উদভ্রান্ত দৃষ্টি ফুটল ম্যাডের চোখে। পাগলই হয়ে যাচ্ছেন যেন। অনুনয়ের সুরে কিশোরকে বললেন, চুরি করে কমিকগুলো নিয়ে গিয়ে মাথা খারাপ করে দিল আমার লোকটা। তোমরাও সুবিধে করতে পারলে না। বের করতে পারলে না ওগুলো। তখন আমিই খুঁজতে শুরু করলাম। কাল রাতে তোমাদের ঘরে সেজন্যেই ঢুকেছিলাম।
কিন্তু আমাদের ঘরে কেন ঢুকলেন? মুসার প্রশ্ন।
তোমরা যে আছ ওখানে, তা-ই জানতাম না। শুধু জানি, ওটা দিয়ে তিনশো চোদ্দ নম্বরে ঢোকা যায়, তাই ঢুকেছিলাম…
লুই মরগানের ঘরে ঢোকার জন্যে? ভুরু তুলল রবিন।
লুই মরগান! নিজের কপালে চাপড় মারল কিশোর। আজ সকালে ভিডিও টেপের বাক্স নিয়ে বেরোতে দেখলাম একটা লোককে, তার ঘর থেকে। তখনই মনে পড়া উচিত ছিল আমার, কোথায় দেখেছি লোকটাকে। সুমাতো কমিকের স্টলে গরম গরম কার্টুনের ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি করছিল।
ডিকসনের দিকে তাকাল সে। কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছেন ম্যাড, যেন বুঝতে পেরেছেন জ্যান্ত পোড়ানো হবে না আর তাকে, রেহাই পেয়ে গেছেন।
মরগানের সঙ্গে সুমাতো কমিকের সম্পর্ক কি, বলুন তো? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
জায়গাটার মালিক সে, জবাব দিলেন ডিকসন। কেন, তুমি জানো না? এজন্যেই তো কনভেনশনটা করতে পেরেছে এখানে। বহুদিন ধরে কমিকের ব্যবসা করে আসছে লোকটা।
কমিকের ব্যবসা, আমনে বিড়বিড় করল কিশোর। কয়েকটা ছিন্ন সুতো জোড়া দেয়ার চেষ্টা চালাল মনে মনে। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেছে, ম্যাড ডিকসন চুরিটা করেননি।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। একজন সন্দেহভাজন কমল। তবে রহস্য যেখানে ছিল, মোটামুটি সেখানেই রয়ে গেছে। সমাধান হয়নি।
আরেকটা প্রশ্ন করা দরকার ডিকসনকে। ফ্যান ফানের একটা কপি চুরি যাওয়ার পর আরেকটা যেটা এনে রাখা হল তার জায়গায়, সেটাতে প্রাইস ট্যাগ দেখলাম দুশো পঞ্চাশ ডলার। অথচ যেটা চুরি গেছে সেটা যখন কিনতে এলেন নীল বোরাম, দাম চাইলেন ছশো ডলার, এবং তাতেই তিনি কিনতে রাজি হয়ে গেলেন। কেন? ওটার এত বেশি দাম হওয়ার কারণ কি?
কালো ছায়া নামল ম্যাড ডিকসনের মুখে। ওটাতে আইজাক হুফারের সই ছিল। আসল আইজাক হুফার। সংগ্রাহকের জিনিস। কারও পছন্দ হলে যত দাম হকতাম, তত দিয়েই কিনে নিত।
১৩
অটোগ্রাফ দেয়া? কিশোর বলল, আমি কমিক সংগ্রহ করি না, তার পরেও আমি জানি আইজাক হুফার কোন ক্রিমসন ফ্যান্টম বইতে সই করেনি। এডগার ডুফার আমাকে সমস্ত গল্প বলেছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, হুফার সই করেনি।
তুমি ঠিকই বলেছ, ডিকসন বললেন। গোঁফের নিচে দেখা দিল এক চিলতে হাসি। তবে সে যাতে সই করেছে, তাতে ছিল ফ্যান ফান আর গ্রে ফ্যান্টম। ক্রিমসন ফ্যান্টমের অনেক আগে আঁকা হয়েছিল ওই কমিক। আমার মনে হয়, বোরামের সঙ্গে গন্ডগোলের আগে ওই অটোগ্রাফ দিয়েছিল হুফার। হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল হাসিটা। চুরি করে নিয়ে গেল শয়তান চোরটা।
চিন্তিত ভঙ্গিতে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার কিশোর। হুফারকে ওটা দেখানোর সুযোগই আপনি পাননি, তাই না?
মাথা নাড়ল ডিকসন। বইটা চুরি হওয়ার আগে দেখাই হয়নি ওর সঙ্গে আমার। আর যখন হলো, তখনও তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম না। বরং জড়িয়ে গেলাম ডুফারের সঙ্গে।
কেশে গলা পরিষ্কার করলেন ডিকসন। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তো, আমাকে নিয়ে কি করবে?
কাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করছেন তো? কিশোর বলল, ওই যে, যে সব ছোটখাট শয়তানিগুলো করলেনঃ জোর করে লোকের ঘরে ঢোকা, মারধর করা, গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা, এসব?
হ্যাঁ, ঘামতে শুরু করেছেন ডিকসন। ওগুলোর কথাই বলছি।
শ্রাগ করল কিশোর। আমরা অভিযোগ করব না। আপনি হেডলাইটটা ঠিক করে নিন। থানায় গিয়ে বড়জোর একটা এন্ট্রি করিয়ে নিতে পারেন, বাড়ি লেগে ওটা ভেঙেছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ডিকসন।
কিন্তু রবিন আবার চিন্তায় ফেলে দিল তাঁকে। বলল, তবে মিরিনা যদি পুলিশকে রিপোর্ট করে, বিপদে পড়বেন। আমাদের না জানিয়ে হয়তো যাবে না। কিন্তু যদি যায়, কি বলবেন পুলিশকে, ভেবে ঠিক করে রাখবেন।
কিশোর আশা করল, পুলিশের কাছে না যাওয়ার জন্যে বোঝাতে পারবে মিরিনাকে। তবে সেকথা বলল না ডিকসনকে।
শুকনো হাসি হাসলেন কমিক বিক্রেতা। দেখা যাক, কি হয়। আমি স্টলে যাচ্ছি। প্রয়োজন পড়লে ওখানে দেখা কোরো আমার সঙ্গে। পারলে মিরিনাকেও নিয়ে এসো। সব কথা তাকে বুঝিয়ে বলে মাপটাপ চেয়ে নেব, যাতে পুলিশের কাছে না যায়।
সেটাই করবেন, মুসা বলল। এলিভেটরের বোতাম টিপে দিয়ে কিশোরকে জিজ্ঞেস করল, এরপর কি করছি আমরা?
চলো, হুফারকে খুঁজি। অটোগ্রাফের ব্যাপারটা আলোচনা করা দরকার।
লবিতে উঠে এল ওরা। মেইন কনফারেন্স রুমের দিকে চলল। প্রবেশ পথের কাছে, টেবিলের সামনে কমিক ক্রেতাদের ছোট একটা লাইন। ওদের হাতে সিল মেরে দিচ্ছে দুই রঙা চুলওয়ালা মেয়েটা।
দ্রুত স্টলের দিকে চলে গেলেন ডিকসন। তিন গোয়েন্দা গেট পেরোতে যেতেই ওদেরকে আটকাল বিশালদেহী সেই দারোয়ান। সরি। হবে না।
হাতের ছাপ দেখাল কিশোর।
এটা তো কালকের, দারোয়ান বলল। মুছে গেছে। যাই হোক, চেষ্টাটা ভালই করেছিলে। পারলে না আরকি। আমাকে ফাঁকি দেয়া অত সোজা না।
মানি ব্যাগের জন্যে পকেটে হাত ঢোকাল কিশোর। দেখুন, টিকেটের পয়সা মারার কোন ইচ্ছেই আমাদের নেই। জানতাম না। আমরা মনে করেছিলাম, একদিন টিকেট করে নিলেই হবে।