সামনে ঝুঁকল কিশোর। আরেকবার তোমার গা ঘেঁষে গেল?
না, দ্বিতীয়বার আর গা ঘেঁষে নয়। মনে হলো, লাল একটা ঝিলিক দেখলাম। ছুটে যাচ্ছে দরজার দিকে, বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে।
তুমি কোন দিকে যাচ্ছিলে?
কেন, দেখোনি? আর্টিস্টরা সব যেখানে বসে ছিল সেদিকে। ঘরের একধারে, ঢোকার দরজা থেকে দূরে। ওখানেই তো প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দরজার দিকেই যাচ্ছিল, তুমি শিওর?
আবার শ্রাগ করল মিরিনা। শিওর হওয়ার কোন উপায় ছিল না। ধোঁয়া দেখলাম, লাল রঙের ঝিলিক দেখলাম, এর পর আর দেখিনি লোকটাকে।
প্রবেশ পথের কাছে কেউই তাকে দেখেনি, কিশোর বলল। ওরকম লাল আলখেল্লা পরা একজন লোককে দেখেও মনে থাকবে না কারও, এটা হতে পারে। মিরিনার দিকে তাকাল সে। আরও কিছু জিজ্ঞেস করার কথা ভাবছে। কিন্তু আর কোন প্রশ্ন এল না মাথায়। আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না। আমার প্রশ্ন শেষ।
এবার যেতে পারি? হেসে জিজ্ঞেস করল মিরিনা। যেন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুশিই হয়েছে।
নিশ্চয়ই। বলল কিশোর। মেয়েটা যেন কথা বলার জন্যে মুখিয়েই আছে। খটকা লাগল তার।
তোমার ওই যে আমেরিকান বন্ধুটি, অবশেষে বলেই ফেলল মেয়েটা, যেন এটা জিজ্ঞেস করার জন্যেই কিশোরের এত প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। ও কি সোনালি চুল পছন্দ করে?
ও, এই ব্যাপার! দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর হাসল। কিছু বলতে যাবে এই সময় ডাক শোনা গেল, মিরিনা, অ্যাই মিরিনা!
ওই যে, তোমার আম্মা ডাকছেন, কিশোর বলল। পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে চট করে গুঁজে দিল মিরিনার হাতে। আশা করি আবার দেখা হবে। পকেটে রেখে দাও। প্রয়োজন হতে পারে আমাদেরকে।
হাসল মিরিনা। হয়তো।
আলাদা হয়ে দুজনে দুদিকে এগোল ভিড়ের মধ্যে দিয়ে। কয়েক মিনিট পরেই এসে রবিন খামচে ধরল কিশোরের হাত। বলল, এডগার ডুফারকে পেয়েছি।
কি বলল?
বোরাম যা বলেছে। দুজনে নাকি গোল্ড রুমের বাইরে তর্ক করছিল।
কি নিয়ে? জানতে চাইল কিশোর।
ক্রিমসন ফ্যান্টমের লেটেস্ট বই নিয়ে। নতুন আর্টিস্ট জোগাড় করেছে বোরাম।
ডুফার বলল, ওই আর্টিস্ট কোন কাজেরই না। ছায়া তৈরি করতে পারবে না।
ছায়া?
ক্রিমসন ফ্যান্টমকে সৃষ্টি করে সেটাকে ফোটানর জন্যে নানা রকম বিচিত্র আলোআঁধারি তৈরি করেছিল হুফার। এই যেমন, চরিত্রটার মাথায় কালো ছায়া। এমনিতেই মড়ার খুলির মত মুখোশ পরানো ওটার, তার ওপর ওই ছায়া একটা দুর্দান্ত আবহ তৈরি করে দিল। নতুন আটিস্টরা ওগুলো সব বাদ দিয়ে দিয়েছে। ডুফার বলছে, চরিত্রটার কোন কিছুই রাখেনি ওরা। সব কিছু উড়িয়ে-ফুড়িয়ে একেবারে জলো করে দিয়েছে।
ইনটারেসটিং, কিশোর বলল। চোরের মুখোশটার কথা মনে আছে? মড়ার খুলির মত। তার ওপর হালকা কালো রঙ, যেন ছায়াই তৈরি করা হয়েছে। আশা করি ডুফার সেকথা স্বীকার করবে।
স্বীকার করবে মানে?
ফ্যান্টমের মাথায় কালো ছায়া যাদের পছন্দ, তাদেরই কেউ নিশ্চয় ওরকম মুখোশ পরবে, কিশোর বলল। আরেকটা ব্যাপার, আলখেল্লা অনেক কিছু ঢেকে দেয়। ছদ্মবেশীদের জন্যে এটা এক মহা প্রয়োজনীয় পোশাক। ভেতরে কে আছে, বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। পেটে চাপড় দিল কিশোর। খিদে পেয়েছে। চলো, মুসাকে খুজে বের করি।
সীটের ব্যবস্থা হয়েই আছে, জানাল রবিন। ডুফার আমাদেরকে তার টেবিলে খাওয়ার দাওয়াত করেছে।
তাই নাকি? তাহলে তো খুবই ভাল। মুসা গেল কোথায়? ভিড়ের দিকে তাকাতে লাগল কিশোর। চোখে পড়ল নীল বোরামকে। আইজাক হুফারের বুকে হাত ঠেকিয়ে বললেন, তোমার মুখটা বড় বেশি পাজি, হুফার। আমার নামে যা-তা বলে বেড়াচ্ছ। কানে এসেছে আমার।
পাজি! তুমি আমাকে পাজি বলে গাল দিলে! রেগে আগুন হয়ে গেল বদমেজাজী আর্টিস্ট। দাঁড়াও, আমিও ছাড়ব না। বক্তৃতা যখন দেব, তখন বুঝবে।
ঘোড়ার ডিম করবে! জোরে এক ধাক্কা মারলেন হুফারকে বোরাম। ঘুসি মারার জন্যে হাত তুললেন।
ভিড়ের ওপর পড়ল হুফার। সামলে নিয়ে সোজা হলো। সে-ও ঘুসি তুলল।
ঘুসি চালালেন বোরাম। লাগাতে পারলেন না। রেঞ্জের বাইরে রয়েছে হুফার। হুফারও ঘুসি চালাল। সে-ও লাগাতে পারল না। বোঝা গেল, মারামারি করতে জানে না দুজনের একজনও।
দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়াল একজন লোক।
ঘরের দরজায় পাহারারত সেই ষাঁড়ের মত সিকিউরিটি গার্ড। হুফারের কাঁধ চেপে ধরে টেনে সরাতে গেল তাকে, এই সময় আবার ঘুসি মেরে বসলেন বোরাম।
হুফারের চোয়ালে লাগল। রেগে গাল দিয়ে উঠল হুফার। কিন্তু গার্ড ধরে রেখেছে বলে কিছু করতে পারল না। একপাশ থেকে এসে বোরামকে ধরে ফেললেন মরগান।
বোরামের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিচাচ্ছে আর গালাগাল করছে হুফার। টেনেটুনে দুজনকেই মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলো। বসিয়ে দেয়া হলো সীটে। একজনের কাছ থেকে আরেকজনকে বহুদুরে, এমাথায় আর ওমাথায়। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অন্য সদস্যরাও বসে পড়তে লাগল চেয়ারে।
মুসাকে খুঁজে পেল রবিন আর কিশোর। কিশোর জিজ্ঞেস করল মুসাকে, হুফারের সম্পর্কে কি জানলে?
ডাকাতির সময় আর্টিস্টদের কোন টেবিলের কাছেই তাকে দেখা যায়নি, মুসা বলল।
সব কিছুই কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! মেলাতে পারছি না! পোশাক প্রতিযোগিতায় এরকমই হয় নাকি?