্রকাশ পেল নরিসের কণ্ঠে। চাঁপাকলার গাট্টা খাওনি তো মাথায়, খেলে বুঝতে পারবে!
বাধা দেয়ার জন্যে তৈরি হলো কিশোর। বেশি আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন না? আমি একা নই। আপনারাও তিনজন, আমরাও তিনজন।
আবার হাসল নরিস। বেরিয়ে পড়ল ভাঙা দাঁত, স্নান আলোতেও দেখতে পেল কিশোর। তাতে কোন অসুবিধে নেই। তোমাদের তিনজনকে একাই কাবু করে ফেলতে পারি…
কথা শেষ করল না সে। পেছন থেকে হাতটা সামনে নিয়ে এল। হাতে একটা বেসবল ব্যাট। ব্যাটের মোটা অংশটায় চাপড় দিল বাঁ হাতে।
ভয় পাচ্ছে তার দুই সহকারী। ওরাও হাত সামনে আনল। দুজনের হাতেই একটা করে ব্যাট।
নরিসের ইঙ্গিতে এগিয়ে আসতে লাগল তারাও।
১৬
মুঠো শক্ত করল কিশোর। লড়াই না করে কিছুতেই ধরা দেবে না। হেরে গেলে যাবে, সে পরে দেখা যাবে। কোনমতে নরিসকে কাবু করে ফেলতে পারলেই হলো, বাকি দুজন আর এগোবে না। লেজ তুলে দৌড় দেবে, বোঝাই যায়। নিজের ইচ্ছেয় আসেনি ওরা, নিশ্চয় জোর করে নিয়ে এসেছে নরিস।
তবে বিশালদেহী লোকটাকে কাবু করা অত সহজ নয়। গায়ে যে শুধু মোষের জোর তাই নয়, কি করে ব্যাট ব্যবহার করতে হয়, তা-ও জানে। ধরার কায়দা দেখেই অনুমান করা যায়। এক পা এক পা করে এগোচ্ছে, পেছনে গা ঘেঁষাঘেষি করে আছে তার দুই সহকারী।
সমস্ত দুশ্চিন্তা আর ভয় জোর করে মন থেকে সরিয়ে দিল কিশোর। জুডো ক্লাসে শেখানো হয়েছে এটা করতে। শত্রুর ওপর কড়া নজর, প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছে। ধীরে ধীরে ভারি দম নিতে লাগল।
কাছে আসতে নরিসদের আরও অর্ধেক পথ বাকি, এই সময় সিড়ির মাথায় আরও দুটো মূর্তি চোখে পড়ল কিশোরের। সঙ্গে সঙ্গে ডাক দিল সে, মুসা, এই সামনের লোকটাই তোমাকে ঘুসি মেরেছিল! পুলে ফেলে দিয়েছিল!
হেসে উঠল নরিস। ওসব পুরানো কৌশল অনেক দেখা আছে আমার। আমি তাকাচ্ছি না পেছনে।
ওরা কথা বলছে, এই সুযোগে নিঃশব্দে নেমে চলে এল রবিন আর মুসা। ঝাপিয়ে পড়ল দুই সেলসম্যানের ওপর। একটা লোকের কানের সামান্য নিচে ঘাড়ের ওপর কারাতে কোপ মারল রবিন। টু শব্দ করতে পারল না লোকটা। হাত থেকে ব্যাট খসে পড়ল। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল সে।
অন্য লোকটার ব্যাট ধরা হাতটা চেপে ধরে মুচড়ে পেছনে নিয়ে এল মুসা। হ্যাঁচকা টান দিয়ে ব্যাট কেড়ে নিল বিস্মিত লোকটার হাত থেকে। তারপর সেটা দিয়ে আক্রমণ করল নরিসকে।
বোঝাপড়াটা এই ব্যাটের সঙ্গেই হবে আমার, বলল সে।
চমকটা সামলে নিতে সময় লাগল না নরিসের। চিৎকার করে উঠে ব্যাট তুলল সে, বাড়ি মারল মুসার মাথা সই করে। সেটা ঠেকানোর জন্যে ব্যাট তুলল মুসা। ঠেকালও। তবে ব্যাটটা ধরে রাখতে পারল না, ছুটে গেল। সে যে লোকটার কাছ থেকে ব্যাট কেড়ে নিয়েছিল সে-ও এগিয়ে এল ওকে ধরার জন্যে। রবিন বাধা দিল তাকে।
মুসার দিকে যেই নজর দিয়েছে নরিস, অমনি লাফ দিয়ে আগে বাড়ল কিশোর। তবে টের পেয়ে গেল সেটা বিশালদেহী লোকটা। মুসাকে বাড়ি মেরে তার হাত থেকে ব্যাট ফেলে দিয়েই ঘুরল, সই করার সময় পেল না, কিশোরকে আসতে দেখেই বাড়ি মারল। ঠিকমত লাগাতে পারল না। ব্যাটের মাথা কিশোরের মুখ ছুঁয়ে গেল। তারপর গিয়ে লাগল পুরানো কাঠের রেলিংটাতে। মড়াৎ করে কাঠ ভাঙার আওয়াজ হলো। আরেক কদম এগোল কিশোর। এক হাতে ব্যাট আটকানোর চেষ্টা করতে করতে আরেক হাতে কব্জি চেপে ধরল নরিসের।
কিন্তু ভারি শরীর দিয়ে ধাক্কা মেরে কিশোরকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করল সে। রেলিঙে লেগে ব্যথা পেল কিশোর, উফ করে উঠল। কব্জি থেকে আঙুল ছুটে গেল। রেলিং আঁকড়ে ধরে পতন ঠেকাল।
ব্যাটটা টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে হেসে উঠল নরিস। আবার ঘুরল মুসা আর রবিনকে বাড়ি মারার জন্যে। ওদের চিত করেই ঘুরবে কিশোরকে কাবু করার জন্যে।
ওদেরকে নাগালের মধ্যে না পেয়ে আবার ঘুরল কিশোরের দিকে। কিন্তু ওকে যেখানে আশা করেছিল, সেখানে পেল না। তার পরেও বাড়ি মারল। ব্যাটের নিচ দিয়ে ডাইভ দিল কিশোর। মাথা নিচু করে উড়ে এসে পড়ল নরিসের ওপর। মাথা দিয়ে ভীষণ জোরে গুতো মারল পেটে।
হুঁক করে উঠল লোকটা। সামনের দিকে বাঁকা হয়ে গেল শরীর। দুদিক থেকে তাকে ধরে ফেলল মুসা আর রবিন। সাংঘাতিক জোর লোকটার গায়ে। প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে, তবু দুজনের ধরার সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাড়া দিয়ে মুক্ত করে নিল নিজেকে। শুধু মুক্ত করেই ক্ষান্ত দিল না, পাশে ঘুরে ঘুসি মারল রবিনের ঘাড়ে।
যথেষ্ট হয়েছে, বলেই ঝাপ দিল মুসা। গড়াতে গড়াতে পড়ল নরিসকে নিয়ে। গড়ানো থামল যখন, সে থাকল ওপরে।
কাহিল হয়ে পড়েছে নরিস। তাকে টেনে দাঁড় করাল মুসা। হেসে বলল, তোমার ঘুসিতে দারুণ শক্তি, জানা হয়ে গেছে আমার। এবার দেখ তো, আমারটা কেমন লাগে?
বলেই মেরে বসল।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সেলসম্যানকে কাবু করে ফেলেছে কিশোর। দুজনেই বসে পড়েছে সিড়ির ওপর। হাঁপাচ্ছে পরাজিত কুকুরের মত। মারপিটের বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আর নেই ওদের।
দারুণ, বুঝলে! হাত ঝাড়তে ঝাড়তে কিশোরকে বলল রবিন, শেষ মারটা বড় চমৎকার দিলে। কি মার? জুডো?
মাথা ডলছে কিশোর। ছাই! একজায়গায় ফুলে উঠেছে, সেখানে আঙুলের চাপ দিয়েই উফ করে উঠল। ছাই হোক আর যা-ই হোক, কাজ হয়েছে, নরিসের ওপর প্রতিশোধ নিতে পেরে সন্তুষ্ট হয়েছে মুসা। তোমাদেরকে মারতে এল কেন?