ওকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল মিরিনা। বলল, ফাইট করতে পারো বটে তুমি! কিশোরের হাত ধরে বলল, এসো না, আজ একসঙ্গেই লাঞ্চ খাই? কিশোরের নীরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে বলল সে, তাহলে ওই কথাই রইল। হোটেলের সাইড গেটের কাছে বাগানে তোমার জন্যে অপেক্ষা করব আমি। বিশ মিনিটের মধ্যে।
চলে গেল মিরিনা।
দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে কিশোর বলল, কি করা যায়, বলো তো? ও আমাকে একা যেতে বলল!
কি আবার, রবিন বলল। যাবে। কথা বলার এটাই তো সুযোগ। দেখো না, কিছু বের করতে পারো কি-না।
ঠিক, মুসাও একমত। লাল আলখেল্লার সঙ্গে কোন যোগাযোগ থেকে থাকলে…
বেশ,… বিড়বিড় করে আরও কিছু বলল কিশোর, বুঝতে পারল না অন্য দুজন। রওনা হলো নিজেদের ঘরের দিকে, কমিকগুলো রেখে আসার জন্য।
পোশাক বদলে এল মিরিনা। পরনে শর্ট, গায়ে টি-শার্ট, মাথায় উইগ নেই, বেরিয়ে আছে খাট বাদামি চুল। স্বাভাবিক লাগছে তাকে এই পোশাকে, আরও বেশি সুন্দর।
বাহ্, দারুণ লাগছে তোমাকে, প্রশংসা করল কিশোর। এটাই কি তোমার আসল রূপ?
হাসল মিরিনা। কেন, আরও কিছু আছে ভাবছ নাকি? কিশোরের হাতের ভাঁজে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে সাইডওয়াকের দিকে টেনে নিয়ে চলল সে। পোশাক তো না, পাগলামি! আহ, বাচলাম!
পাশাপাশি হাঁটছে দুজনে।
আবার বলল মিরিনা, কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে। বার্গার আর সালাদ খুব ভাল করে। ওখানে গিয়ে আরামে বসতে পারব আমরা, স্টেলারা স্টারগার্লের ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামাবে না।
প্রচুর আলোবাতাস রয়েছে রেস্টুরেন্টটার ভেতরে। চারদিকে প্রচুর কাচ, ভেতরে অসংখ্য টবে গাছ। ভিড় কম। খাবারের অর্ডার দিল মিরিনা।
খাওয়ার ফাঁকে একসময় তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে পড়ল। মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, তোমরা সত্যিই গোয়েন্দা? অপরাধী খুঁজে বেড়াও?
কিশোর বলল, বহু বছর ধরে একাজ করছি।
আর এর প্রতিষ্ঠাতা হলে গিয়ে তুমি। অন্য দুজন তোমার সহকারী।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কাঁটা চামচের মাথায় গেঁথে তোলা মাংসের টুকরোটা খসে পড়ে গেল পিরিচে। আবার গেঁথে নিয়ে মুখে পুরে চিবাতে লাগল।
দারুণ একটা টিম তোমাদের, মিরিনা বলল। অনেক খোঁজখবর নিয়েছি তোমাদের ব্যাপারে। তুমি হলে দলটার মাথা। তোমার নিগ্রো বন্ধুটির গায়ে জোর বেশি, তাই তাকে দেয়া হয় সাধারণত বিপজ্জনক কাজের ভার। আর আমেরিকান বন্ধুটি বইয়ের পোকা, তাই বই ঘেঁটে তথ্য জোগাড় আর গবেষণার ভার পড়ে তার ওপর। ঠিক বলেছি না?
মাথা ঝাকাল কিশোর। হ্যাঁ, খোঁজখবর সত্যিই নিয়েছ।
তারপর কিছুক্ষণ প্রশ্ন করে গোয়েন্দাগিরির ব্যাপারে নানা কথা জেনে নিল মিরিনা। অবশেষে কাজের কথায় এল কিশোর, ওই অদ্ভুত পোশাক কেন পরো তুমি?
কঠিন প্রশ্ন করলে। চিবিয়ে মুখের খাবারটুকু গিলে নিল মিরিনা। এক ঢোক পানি খেলো। তারপর বলল, কমিক খুব পছন্দ আমার। কিন্তু আম্মা একদম দেখতে পারে না। হাতে দেখলেই বকাবকি করে। শেষে একদিন চোখ পড়ল স্টেলারা স্টারগার্লের ওপর। আমাকে দিয়ে মডেলিং করানর ভাবনাটা তখনই এল মাথায়।
তোমার কেমন লাগে মডেল হতে?
ভাল না। আমার ইচ্ছে কমিক আর্টিস্ট হওয়া।
হাসল কিশোর। স্নাইম ম্যানের ছবি আঁকবে?
আঁকলে ক্ষতি কি? তবে স্টেলারা স্টারগার্লকেই আমার বেশি পছন্দ।
আর কোন প্রশ্ন খুঁজে পেল না কিশোর। খাওয়া শেষ করে উঠল।
হোটেলের পাশের গেট দিয়ে আবার বাগানে ঢুকল দুজনে।
কিশোর বলল, ভাল খাবার খাইয়েছ। ধন্যবাদ।
আবার দেখা হবে, হাত বাড়িয়ে দিল মিরিনা। কাল পর্যন্ত থাকছ তো?
মিরিনার হাতটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। কি যেন ভাবছে। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়াল। বলল, কতদিন থাকব বলতে পারছি না। তবে এ কেসের সমাধান না হওয়াতক আছি, এটা বলতে পারি। চোখ আটকে গেল মিরিনার হাতের দিকে। আরি!
কী? হাতটা টেনে নেয়ার চেষ্টা করল মিরিনা। কিন্তু কিশোর ছাড়ল না। তাকিয়ে রয়েছে হাতের উল্টো পিঠের সিলটার দিকে।
কিশোর, কি হলো?
বিড়বিড় করছে কিশোর, আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল! অনেক আগে!
ডাকাতির কথা বলছ?
আরেক হাতে মিরিনার হাতটা চাপড়ে দিয়ে কিশোর বলল, বলছি, ক্রিমসন ফ্যান্টমের কথা। শোক বম্বগুলো ফেলার সময় লোকটার দুটো হাতই আমি দেখেছি।
তাতে কি?
তাতে? অনেক কিছু। প্রথমেই বলা যায়, লোকটার কোন হাতেই সিল ছিল না।
১৪
মিরিনার হাত ধরে টানতে টানতে দরজার দিকে ছুটল কিশোর। রবিন আর মুসাকে একথা জানানো দরকার।
আহ, ছাড় না! হ্যাঁচকা টান দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল মিরিনা। এই পোশাকে কনভেনশন ফ্লোরে যেতে পারব না আমি। কেউ আমাকে চিনে ফেলতে পারে। আর তাহলে আম্মা আমার…
ছাল ছাড়াবে, কথাটা শেষ করে দিল কিশোর। হাতে সিল না থাকাটা এমন কি জরুরি?
অনেক জরুরি। এতে প্রমাণ হয়, কাজটা করেছে ভেতরের কোন লোক। তুমি, আমি, দোকানদার, যে-ই ঢুকি না কেন, প্রবেশ মূল্য দিতে হয়, হাতে সিল মেরে নিতে হয়। নইলে দরজায় আটকে দেয় দারোয়ান। কিন্তু যে লোকটা বোমা ফেলল তার হাতে সিল না থাকলেও ঢুকতে পারল। কি করে? কেন তাকে আটকাল না দারোয়ান? একটাই কারণ, ও এখানকার লোক।
হুঁ, বুঝলাম, দ্বিধা করছে মিরিনা। লবিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রয়েছে এলিভেটর ব্যাংকের দিকে। দেখ, এই কেসে তোমাদের আমি সাহায্য করতে চাই, যদি সম্ভব হয়। এখন ত আর আমাকে এড়াতে পারবে না, জড়িত হয়ে গেছি। ওপরে গিয়ে পোশাক বদলে আসি। ম্যাড় ডিকসনের দােকানের সামনে থেক, দেখা হবে।