ঢোকা যাবে? ভিড়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন।
যাবে, এদিকে তাকিয়ে বলে উঠল একটা ছেলে, লাল হয়ে গেছে চোখ, ঠেলাঠেলি করার পরিশ্রমেই বোধহয়। কাল ছিল তিরিশ, আজ নিজে কিনেছি, আজ হয়ে গেছে দশ। এখনি সব বিক্রি শেষ হয়ে যাবে।
তারপরেও দাম অনেক বেশি, নিচু গলায় বলল কিশোর। টেপের কথা বলছে ছেলেটা। অন্যান্য জিনিসের দামও কমিয়ে দেয়া হয়েছে জানা গেল। কেন? অবাক লাগছে কিশোরের। হঠাৎ করে কেন এভাবে দাম কমাল?
কারণটা জানার জন্যে এগিয়ে গেল সে। ভিড় ঠেলে ঢোকার চেষ্টা করল। কয়েক মিনিট একটানা মানুষের শরীরের চাপ আর কনুইয়ের গুতো খাবার পর বেরিয়ে আসতে পারল প্রাচীরের অন্যপাশে, কাউন্টারের কাছাকাছি। কমিক আর ভিডিও টেপ বিক্রি করে কুল পাচ্ছে না সেলসম্যানেরা। দাম কমে যাওয়ায় যেন পাগল হয়ে উঠেছে ক্রেতারা। কিনেই চলেছে। সোনালি, শজারুর কাঁটার মত চুলওয়ালা লোকটা জিজ্ঞেস করল কিশোরকে, কি দেব?
ইয়ে…লোরা স্টারগার্ল! প্রথম যে নামটা মনে এল বলে দিল কিশোর।
ভাল জিনিস চেয়েছ। অনেকগুলো আছে আমাদের কাছে, স্পেশাল, এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত। পাঁচ ডলার করে সবগুলোর দাম হয় পঁচিশ, কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসল লোকটা। তবে তোমার জন্যে পনেরো। দশই বাদ, যাও।
টাকা বের করে দেয়া ছাড়া উপায় নেই। দেয়ার সময় লোকটার হাতের দিকে তাকাল। না, এই লোক ক্রিমসন ফ্যান্টম নয়। আঙুলগুলো মোটা মোটা, খাটো, নখের মাথা কামড়ে কেটে ফেলেছে। হাতের উল্টো পিঠে স্পষ্ট ছাপ দেয়া।
টাকাটা নিয়ে আরেক জনের হাতে দিল সোনালি চুল, দাম রেখে বাকিটা ফেরত দেয়ার জন্যে। টাকা গুনছে দ্বিতীয় লোকটা, কিশোর তাকিয়ে রয়েছে তার হাতের দিকে। নাহ, ওর হাতেও ছাপ রয়েছে।
এই যে, নাও, থ্যাংকস, টাকাটা ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল দ্বিতীয় লোকটা। তারপর তাকাল সহকারীদের দিকে। একজনকে ডেকে বলল, ডেড, স্পেশাল কিছু নিয়ে এসো তো।
আরেক প্যাকেট স্টেলারা স্টারগার্ল কমিক বের করল ডেভ। এগুলো? দামটা দেখতে পেল কিশোর। দশ ডলার লেখা রয়েছে।
না, গাধা, এগুলো কি স্পেশাল হলো নাকি? না থাকলে দোকান থেকে নিয়ে এসোগে। আজকেই দরকার।
আবার ভিড় ঠেলে ফিরে চলল কিশোর। ঢুকতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, বেরোতে তার চেয়ে কিছুটা কম হলো। কি কিনে এনেছে সে, দেখেই হাসতে লাগল মিরিনা।
গম্ভীর হয়ে কিশোর বলল, পরে তোমার অটোগ্রাফ নিয়ে নেব এগুলোতে, যখন তুমি বিখ্যাত হয়ে যাবে স্টারগার্ল হিসেবে। এখন অন্য জায়গায় যেতে হবে।
অন্য জায়গায়?
এখানে সব ফালতু জিনিস বিক্রি করছে সুমাতোরা। হাতের প্যাকেটটা দেখাল কিশোর, এসব জঞ্জাল। তবে দোকানে স্পেশাল কিছু রয়েছে। ভাবছি, ওগুলো এতই স্পেশাল কিনা, যা চুরি করে জোগাড়ের দরকার পড়ে?
দেখতে চাও তো? চলো, ভ্যান আছে আমার, ম্যাড ডিকসন বললেন। কিছুক্ষণের জন্যে সেলসম্যানদের ওপর দোকানের ভার দিয়ে যেতে পারব।
আমিও যাব, মিরিনা বলল। সোনালি পোশাকের দিকে তাকাল। তবে এই কাপড়ে…
নাও, নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে দিল হুফার। এটা গায়ে চড়াও। অনেকখানিই ঢাকতে পারবে।
আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে নেমে এল ওরা। হুফার, মিরিনা আর ডিকসন উঠলেন সবুজ ভ্যানে। তিন গোয়েন্দা উঠল মুসার ইমপালায়।
তা সত্যিই জানো তো দোকানটা কোথায়? গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে এলে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
জানি, মুসা বলল। ডিকসন কি বলল শুনলে না? ওয়েস্টার্নের কাছে, হলিউডে। বলল তো দেখতে পাবই। আমিও একবার দেখেছিলাম মনে পড়ে। বের করে ফেলতে পারব।
ঠিকই পারল সে। একবারেই। চার তলা একটা পুরানো বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে সুমাতো কমিকস। সামনের দিকটায় উজ্জ্বল রঙে দোকানটার বিজ্ঞাপন লেখা হয়েছে। আর এঁকেছে প্রচুর ছবি। হলুদ পটভূমিতে ফুটে আছে কমিকের নানা রকম হিরোরা। জাপানী হিরোদের সঙ্গে আমেরিকান সুপারম্যানের লড়াইটা চমৎকার।
হেসে ফেলল রবিন। সুমাতো কমিকস যখন, এর চেয়ে ভাল আর কি দেখাতে পারত?
দুটো গাড়িই পার্ক করে নেমে এল সবাই।
ডিকসন বললেন, কমিক জোগাড় যখন শুরু করেছিলাম, তখন প্রায় সারাটা দিনই এখানে কাটাতাম। সব চেয়ে কম দামে বিক্রি করত এরা।
আর সব চেয়ে কম ভাড়ায় দোকান পাওয়া যেত তখন, পাশের মলিন ঘরগুলোর দিকে তাকাল হুফার।
ওই সময়, কথার পিঠে আবার বললেন ডিকসন, বাড়িটার মাটির তলার দোকানগুলোতে সেকেন্ডহ্যান্ড পেপারব্যাক বই বিক্রি হত। এখন আর দোকান নেই, গুদাম করে ফেলা হয়েছে। আমরা যেটার খোঁজে এসেছি, সেটা ওখানে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সিড়িটা চিনি, কিন্তু নামতে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারি।
হাসল মিরিনা। হুফারের জ্যাকেটটা খুলতে শুরু করল। আমার মনে হয়, ওদের নজর আরেক দিকে সরানোর ব্যবস্থা আমি করতে পারব।
কিভাবে কি করবে দ্রুত একটা ছক ঠিক করে ফেলল কিশোর। কাজ শুরু হলো সেই মত। পরের পাঁচটা মিনিট হুফার, ডিকসন আর কিশোর ঘুরে বেড়াতে লাগল, সাধারণ খরিদ্দারের মত। পাঁচ মিনিট পর পিছু নিল মিরিনা। বাইরে রয়ে গেল মূসা আর রবিন, কোন গন্ডগোল দেখা দিলে সেটা সামলানোর চেষ্টা করবে।
কনভেনশন হলের তুলনায় অর্ধেক বেচাকেনাও এখানে আশা করেনি কিশোর। তবে যা দেখল, সেটাও আশা করেনি। র্যাকে কমিক ঘাটাঘাটি করছে চারজন কাস্টোমার। উদাস, শূন্য দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুজন সেলসম্যান।