একমত হয়ে মুসাও মাথা ঝাঁকাল। হ্যাঁ। এবং এটাই চেয়েছিলেন ম্যাড। তৈরি থেকেছেন ওদের জন্যে। কাল আরও কত বই আনিয়েছেন, মনে আছে? ভ্রূকুটি করল সে। কিন্তু ডাকাতির সময় স্টলেই ছিলেন। তিনি ক্রিমসন ফ্যান্টম নন।
না। কিন্তু তাঁর সহকারী থাকতে বাধা কোথায়? কাজ শেষ করে লোকটাকে দ্রুত সরে পড়তে বলে রেখেছেন।
হ্যাঁ, এইবার মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে, মাথা দোলাল মুসা। আর একটা প্রশ্ন। কোন্ লোকটাকে সহকারী বলে মনে হয় তোমার?
রবিন বলল, জেনেই যখন ফেলেছি, আর তাঁকে ব্যবসার সুযোগ দেব কেন? দুষ্ট হাসি ফুটল তার মুখে। চলো, তার ঘাম ছুটিয়ে দিই। হারিয়ে যাওয়া কমিকগুলো রহস্যময় ভাবে আবার আমাদের হাতে চলে এসেছে, সেটা জানলে ভিড়মি খেয়ে পড়বেন পাগল সাহেব।
হাসল কিশোর। কথাটা মন্দ বলোনি। তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখেই অনুমান করতে পারব, কাজটা তিনিই করেছেন কি-না। আবার চোরের সন্ধানে বেরোতে হবে কি না আমাদেরকে। হোটেলের ঘর থেকে কমিকগুলো নিয়ে কনভেনশন ফ্লোরেই চলে যাব, চলো।
হোটেলে পৌছে নিজেদের ঘরে চলল ওরা। এই বার ৩১৪ নম্বর ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লুই মরগান স্বয়ং বেরিয়ে এলেন। এই যে, তোমাদেরই খুঁজছিলাম! কথাটা কি সত্যি? মিরিনা জরডান নাকি চোরাই কমিকগুলো খুঁজে পেয়েছে?
সবগুলো নয়, কিছু, মরগানের কথায় হাসি চেপে রাখতে পারছে না কিশোর, কেবল আমাদেরগুলো। তাহলে যা আন্দাজ করেছিল, তা-ই ঠিক। মিসেস জরডান এভাবে বিজ্ঞাপনই করতে চেয়েছিলেন।
কিশোরের মনের কথা পড়তে পেরেই যেন মরগান বললেন, মিরিনার মা কিছুই বলছে না। তবে তার মেয়ের বিজ্ঞাপন হয়ে গেল ভালমত। যা-ই হোক, তোমাদের খুঁজছিল মহিলা। কমিকগুলোর জন্যে, ওগুলো হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবে মিরিনা।
নাক ঘোঁত ঘোঁত করলেন তিনি। খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকজন সাংবাদিক হাজির হয়ে গেছে। মিসেস জরডানের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে গন উইথ দ্য উইন্ডের মত আরেকটা ছবি তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি।
লোকের ভিড় জমে যাবে তো হোটেলে! কিশোর বলল। মিরিনাকে দেখার জন্যে…
এটাই চেয়েছেন মহিলা। কি করে কাজটা করলেন তিনি, জানি না, ম্যানেজারকে রাজি করিয়ে ফেলেছেন। তার মেয়ের জন্যে আলাদা এলিভেটরের ব্যবস্থা হয়েছে, সাথে থাকবে ইউনিফর্ম পরা আর্দালি।
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন তিনি, ভাব একবার অবস্থাটা! এই হোটেলে ঢুকেছিল স্টারগার্লের সাধারণ মডেল হয়ে, ফেরত যাবে রীতিমত স্টার হয়ে।
এই সময় দেখা গেল মিরিনাকে। এলিভেটরের দিকে চলেছে। পরনে আবার সেই স্টেলারা স্টারগার্লের পোশাক। কিশোরের ওপর চোখ পড়তে অস্বস্তি ভরা হাসি হাসল। বুঝতে পারল কিশোর, মঞ্চ-ভীতিতে ধরেছে মেয়েটাকে। আরেকটা ব্যাপার, মিরিনা একা।
আমার মনে হয়, ব্যাপারটা মরগানও লক্ষ্য করেছেন, আগেই নিচে চলে গেছেন মিসেস জরডান। রিপোর্টারদের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছেন। একটা বিষয়ে অন্তত শিওর হলাম, আগাগোড়া মিথ্যে বলেননি মহিলা।
ঘরে ফিরে গেলেন মরগান।
অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর। ভাবছে। ঘটনাটা কি? এরকম করলেন কেন কনভেনশন চীফ? এটা তো তার সম্মেলনের জন্যেও একটা বিরাট বিজ্ঞাপন।
মিরিনাকে কমিকগুলো দেয়া যায়, কি বল? দুই সহকারীর মতামত জানতে চাইল কিশোর।
শ্রাগ করল শুধু মুসা। রবিন বলল, অসুবিধে নেই।
ঘরে ঢুকল ওরা। কমিকগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে রওনা দিল এলিভেটরের দিকে।
ব্যক্তিগত এলিভেটরের সামনে তখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে মিরিনা। নিঃসঙ্গ। পরনে নীল আলখেল্লাটা শেষ বারের মত টেনেটুনে ঠিক করল। এলিভেটরের দরজার দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকাল, যেন আলিবাবার ডাকাতের পাহাড়ের দরজা খুলতে যাচ্ছে। ভেতরে গিয়ে ধনরত্নও পেতে পারে, আবার ডাকাতের তলোয়ারে মুন্ডও কাটা যেতে পারে।
ওর কাছ থেকে দশ ফুট দূরে রয়েছে কিশোর, এই সময় এলিভেটর এল।
মিরিনা, ডাকল কিশোর। মেয়েটা ফিরে তাকাতেই হাতের কমিকগুলো তুলে দেখাল।
কিশোরকে দেখে খুশি হলো মিরিনা। একা যেতে ভয় করছিল যেন। পরিচিত একটা মুখ দেখে সাহস পেল।
এবং এদিকে তাকিয়ে ছিল বলেই এলিভেটরের গোলমালটা চোখে পড়ল না তার। দরজা খুলে গেছে। ভেতরে উজ্জ্বল আলো থাকার কথা। অথচ আলোই নেই। অন্ধকার।
বেরিয়ে এল একটা হাত। আর্দালির নয়। ধরে, এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল মিরিনাকে।
১২
এলিভেটরের দিকে ছুটে গেল কিশোর। পেছনে রবিন আর মুসা। ওরা এসে পৌঁছতে পৌঁছতে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। মাঝপথে আটকে গেল মিরিনার চিৎকার।
হাতে কমিকগুলো ধরাই রয়েছে। পাই করে ঘুরল কিশোর। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে মুখ। দুই সহকারীকে বলল, এসো!
ঘোরানো লোহার সিঁড়িটার দিকে দৌড় দিল সে। আগের রাতে এটা দিয়েই পালিয়েছিল ওদের ঘরের চোর। এক টানে দরজা খুলেই ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। একেক লাফে দুতিনটে করে ধাপ পেরিয়ে নামতে লাগল।
তার সাথে পাল্লা দিতে মুসার অসুবিধে হল না, তবে রবিন পেরে উঠল না। পিছিয়ে পড়তে লাগল।
পা ব্যথা শুরু হয়েছে কিশোরের। মাংসপেশীতে খিচ ধরছে এভাবে নামতে গিয়ে। কেয়ার করছে না। তার এক চিন্তা, মিরিনাকে ধরতে পারবে তো? নামতে পারবে এলিভেটরের আগে?
অসম্ভবই মনে হলো। তবু হাল ছাড়ল না। গতি কমাল না। নেমে চলল একই ভাবে।