সে আর ডুফার একই সময়ে হাজির হয়েছে, রবিন বলল। হয়তো একই সাথে ছিল দুজনে।
মাথা ঝাকাল কিশোর। ভাল বলেছ। ডুফারকে পাওয়া যাবে কােথায়?
পরিচিত একটা মুখ দেখা দিল ভিড়ের ভেতরে। পিটার, যে লোকটা ওভারগ্রীপ কমিকের কপি ধার দিয়েছিল ডুফারকে। তিন গোয়েন্দাকে দেখে জানতে চাইল, কি করছে এখানে।
এমনি এসেছে, দেখতে, জানাল কিশোর। তারপর জিজ্ঞেস করল, ডুফারকে দেখেছে কিনা। মাথা নেড়ে পিটার জানাল, গত এক ঘণ্টা ওর সঙ্গে দেখা নেই। হাসল হঠাৎ করেই। গোল্ড রুমে গিয়ে দেখতে পারো। কি করে যেতে হবে পথ বলে দিয়ে বলল, না গেলেও অবশ্য পারো। যে কোন সময়ে এসে পড়তে পারে ডুফার।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, নীল বোরামকে দেখেছেন কোথাও?
দেখেছি, হাত তুলে দেখাল পিটার। ওই যে ওখানে। হিরোয়িক কোম্পানির লোক নিয়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছে বোরাম। নতুন কোন হিরোয়িক ক্লাসিকের ঘোষণা দিচ্ছে মনে হয়।
সেদিকে তাকিয়ে ক্যামেরার আলো ঝিলিক দিতে দেখল কিশোর। আর সোনালি পোশাকের চমক। দ্রুত এগোল দুই সহকারীকে নিয়ে। জায়গাটার স্টল সব সরিয়ে দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে বিশেষ কাজের জন্যে। হিরোয়িক কমিকের কয়েকজন আর্টিস্ট পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লাইফ সাইজ কিছু কার্ডবোর্ডে আঁকা কমিকের বিভিন্ন চরিত্রের ছবির সামনে।
কিন্তু তাদের দিকে নজর নেই ক্যামেরার। আলো ফেলা হয়েছে স্টেলারা স্টারগার্লের ওপর, ক্যামেরার চোখও তারই ওপর আটকে আছে যেন। কারণটা বোঝা শক্ত নয়। ছবির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মিরিনা জরডান, এখনও সোনালি কসটিউম পরনে, সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হাসি হাসছে।
একটু দূরে তার মা কথা বলছে সাংবাদিকদের সঙ্গে। তার পেছনে নীল বোরাম।
সম্পাদকের কাছে এগিয়ে গেল কিশোর। মিস্টার বোরাম, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
কেন নয়? টাকে হাত বোলালেন বোরাম। করো, প্রশ্ন করো।
আমি আপনাকে ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে দেখেছি, ডাকাতির একটু আগে, কিশোর বলল। আপনার কি মনে হয়, যে কমিকগুলো চুরি হয়েছে ওগুলো মূল্যবান?
ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বোরাম। এটা কি ধরনের প্রশ্ন হলো?
আমি আর আমার দুই বন্ধু এই কেসের তদন্ত করছি, ম্যাড ডিকসনের হয়ে। মুসা আর রবিনকে দেখাল কিশোর। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিল বোরামের হাতে। আপনার মতামত জানা দরকার…
বাধা দিয়ে বোরাম বললেন, শুধু মতামত নয়, আরও অনেক কিছুই জানতে চাও তুমি। কার্ডটার দিকে তাকিয়ে বললেন বোরাম। তারপর তাকালেন কিশোরের দিকে। ডাকাতি হওয়ার সময় কনভেনশন ফ্লোরেই ছিলাম না আমি, স্টলের কাছে থাকা তো দূরের কথা। গোন্ড রুমের বাইরে কমিকের এক মাথামোটা পুজারি আটকে ফেলেছিল আমাকে।
পুজারি?
এডগার ডুফার। ভ্রূকুটি করলেন বোরাম। যেন ডুফারের সঙ্গে সাক্ষাতের সেই স্মৃতিটাও বিরক্ত করছে তাঁকে। গোন্ড রুম থেকে বেরিয়ে এল, গাধাগুলো যেখানে সিনেমা দেখাচ্ছিল সেখানে। মনে হলো, প্রোজেকটরের কিছু একটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মেরামতের চেষ্টা করছিল লুই মরগান। এই সময় ডুফার বেরিয়ে এসে বিরক্ত করতে শুরু করল আমাকে।
তারপর?
কে জানি এসে বলল, ম্যাড ডিকসনের স্টলে গন্ডগোল হয়েছে। দেখতে গেল ডুফার। ভাবলাম, মরগান বোধহয় জানে কিছু, তাই তাকে ধরলাম। সত্যি, বলছি, এভাবে ডুফারের হাত থেকে রেহাই পেয়ে খুশিই হয়েছিলাম। নিজের সম্পর্কে তার উঁচু ধারণা। কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসলেন বোরাম। অনেক অনেক উঁচু।
একটু থেমে বললেন সম্পাদক, তোমার প্রশ্ন শেষ হয়েছে? কাজ আছে আমার, যেতে হবে।
লোকটা চলে যাচ্ছেন, তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে কিশোর। কেসটার মাথামুন্ড কিছুই বুঝতে পারছে না এখনও।
কাঁধে হাত পড়তে ফিরে তাকাল সে। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন লুই মরগান।
বোরামের সঙ্গে কথা বললে দেখলাম, জিজ্ঞেস করলেন তিনি, তোমাদের কেসে সে-ও জড়িয়েছে নাকি?
জড়াতেও পারে, অনিশ্চিত শোনাল কিশোরের কণ্ঠ। ডাকাতির আগের মুহূর্তেও ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে ছিলেন তিনি। কিন্তু এখন অস্বীকার করছেন। অ্যালিবাই রয়েছে বলছেন। সেটাই তদন্ত করে দেখতে হবে আমাদের।
আর কার কার ব্যাপারে তদন্ত করবে?
এডগার ডুফার। আইজাক হারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলে এসেছি।
আগ্রহ ফুটল মরগানের চোখে। তারও কি অ্যালিবাই আছে নাকি?
বলল তো সেরকমই। আর্টিস্ট সেকশনে নাকি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছিল। আমার তো বিশ্বাস, নয়শো অটোগ্রাফ শিকারি তার পক্ষে রায় দেবে।
আমার মনে হয় না, ভুরু কুঁচকে মাথা নাড়লেন মরগান। ঢোকার মুখে তোমাদের সঙ্গে যখন দেখা হলো, তখন কিন্তু আমি আটিস্ট এরিয়ার ভেতর দিয়েই এসেছি। একটা লোককেও তখন দেখিনি হুফারের টেবিলের সামনে। কারণ, হুফার তখন টেবিলেই ছিল না।
৭
আজ রাতেই আলিবাইগুলো সব যাচাই করে দেখতে হবে, বলল কিশোর। ব্যাংকোয়েট রুমে ঢুকেছে দুই সহকারীকে নিয়ে। ডাকাতির সময় ম্যাড ডিকসনের স্টলের কাছাকাছি ছিল এরকম কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলব। টাইটা সমান করতে লাগল সে। অস্বস্থি ফুটেছে চোখে।
ভুরু কুঁচকে ফেলল মূসা। কাণ্ডটা কি হলো! এমন করছ কেন? সেই সোনালি চুল মেয়েটাই মাথা গরম করেছে তোমার। এরকম অবস্থা তো দেখিনি! রহস্য রেখে সুন্দরী মেয়ের দিকে ঝুঁকেছে আমাদের কিশোর পাশা! অবিশ্বাস্য!