আগে বাড়তে গিয়ে পেটে লাথি খেল কিশোর। হুঁক করে উঠে চেপে ধরল পেট। প্রচন্ড ব্যথায় হাঁসফাঁস করতে লাগল।
পেট চেপে ধরেই, দেয়ালের দিকে রওনা হলো। সুইচবোর্ডটা খুঁজে বের করতে হবে…
গাঁক করে উঠল একটা কণ্ঠ। তার পরেই শোনা গেল রবিনের চিৎকার, পালাচ্ছে! ব্যাটা পালাচ্ছে!
অন্ধকারে আরও কিছু বিচিত্র শব্দ শোনা গেল।
সুইচবোর্ডটায় হাত ঠেকল কিশোরের।
জ্বলে উঠল ছাতে ঝোলানো ঝাড়বাতি।
আলোয় ভেসে গেল ঘর। দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন লোকটা।
দরজার দিকে দৌড় দিল তিন গোয়েন্দা।
প্রথম মোড়টার কাছে পৌছে গেছে ততক্ষণে রহস্যময় লোকটা। মোড় ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মোড় পেরিয়ে এল ছেলেরাও। গেল কোথায় লোকটা? সামনে লম্বা বারান্দা, এত তাড়াতাড়ি দৌড়ে সেটা পেরোতে পারার কথা নয়।
নিশ্চয় কোন একটা ঘরে ঢুকে পড়েছে! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল রবিন। কোমরের কাছটায় চেপে ধরে রেখেছে, লাথি খেয়েছে ওখানে।
মুসা দৌড়ে গেল একজিট সাইন লেখা একটা দরজার কাছে। একটানে পাল্লা খুলতেই কানে এল দ্রুত পদশব্দ।
ইমারজেন্সি সিঁড়ি দিয়ে নামছে ও! চিৎকার করে বলল সে, জলদি এসো!
দুপদাপ করে নামতে শুরু করল তিনজনে। পদভারে কাঁপছে লোহার সিড়ি। ওরা যে পিছু নিয়েছে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না নিশ্চয় লোকটার। বুঝুক। কি আর করা? নিঃশব্দে তো নামার উপায় নেই।
লোকটাকে যেভাবেই হোক, ধরতে চায় কিশোর। একটা বোঝাপড়া আছে। চোরাই কমিকগুলো উদ্ধারের ব্যাপারটা তো আছেই, এখন যোগ হয়ে হয়েছে পেটের লাথি। আপনা থেকেই হাত মুঠোবদ্ধ হয়ে গেল ওর।
মাটির নিচে প্যারেজের প্রবেশ মুখের কাছে শেষ হয়েছে সিঁড়ি।
প্রায় একযোগ এসে দরজার গায়ের প্যানিক বারে ঝাপিয়ে পড়ল ওরা। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল পাল্লা। বড় বড় থামের জন্যে ছাতের আলো ঠিকমত পৌঁছতে পারে না ওখানে। দরজার ওপরের বাল্বটাও ভাঙা। কাজেই অন্ধকারই বলা চলে জায়গাটাকে।
দৌড় দিল মুসা। কংক্রীটের মেঝেতে জুতোর শব্দ হচ্ছে। কেয়ারই করল না সে। বাঁয়ে মোড় নিয়ে চিৎকার করে সঙ্গীদেরকে জানাল, এদিকে!
সামনে ছুটছে মূর্তিটা। গতি বাড়িয়ে দিল মুসা। দেখতে দেখতে পেছনে ফেলে এল রবিন আর কিশোরকে।লম্বা লম্বা পায়ে এগোল মুসা। লোকটার গায়ে গিয়ে পড়ার ইচ্ছে কিন্তু আচমকা ঘুরে দাঁড়াল লোকটা। ঘুসি চালাল।
একটা থামের আড়ালে চলে গেল মুসা।
মুসা! থমকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠল রবিন। এই মুসা, ঠিক আছ তুমি?
আমার দম বন্ধ করে দিয়েছে! হাঁপাতে হাঁপাতে থামের আড়াল থেকে উঠে দাঁড়াল মুসা। আরিব্বাপরে বাপ!
সবার পেছনে ছিল কিশোর। মুসা অদৃশ্য হওয়ার পর রবিনকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখল। সাবধানে থাম ঘুরে এগোল সে। পাঁচ কদম এগোতেই জ্বলে উঠল গাড়ির হেডলাইট, চোখেমুখে পড়ে যেন অন্ধ করে দিল তাকে।
একটা মাত্র আলো, আরব্য রজনীর সিন্দাবাদের গল্পের একচোখো দানব সাইক্লপসের মত। আলোটার আকার দেখে অনুমান করল, ভ্যান জাতীয় গাড়ি।
একটা হেডলাইট কাজ না করলেও ইঞ্জিন ঠিকই কাজ করছে গাড়িটার। গ্যাস বাড়াতেই ভীষণ গর্জন করে খেপা ঘোড়ার মত লাফ দিয়ে ছুটে আসতে লাগল কিশোরের দিকে।
চিৎকার দিয়ে রবিন আর মুসাকে হুঁশিয়ার করেই পাশে লাফ দিল সে। থামের এপাশে বেরোতে গিয়ে হেডলাইট চোখে পড়ল, ওরাও আঁপিয়ে পড়ল মেঝেতে। টায়ারের তীক্ষ্ণ শব্দ করে পাশ দিয়ে চলে গেল গাড়িটা।
লাফিয়ে উঠেই ওটার পেছনে দৌড় দিল কিশোর। ততক্ষণে একজিট র্যাম্পে উঠে পড়েছে গাড়ি, দ্রুত ডানে ঘুরতে আরম্ভ করেছে। সে র্যাম্পের মাথায় উঠতে উঠতে যানবাহনের ভিড়ে ঢুকে গেল ওটা, হারিয়ে গেল দেখতে দেখতে।
হতাশ ভঙ্গিতে ঝুলে পড়ল তার কাঁধ। অন্য দুজন পৌঁছলে জিজ্ঞেস করল, লাইসেন্স প্লেট দেখেছ? নাম্বার?
ইয়ার্কি করছ নাকি! মুসার জবাব।
রবিন বলল, দেখার জন্যে থেমে থাকলে এতক্ষণে চ্যাপ্টা হয়ে যেতাম, চাকার নিচে পড়ে।
আমিও দেখতে পারিনি, কিশোর বলল। ড্রাইভারকেও না। তোমরা কিছু দেখেছ?
গাড়িটা গাঢ় রঙের ছিল, রবিন বলল। যতদুর মনে হলো, ধূসর।
না, কালো, মুসা বলল।
মাথা নাড়ল কিশোর। আমার কাছে লাগল কালচে সবুজ।
একটা হেডলাইট নষ্ট।
মুসার এই কথাটায় একমত হল কিশোর। ঠিক। তার মানে একটা সাইক্লপস ভ্যান পাওয়া গেল সূত্র হিসেবে। এরকম গাড়ি লস অ্যাঞ্জেলেসে খুব বেশি নেই। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, খুঁজে বের করতে তেমন সমস্যা হবে না।
সেই সমস্যার কথা পরেও ভাবা যাবে, রবিন বলল। উপস্থিত যে সমস্যা রয়েছে সেটার সমাধান করা দরকার আগে।
কিশোর আর মুসা দুজনেই তাকাল রবিনের দিকে। কি সমস্যা?
আমাদের ঘরের চাবি কেউ এনেছ? পাল্লা বন্ধ করলে তো আপনাআপনি তালা লেগে যায়।
নিজের পরনের পাজামার দিকে তাকাল কিশোর। তারপর মুসা আর রবিনের দিকে। একজন পরেছে দৌড়ের পোশাক, আরেকজন পাজামা। পকেট নেই। চাবি রাখার জায়গা নেই। হুম! মাথা দোলাল সে, রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে গিয়ে আরেকটা চাবি চাইতে হবে আরকি। কিন্তু যা পোশাক পরে বেরিয়েছি! লোকে সত্যি সত্যি এবার থ্রী স্টুজেস ভাববে।
সাইডওয়াকে উঠে পড়ল সে। চলো, যাই। রাতের হাওয়া মন্দ লাগবে না।
একপাশে খাড়া হয়ে উঠেছে কংক্রিটের দেয়াল। কিছুদূর এগোতেই শেষ হয়ে এল, দেখা গেল সরু একটা প্রবেশ পথ, তার ওপাশে ছোট বাগান। এখান দিয়ে ঢুকে পড়া যাক, প্রস্তাব দিল মুসা।।