কয়েক মিনিট পরে, হাতের উল্টোপিঠে ইন্টারকমিকন-২ ছাপ মেরে কনভেনশন রুমের ভেতরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ভিড়ের ভেতর দিয়ে পথ করে এগোল।
কোথায় পাওয়া যাবে হুফারকে? মুসার প্রশ্ন।
টেবিলের কাছে গিয়ে দেখি, কিশোর বলল। ওখানে না পেলে দোকানদারদের জিজ্ঞেস করব। কেউ হয়তো বলতে পারবে।
হুফারের সীট খালি।
অনেককেই জিজ্ঞেস করা হলো-দোকানদার, হুফারের ভক্ত, কিন্তু কেউ বলতে পারল না লোকটা কোথায় আছে। এমনকি অন্যান্য আর্টিটেরাও জানে না ও কোথায় আছে। পেন্সিল দিয়ে ওয়াকি উডেন্টের ছবি আঁকছেন একজন বৃদ্ধ আটিস্ট। প্রশ্ন শুনে বললেন, একটু আগে তো ছিল। কোথায় যে গেল…কিছুই বলে যায়নি।
এবার? কিশোরকে জিজ্ঞেস করল রবিন।
এসব ক্ষেত্রে, মাথা চুলকে জবাব দিল কিশোর, হোটেলের রিসিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করলে ফল পাওয়া যায়।
না, মাথা নেড়ে বলল রিসিপশন ক্লার্ক, এখন তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। জরুরি একটা মীটিঙে রয়েছেন।
কখন দেখা করা যাবে, জানতে চাইল কিশোর। বলেছেন কিছু?
হয়তো আজ বিকেলে কোন এক সময়, জানাল রিসিপশনিস্ট।
তার জন্যে কি একটা মেসেজ রেখে যেতে পারব? রিসিপশনিস্ট সম্মতি জানালে তার কাছ থেকেই কাগজ আর কলম নিয়ে নোট লিখে ভাঁজ করে, সেটা দিয়ে বলল, মুখে বলবেন, আমরা তার সঙ্গে ম্যাড ডিকসনের স্টলে দেখা করব।
হুঁ, মাথা দুলিয়ে মুসা বলল, এখন আমরা জানি, বিকেলটা কোথায় কাটাতে হবে।
আবার কনভেনশন হলে ফিরে চলল ওরা। ওদেরকে দেখে অস্বস্তি ফুটল ডিকসনের চোখে। মেয়েটা এল না?
কথা বলিনি এখনও। কোথায় গিয়েছিল, জানাল কিশোর। ডিকসনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ভাববেন না, ব্যবস্থা একটা হবেই।
এই সময় একটা ছেলেকে আসতে দেখা গেল। বিরাট একটা বাক্স হাতে, কিশোর যে বাক্সটা এনেছিল, তার চেয়ে অন্তত তিন গুণ বড়। ভারের চোটে বাঁকা হয়ে গেছে ছেলেটা, হাঁটতে পারছে না ঠিকমত। ওদেরকে বললেন ডিকসন, আমার ব্যবসা আসছে মনে হয়।
টেবিলের সামনে এসে বাক্সটা মেঝেতে নামিয়ে রাখল ছেলেটা। চোখে সন্দেহ নিয়ে তাকাল ডিকসনের দিকে। টেবিলে হেলান দিয়ে মৃদু হাঁপাতে লাগল ছেলেটা। স্লাইম ম্যান নম্বর ওয়ান আছে? দ্য আউরেজিয়াস ওজনের নম্বর ওয়ান এবং নম্বর টু পেয়ে গেছি। স্নাইম ম্যানটা দরকার।
মাথা ঝাকালেন ডিকসন, আছে।
পেছনের র্যাক থেকে স্নাইম ম্যানের একটা কপি নামাতে গেলেন তিনি। ছেলেটা বাক্সটা তুলে ধপাস করে ফেলল টেবিলের ওপর। এ কমিকটা ছেলেটার হাতে দিতে গিয়েই চিৎকার করে উঠলেন ডিকসন, ধর, ধর! তবে কিছু করার আগেই পড়ে গেল কোলপসিবল টেবিলটা।
দূর, কাণ্ডটা কি করলাম! দাঁড়ান, আমি ঠিক করে দিচ্ছি, বলে হাঁটু গেড়ে বসে বই তুলতে শুরু করল ছেলেটা।
ডিকসন আর তার সহকারী মিলে আবার টেবিলটা খাড়া করতে লাগলেন।
জমাতে জমাতে এক জায়গায় কমিকের স্তূপ করে ফেলল ছেলেটা। তারপর নিজের বাক্সটা ঠেলে সরাতে গেল।
পা দিয়ে আটকালেন ডিকসন। এক মিনিট। বলেই বাক্সের ডালা ফাঁক করে ভেতর থেকে বের করে আনলেন একটা স্লইম ম্যানের কপি। এটা আমার। ওখানে গেল কি করে? ছেলেটার মুখের কাছে বইটা নাড়তে নাড়তে বললেন, এবার ছেড়ে দিলাম, যাও। আর যদি এদিকে দেখি ঠ্যাঙ ভেঙে দেব।
বিরাট বোঝাটা তুলে নিয়ে দ্রুত সরে পড়ল ছেলেটা, বোঝার তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি গেল।
সেদিকে তাকিয়ে আনমনে বিড়বিড় করে বললেন ডিকসন, ভাল করে দেখা উচিত ছিল। আমার আরও বই নিয়ে গেছে কি-না কে জানে! এই জন্যেই, বুঝলে, তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে বললেন, দামি জিসিনগুলো পেছনে সরিয়ে রাখি, হাতের কাছ থেকে দূরে। চোরের অভাব নেই। তিক্ত হাসি হাসলেন। একটা চোরকেও কিছু না বলে ছেড়ে দিলাম। অথচ আমাকেই চোর ভাবে ডুফার, গলাকাটা ডাকাত ভাবে!
এডগার ডুফারের নাম শুনে ঝট করে একটা কথা মনে পড়ে গেল কিশোরের। লোকটার ওপর থেকে সন্দেহ দূর হয়ে গেল তার। টেবিলটা পড়ে যাওয়া থেকেই বুঝেছে। লাল আলখেল্লার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে আসতে পারলেও বিশাল বপু নিয়ে ওই টেবিল ডিঙিয়ে যেতে পারবে না সে কোনমতেই। তাহলে অবশ্যই ধসে পড়ত টেবিলটা। তাহলে কে কাজটা করল? মিসেস জরডান?
অ্যাই যে, তোমরা এখানে।
ফিরে তাকাল কিশোর। হাতে একগাদা কমিক বুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিরিনা। বলল, এখানেই পাব জানতাম। ভাবলাম, ফেরত দিয়েই যাই।
থ্যাংকস। মিরিনার হাত থেকে কমিকগুলো নিল কিশোর। সাক্ষাৎকার কেমন হলো?
ভাল। আম্মা বলল, এতদিনে নাকি আমি কিছু শিখতে পেরেছি। সাংবাদিকদেরকে অপেক্ষা করিয়ে রেখে ভাল করেছি। এরকমই নাকি করতে হয়, তাতে দাম বাড়ে। আমার দেরি হওয়ার আসল কারণটা যদি জানত… ডিকসনের ওপর চোখ পড়তে থেমে গেল সে।
কমিক গোছাচ্ছেন ডিকসন। হাত কাঁপছে। তাকাতে পারছেন না মিরিনার দিকে। হঠাৎ কেন কথা থামিয়ে দিয়েছে বুঝতে অসুবিধে হয়নি। বললেন, মিরিনা, আমি দুঃখিত, সত্যিই দুঃখিত! বড় অন্যায় করে ফেলেছি!
নরম হয়ে গেল মিরিনা। না না, আমি কিছু মনে করছি না! ভুল হয়েই যায় মানুষের। কিশোরের দিকে তাকাল সে। কিশোর, তোমাকে ধন্যবাদ দেয়া হয়নি তখন। সাংঘাতিক ছেলে তুমি, বাব্বাহ! বলে ওর হাত চাপড়ে দিল সে।
লাল হয়ে গেল কিশোর। এরকম খোলাখুলি প্রশংসায় লজ্জা পায় সে তার ওপর করেছে একটা মেয়ে। ঢোক গিলে বলল, ও কিছু না…আমি…আমরা… চুপ হয়ে গেল সে। দেখল, ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে রবিন আর মুসা। মেয়েদের ব্যাপারে কিশোরের অস্বস্তির কথাটা জানা আছে ওদের।