খাইছে! বিছানায় উঠে বসতে বসতে বলল মুসা, কোথায় পেলে?
পানির কাছে। খুলে বলতে যাচ্ছিল কিশোর, তার আগেই ফোন বাজল।
জ্বালাল! গিয়ে রিসিভার তুলল মুসা। কানে ঠেকিয়ে শুনে ভুরু উচু হয়ে গেল। রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার আব্বা।
উঠে এসে রিসিভার নিয়ে কানে ঠেকাল রবিন। বাবা, কি ব্যাপারও, তাই নাকি?..আচ্ছা, দেখি… রিসিভার নামিয়ে রেখে বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল, মিস্টার বার্টলেট লজ। ভ্যান নুইজে একটা ব্যান্ড পার্টি হবে, একটা ক্যাসেট পাঠাবেন, সেজন্যেই বাড়িতে ফোন করেছিলেন আমাকে। যেতে হবে।
দিয়ে আসতে হবে নাকি আমাকে? মূসার প্রশ্ন।
যদি দয়া করো, হেসে বলল রবিন।
আমিও আসছি তোমাদের সঙ্গে, কিশোর বলল। যেতে যেতে বলব সব।
আচ্ছা। আবার রিসিভার তুলে ডায়াল শুরু করল রবিন। মিস্টার লজকে ফোন করে বলল, এক ঘণ্টার মধ্যেই আসছে সে।
কয়েক মিনিটেই তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরোল তিনজনে। নিচে নামার জন্যে রওনা হলো এলিভেটরের দিকে। ৩১৪ নম্বর ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দরজা খুলে গেল। বেরিয়ে এল একজন লোক। শজারুর কাঁটার মত খাড়া খাড়া চুল। হাতে কার্ডবোর্ডের একটা বড় বাক্স। কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে ভেতরে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা, চলি। নিচে নিয়ে যাচ্ছি এগুলো।
লোকটা ওদের পেছনে পড়ে গেল। এলিভেটর এল। উঠে পড়ল তিন গোয়েন্দা। ডেকে বলল লোকটা, অ্যাই, দাঁড়াও, চলে যেও না।
ওপেন লেখা বোতামটা টিপে দিল মুসা।
ভেতরে ঢুকল লোকটা। থ্যাংকস। এই জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। বাপরে বাপ, পাথর!
বাক্সটা পিছলে গেল। খসে পড়ে যাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলল কিশোর। এই সুযোগে ভেতরে তাকানোর সুযোগ হয়ে গেল। ভিডিও টেপে বোঝাই।
আরেকবার ধন্যবাদ দিল লোকটা। জিজ্ঞেস করল, লবিটা একটু টিপবে, প্লীজ?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। টিপে দিল বোতামটা।
লবিতে এলিভেটর থামতেই আর যাতে পিছলাতে না পারে এমন ভাবে বাক্সটা শক্ত করে ধরে বেরিয়ে গেল লোকটা। তিন গোয়েন্দা রয়ে গেল। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে নামবে ওরা।
বেলা বেশি হয়নি। রাস্তায় যানবাহনের ভিড় কম। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে এল ওরা রকি বীচে বার্টলেট লজের অফিসে। বাড়িতেই অফিস করেছেন তিনি। ওরা থামতে না থামতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন ট্যালেন্ট এজেন্ট, পরনে ফুটবল খেলোয়াড়ের জারসি, চোখে সানগ্লাস। ব্যায়াম করতে যাচ্ছিলেন। রবিনকে দেখে বললেন, এসেছ। এক মিনিট। আসছি। আবার ভেতরে চলে গেলেন তিনি। বেরিয়ে এলেন ছোট একটা প্যাকেট নিয়ে। সেটা রবিনের হাতে দিয়ে বললেন, ঘুম থেকে জাগিয়েছে আমাকে ক্লাবের মালিক। এটা চায়। দিয়ে আসতে পারবে? হাই তুললেন তিনি। বলো, সারা রাতে কাজ করে এত সকালে ওঠা যায়? ব্যবসাটাই নিশাচরদের।
যেন তার হাইয়ের জবাবেই হাই তুলল মুসা। রবিনও। দেখে হেসে ফেললেন তিনি। বাহ্, তোমাদেরও দেখি একই অবস্থা! জেগে ছিলে নাকি সারারাত? জবাবের অপেক্ষা না করেই রবিনকে বললেন, প্যাকেটের গায়ে ঠিকানা আছে। যেতে বেশিক্ষণ লাগবে না। কিছু মনে করে না। আর কাউকে…
বাধা দিয়ে মুসা বলল, না না, ঠিক আছে।
প্যাকেটে গানের টেপ রয়েছে, ক্লাবের মালিকের দরকার। পৌছে দিতে বেশিক্ষণ লাগল না ওদের। স্যান ডিয়েগো ফ্রিওয়ে ধরে আবার লজ অ্যাঞ্জেলেসে ফেরার সময় ট্রাফিকের ভিড় দেখতে পেল।
ফ্রিওয়ে থেকে সরে এল মুসা। বিকল্প রাস্তা হিসেবে বেছে নিল সেপুলভেড়া বুলভারকে। সান্তা মনিকার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আবার রাস্তা বদল করে পিকো ধরে চলল সে।
কি হলো? জিজ্ঞেস করল রবিন, যাচ্ছ নাকি কোথাও?
এলামই যখন, জবাব দিল মুসা। আরেকবার ম্যাড ডিকসনের দোকানটা ঘুরে যেতে চাই। কাল রাতের একটা ব্যাপার খচখচ করছে মনের মধ্যে।
পুরানো একটা সবুজ ভ্যানের কাছে এসে গাড়ি রাখল সে। সেই গাড়িটাই, আগের দিন যেটাতে করে কমিক নিয়ে গিয়েছিলেন ডিকসন।
কাল রাতে একটা ভ্যান আরেকটু হলেই চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল আমাদেরকে, নিজেকেই যেন বলছে মুসা। আমার কাছে তখন অন্য রকম রঙ লেগেছে। কিন্তু কিশোর বলল সবুজ, তাই একবার দেখতে এলাম।
লস অ্যাঞ্জেলেসে সবুজ ভ্যান অনেক আছে, কিশোর বলল।
কিন্তু একটা সূত্র আছে আমাদের হাতে। গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে গাড়ির সামনের দিকে চলে গেল মুসা। ফিরে এল একবার দেখেই। গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল, আমাদের সাইক্লপসকে পেয়েছি। একটা হেডলাইট ভাঙা।
বাকি পথটা আলোচনা করল ওরা ব্যাপারটা নিয়ে।
তার মানে, রবিন বলল, কাল রাতে আমাদের ঘরে ঢুকেছিলেন ডিকসনই। কেন? আমরা তো তাঁর হয়েই কাজ করছি, তাই না? তিনি আমাদের মক্কেল।
হতে পারে, কিশোর বলল, আমাদেরকে একটা কভার হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি।
ঝট করে তার দিকে ফিরল রবিন। তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে দৃষ্টি। তুমি বলতে চাইছ, তিনিই কমিকগুলো চুরি করেছেন, আমাদের বোকা বানিয়েছেন, কাজে লাগিয়ে দিয়ে সবাইকে দেখাতে চেয়েছেন তিনি নিরপরাধ। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে! মাথা ঝাঁকাল সে। চমৎকার একটা মোটিভও রয়েছে তার। বিজ্ঞাপন।
ডিকসনের স্টলের ডাকাতির কথা কনভেনশনে আসা প্রতিটি মানুষ শুনেছে, কিশোর বলল। বাজি রেখে বলতে পারি, সবাই ওরা স্টলে গিয়েছে দেখার জন্য।