চিরুনি বের করল মিরিনা। চুলে চালাতে চালাতে বলল, ব্যাগটা আমার, স্বীকার করছি। তবে ভেতরের জিনিসগুলোর খবর জানি না। কসম খেয়ে বলছি, কমিকগুলো আমি ঢোকাইনি।
আজ সকালে কারও সাথে দেখা হয়েছিল, এখানে আসার আগে? কিংবা ব্যাগটা কোথাও রেখে গিয়েছিলে?
মাথা নাড়ল মিরিনা। না। দেখা যাতে না হয় সেটাই চাইছিলাম। সাবধান ছিলাম। আমি চাইনি কেউ, আমাকে চিনে ফেলুক। ঘর থেকে বেরোনোর পর সারাক্ষণই আমার সঙ্গে ছিল ওটা। একটু থেমে বলল, একটা সময় বাদে। যখন আমি পানিতে ছিলাম।
হ্যাঁ, মাথা দোলাল কিশোর। যে কেউ চুরি করে কমিকগুলো মিরিনার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে পারে। এটা এমন কোন কঠিন কাজ না। যেন দেখতে পাবে লোকটাকে, এমন ভঙ্গিতে পুলের চারপাশে নজর বোলাল সে। কেউ নেই। এমনকি লাইফগার্ডও না।
পানিতে মিরিনার তো বটেই, কিশোরেরও নজর ছিল না এদিকে। সে-ও ওর সঙ্গে সাঁতরাচ্ছিল। ওই সুযোগে যে কেউ এসে ওগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে যেতে পারে ওদের অলক্ষ্যে, এতটাই মগ্ন হয়ে ছিল ওরা। হয়ত তা-ই করেছে লোকটা।
মিরিনার কথায় চমক ভাঙল কিশোরের, তুমি নিশ্চয় এগুলো ফেরত চাও। কমিকগুলো কিশোরের দিকে তুলে ধরল মেয়েটা। জিনিসগুলো তোমার। কিন্তু আমার ব্যাগে রাখল কে?
বিস্মিত ভাবটা কেটে গিয়ে হাসি ফুটল মিরিনার মুখে। ওই পচা স্পাই স্টোরিগুলোর মত ঘটনা। যাকে ফাঁসাতে চায় তার অজান্তে শত্রুপক্ষের লোক এসে বেআইনী জিনিস ঢুকিয়ে রেখে যায়। পুলিশ এসে ধরে তখন লোকটাকে এবং ভুলটা করে।
মিরিনার তোয়ালেটা চেয়ে নিল কিশোর। গা মুছতে লাগল। ভাবছে, আসলেই কি এই ব্যাপার ঘটেছে? মিরিনাকে ফাঁসার জন্যেই একাজ করেছে কেউ?
কমিকগুলো হাতে নিয়ে এক এক করে দেখতে লাগল সে। হুঁ, এগুলোই চুরি হয়েছিল। হতে পারে, অন্যের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে এগুলো সরিয়ে দিতে চেয়েছে চোরটা। হয়তো তার কাজে লাগবে না, কিংবা বিক্রি করার সাহস করতে পারেনি। কিন্তু সরানর জন্যে তোমাকে বেছে নিল কেন?
জবাব দিতে পারল না মিরিনা।
হঠাৎ মনে পড়ল কথাটা। মিরিনার মা! সাংঘাতিক চালাক মহিলা। বিজ্ঞাপনের জাদুকর বলা চলে। বর্ন পাবলিসিটি হাউন্ড। মিরিনার কাছে চোরাই কমিক পাওয়া গেছে, মেয়ের জন্যে এর চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন আর কি হতে পারে?
সেটা করার জন্যেই হয়তো কমিকগুলো চুরি করেছেন মিসেস জর্ডান। নিজেও করে থাকতে পারেন।
মিরিনার দিকে তাকাল কিশোর। ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে। নিস্পাপ চাহনী। নাহ্, ওই মেয়ে একাজ করেনি। যা বলছে সত্যিই বলছে। মিরিনা আর লাল আলখেল্লাকে একসাথে দেখেছে ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে। মিসেস জরডান কি ছিলেন তখন ওখানে? থাকলেও হয়ত মেয়ের অলক্ষ্যে। তাঁর পরিকল্পনার কথা কিছুই জানাননি মেয়েকে।
আরেকটা প্রশ্ন করতে যাবে কিশোর মিরিনাকে, এই সময় পেছনে হিসিয়ে উঠল রাগী কণ্ঠ, ও, তাহলে এখানে এসে বসে আছ!
ঘুরে তাকাল কিশোর। জ্বলন্ত চোখে মিরিনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মিসেস জড়ান।
এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার মানেটা কি? কড়া গলায় আবার শুধালেন মিসেস জরডান। আমি ওদিকে সারা হোটেল খুঁজে মরছি। কি করছ এখানে? এই পোশাকে, একটা সো-কলড ডিটেকটিভের সাথে?
নিজের জিনিসপত্র তুলে নিতে লাগল মিরিনা। এই সময়টায় তার মায়ের অগ্নিদৃষ্টি সহ্য করতে হল কিশোরকে। ইতিমধ্যে একবার মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল মিরিনা, সরি, আম্মা, ভুল হয়ে গেছে…
হয়েছে! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলেন মা, জলদি যাও! নিজের মাথার হ্যাঁট খুলে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, পর এটা! কেউ দেখে ফেলার আগেই। সানগ্লাস পর। ইসসি রে, কেউ দেখেই ফেলল কি-না…।
মেয়ের হাত চেপে ধরলেন মিসেস জরডান। টান দিলেন হাঁটার জন্যে। মিরা, কি যে করিস, কিছু বুঝি না! ভূত চাপে নাকি তোর মাথায়! এত করে বললাম, টেলিভিশনে একটা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছি আজ। বুঝেসুঝে চলবি। সকালে উঠেই তৈরি হবি। তা না করে চলে এসেছিস এখানে! জানিস না, এভাবে ভিজিয়ে উঠে রোদে শুকালে চামড়ার সর্বনাশ হয়ে যায়? কত আর শেখাব! বিরক্ত হয়ে গেছি!
চরকির মত পাক খেয়ে হঠাৎ কিশোরের দিকে ঘুরলেন মহিলা। ইয়াং ম্যান, আমি আশা করব, আমার মেয়ে সম্পর্কে যেন কোন গুজব ছড়ানো না হয়। ওর ভাল হোক, এটাই তোমার চাওয়া উচিত। একটা কথা বিশেষ ভাবে বলে দিচ্ছি, সে রকম কিছু যদি ঘটে, তোমার সঙ্গে বোঝাপড়া হবে আমার। আমি তোমাকে ছাড়ব না। মনে রেখো কথাটা।
মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মিরিনা। সরমে মরে যাচ্ছে যেন। আবার তার হাত ধরে টানলেন মিসেস জরডান। কিশোরের দিকে তাকিয়ে জোর করে মুখে হাসি ফোটাল মিরিনা। অসহায়ের হাসি।
জোরে জোরে হাঁটছেন মিসেস জরডান। তাঁর পোশাকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। পোশাকের ঝুলটুল সব মিলিয়ে বিচিত্রই লাগছে। আলখেল্লার সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। ওপরের পোশাকের নিচে আরেকটা পোশাক রয়েছে মহিলার। আলখেল্লার মত অনেকটা।
সেদিকে তাকিয়ে কিশোর ভাবছে, লাল আলখেল্লা পরে যে এসেছিল স্টলের কাছে, তাকে পুরুষ হতেই হবে, এমন কোন কথা নেই।
১১
হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল কিশোর। মূসা আর রবিনের ঘুম তখনও পুরোপুরি ভাঙেনি। শব্দ শুনে দুজনেই চোখ মেলে তাকাল। কিশোরের হাতের কমিকগুলো দেখে পুরো সজাগ হয়ে গেল।