হয়তো মনে করতে চান না এটার কথা। আমি শিওর হচ্ছি, তার কারণ, যে লোকটা ওই কপি আমার কাছে বিক্রি করেছে, সে আপনার সই ভালমতই চেনে।
কে লোকটা? জানতে চাইল মুসা।
নীল বোরাম।
চোখে অবিশ্বাস নিয়ে ডিকসনের দিকে তাকাল তিন গোয়েন্দা।
ওই শয়তানটা! ফেটে পড়ল হুফার। তার কপিতে দেব আমি সই!
দিতেই পারেন। একটা সময় তো বন্ধুত্ব ছিল আপনাদের। যখন একসঙ্গে কাজ করতেন, ডিকসন বললেন।
কোন কালেই ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল না, তিক্ত কণ্ঠে বলল হুফার। ওটা একটা ধাড়ি শয়তান, আর আমি ছিলাম অল্পবয়েসী, তার তুলনায় কচি খোকা, যাকে ঠকানোর সুযোগ পেয়েছিল সে। আমাকেই বরং একটা অটোগ্রাফ দিয়েছিল একবার। হিরোয়িক কমিক ছাড়ার পর সেটা পুড়িয়ে ফেলেছি।
তাহলে বইটা পেলেন কোথায় বোরাম? রবিনের প্রশ্ন।
নীল-সোনালি রঙের ঝিলিক তুলে এই সময় সেখানে এসে হাজির হলো মিরিনা।
কিছু মিস করলাম না তো?
না, কিশোর বলল, সময়মতই এসেছ। আলাপটা সবে গরম হলো। নীল বোরামের কথা বলছি আমরা।
ওই হারামজাদার মুখে একটা ঘুসি মারতে পারলে এখন খুশি হতাম আমি! মুঠো তুলে ঝাঁকাল হুফার।
পারলে মারুনগে, আমি আপনাকে আটকাব না, ডিকসন বললেন। লোকটা আপনাকে যদি ঠকিয়েই থাকে, রাগ হবেই। হাজার হোক, আপনারটা ভাঙিয়ে তো আর কম খাচ্ছে না। একটা খবর নিশ্চয় জানেন, পুরানো জনপ্রিয় কমিকগুলো আবার ক্ল্যাসিক হিসেবে ছাপছে হিরোয়িক কমিক।
তার মানে, মুসা বলল। আমরা যেগুলো পড়তাম, সেগুলোই রিপ্রিন্ট করছে?
হ্যাঁ। ক্রিমসন ফ্যান্টম ক্ল্যাসিক খুব চড়া দামে বিক্রি হবে। ব্যাপারটা ডিকসনেরও পছন্দ নয়। এতে আসল বইগুলোর দাম অনেক কমে যাবে। যেগুলো আগে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার কাছে অনেক আছে, যেখানে যা পেয়েছি কিনে ফেলেছি। লস দিতে হবে আমাকে।
বোরামের কাছে ফ্যান ফান বিক্রি করেননি কি এই রাগেই? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ, তিক্ত হাসি ফুটল ডিকসনের ঠোঁটে। অনেক দিন ধরেই কেনার জন্যে আমার পেছনে লেগে ছিল সে। দিইনি।
নীল বোরামের সঙ্গে কথা বলা দরকার, বলল কিশোর। দেখি, তাঁর কি বলার আছে?
হিরোয়িক কমিকের এলাকায় পৌঁছল ওরা। আরেকটা প্রেস কনফারেন্স দিতে তৈরি হচ্ছে কোম্পানি। মিরিনার দিকে তাকিয়ে হাসলেন বোরাম। পেছনে কারা আসছে, দেখেই হাসিটা মুছে গেল মুখ থেকে।
হুফার! জোর করে পাতলা একটা হাসি দিলেন বোরাম। অভিযোগ করতে এসেছ তো আমার নামে? গালাগাল করবে?
না, জবাবটা দিল কিশোর। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি। আপনি যে বইটা কিনতে চেয়েছিলেন ডিকসনের দোকান থেকে, সেটার ব্যাপারে। মনে আছে নিশ্চয়? ফ্যান ফানের কপি। সংগ্রাহকের জিনিস।
কি বলছ বুঝতে পারছি না! টাকের চামড়া লাল হয়ে যাচ্ছে সম্পাদকের। চোখে অস্বস্তি। বার বার তাকাচ্ছেন ডিকসনের দিকে।
ফ্যান ফান নাম্বার ওয়ানের কপিটা, যেটা সেদিন কিনতে চেয়েছিলেন, মনে করিয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলল কিশোর। মিস্টার ডিকসন বললেন, আপনিই নাকি তাঁর কাছে ওটা বিক্রি করেছিলেন।
তাতে কি? সম্পাদকের গালে দুটো লাল রক্তবিন্দু জমল। এটা কোন অভিযোগ নয়। কমিক আমি বিক্রি করেই থাকতে পারি। ওটাই আমার ব্যবসা। কিশোরের দিকে সরাসরি তাকালেন তিনি। নাকি চোর ভাবছ আমাকেই?
আরে না না, কি যে বলেন, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। বোমা যখন ফাটল, তখন আপনি ছিলেন ডুফারের সঙ্গে, গোন্ড রুমের বাইরে। আমরা কেবল জানতে এলাম, কপিটার জন্যে এত আগ্রহ কেন আপনার?
শুনতে চাও? আরও বেশি দামের অফার পেয়েছিলাম আমি কপিটার জন্যে। লাভের এই সুযোগ ছাড়ব কেন? তাই কিনতে গিয়েছিলাম। অন্যায় হয়েছে?
তা হয়নি। মিস্টার ডিকসন যা চাইলেন, তা দিয়েই আনলেন না কেন তাহলে? লাভ তো হতই।
না, হত না। দাম বাড়াতে বাড়াতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, বেচে লাভ হত না। তাই আর কিনিনি।
কে কিনতে চেয়েছিল? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে ভিজিয়ে নিলেন বোরাম।
চাইলেও এখন আর লোকটার কাছে কপিটা বিক্রি করতে পারছেন না, মিস্টার বোরাম, রবিন বলল।
সে পাট ঘুচে গেছে। কাজেই এখন বলতে আর অসুবিধে কি?
সুমাতো কমিক, ফাঁদে আটকা পড়েছেন যেন বোরাম, ভাবভঙ্গিতে সে রকমই লাগছে।
বইটা পেলেন কোথায়? হুফার জানতে চাইল। আমি তো দিইনি।
হাল ছেড়ে দিলেন বোরাম। বুঝলেন, মিথ্যে বলে সুবিধে হবে না আর। বললেন, সুমাতোর কাছ থেকেই নিয়েছিলাম।
কিশোর বলল, মিটার বোরামকে আর বিরক্ত করার দরকার নেই। চলো।
সারি বেঁধে স্টলটার কাছ থেকে সরে এল ওরা সবাই।
ভেরি, ভেরি ইনটারেসটিং, কিশোর বলল, ঘরের ইঁদুরেই বেড়া কেটেছে। একটা কোম্পানি, যে কমিকটা বিক্রি করেছে, হঠাৎ করে তারাই আবার ফেরত চাইছে ওটা। অবশেষে জোড়া লাগতে আরম্ভ করেছে এক এক করে। আর মাত্র কয়েকটা প্রশ্নের জবাব, তাহলেই আমাদের চোরটাকে ধরে ফেলতে পারব। রহস্যময় কণ্ঠে বলল সে। আমি এখন জানি, কোথায় খুঁজতে হবে তাকে।
১৫
দাঁড়াও, কিশোরের হাত ধরে ফেলল মিরিনা। আসলে কোথায় যাচ্ছি আমরা?
যেখান থেকে সমস্ত গোলমালের উৎপত্তি, জবাব দিল কিশোর। সুমাতো কমিকসের খানিক দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেল সে।
ভিড়ের জন্যে কাছে যাওয়ার উপায় নেই। গায়ে গায়ে লেগে যেন মানুষের প্রাচীর তৈরি হয়ে গেছে।