ও কাজ কে করতে যাবে? মরগানের প্রশ্ন।
সেটাই তো জানতে চাইছি আমিও। তোমার সিকিউরিটি কোথায়? এটা কি ধরনের সম্মেলন হলো?
আর্টিস্টকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন মরগান, তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি। যদি যেতে চাও…
যেতে চাইব? গলা আরও চড়ল হুফারের। আমি যেতে চাই না। আমি চাই ওই লোকটাকে। আপনি জানেন, কি করে আমার জিনিসগুলো নষ্ট করেছে সে! আমি এখানে টাকা রোজগারের জন্যে এসেছিলাম এবং সেটা করেই ছাড়ব আমি। তার জন্যে যা কিছু করতে হয় করব।
দুপদাপ পা ফেলে চলে যাওয়ার সময় ঘুরল সে। আমাকে প্রয়োজন হলে কনভেনশন ফ্লোরে খোঁজ করবেন।
ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল জনতা। গুঞ্জন করছে। মরগানের পাশে এসে দাঁড়াল কিশোর আর রবিন।
মাথা নাড়ছেন তিনি। দেখলেন কাণ্ডটা? কমিক বুকের আর্টিস্টেরও কত দাপট? শ্রাগ করলেন। হুফারের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছবি বিক্রি করা। সেটা করতে না পারলে হোটেলের ভাড়া নিয়েই বিপদে পড়ে যাবে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। টাকার প্রয়োজন অনেক সময় মানুষকে চুরি করতে বাধ্য করে। আরও কয়েকজনের ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে, প্রশ্ন করতে চাই। সোনালি পোশাক পরা মেয়েটা কে?
হাসলেন মরগান। ও, মিরিনা জরডানের কথা বলছ? মেয়েটা যথেষ্ট চালাক। সম্মেলনে এই প্রথম যোগ দিয়েছে। স্বীকার করতেই হবে, স্টেলারা স্টারগার্লের চমৎকার নকল ওই মেয়েটা। স্টার বানাতে চাইছে ওকে ওর মা।
টেবিলে বসা ওই লোকটা কে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ওর নাম নীল বোরাম। হিরোয়িক কমিকসের সিনিয়র এডিটর। স্টেলারা স্টারগার্ল ছাপে ওরাই। মিসেস জরডান মেয়ের চেয়ে আরও চালাক, করিতকর্মা। কোন কাজে কাকে ধরতে হবে খুব ভাল জানে। দুই মাসের মধ্যেই কোন কমিক বইয়ের মলাটে যদি মিরিনার হাসি হাসি মুখ জ্বলজ্বল করে, অবাক হব না। কিছুটা হতাশ ভঙ্গিতেই মাথা নাড়লেন মরগান। সব মহলের লোকের সঙ্গে জানাশোনা আর খাতির মহিলার। আমার জন্যে যদি কাজ করত, ভাল হত।
পকেটে হাত দিলেন মরগান। ওদের সঙ্গে পরিচয় করতে চাইলে আজ রাতের পার্টিতে এসো, খাওয়া-দাওয়াও হবে। বাড়তি কয়েকটা টিকেট আছে। এই যে নাও, এটা তোমার… রবিনকে দিলেন তিনি। কিশোরকে একটা দিয়ে বললেন, এটা তোমার, আর এই এটা তোমাদের আরেক বন্ধুর জন্যে। হাসলেন। তোমাদের ভেজা বন্ধু।
একটু থেমে যোগ করলেন, পার্টিতে ভিড় হবে খুব। অনেক সময় ধরে চলবে, অনেক রাত পর্যন্ত। তবে অসুবিধে নেই। তোমাদের জন্যে ঘর রেখে দেব আমি, ঘুমাতে পারবে।
ঘড়ি দেখলেন তিনি। এবার যেতে হয়। সাংবাদিকদের কাছে ফ্যান গেস্ট অভ অনারদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
প্রায় ছুটে চলে গেলেন মরগান।
ফ্যান গেস্ট অভ অনারটা কি বলো তো? জিজ্ঞেস করল রবিন।
মাথা নাড়ল কিশোর। জানি না। বুঝতে পারছি না সাংবাদিক কেন দরকার মরগানের। নিজে নিজেই তো অনেক কিছু করে ফেলেছেন।
এখন আমাদের কাজটা কি?
চলো, ওপরে যাই। তারপর মুসাকে নিয়ে বাড়ি যাব। শুকনো কাপড় দরকার ওর। আর রাতে আমাদেরকেও অন্য পোশাক পরে আসতে হবে। ব্যাংকোয়েট পার্টিতে এই জিনস আর টি-শার্টে চলবে না।
এখনও শুকায়নি মুসার কাপড়, ভেজা রয়েছে। আর কোন উপায় নেই। ওগুলোই পরল সে। গাড়িতে এসে উঠল তিনজনে।
রকি বীচের দিকে চলতে চলতে কিশোর জিজ্ঞেস করল, বলো তো, কাকে বেশি সন্দেহ হয় তোমাদের?
অবশ্যই আইজাক হুফার, রবিন বলল।
কেন?
সামনের সীট থেকে কিশোরের দিকে ফিরে তাকাল রবিন। ওর নিজের ছবি নিজেই পোড়ানোর দৃশ্যটা মন থেকে তাড়াতে পারছি না আমি। মনে হল যেন জোর করে কিছু প্রমাণের চেষ্টা করছে। এবং আমরা জানি, ফ্যান ফান বইতে তার আঁকা ছবিগুলো চুরি গেছে।
এটা একটা পয়েন্ট, একমত হলো কিশোর।
তারপর রয়েছে আরেকটা ব্যাপার, টাকাপয়সার টানাটানি আছে ওর। কারণ ওর ছবিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে দেখে সাংঘাতিক হতাশ হয়ে পড়েছে, আচরণেই বুঝিয়ে দিয়েছে সেটা। অথচ একশো ডলার দিয়ে ছবিটা কিনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলল! নষ্ট করল কেন অতগুলো টাকা? অদ্ভুত নয় এসব আচরণ?
বেশ, কিশোর বলল। ধরা যাক, হুফারই আমাদের চোর। কিন্তু তার ঘরের জিনিসপত্র তছনছের ব্যাপারটা কিসের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়?
বলতে পারছি না। অনেকগুলো ঘোরপ্যাচ রয়েছে পুরো ব্যাপারটাতে। একবার মনে হচ্ছে হুফারই সব কিছুর হোতা, আবার মনে হচ্ছে তা হতে পারে না। তাহলে তার ঘরে লোক ঢুকে জিনিস নষ্ট করে কেন? তাছাড়া সে চুরি করে থাকলে তার ঘরে চোরাই মালগুলো নেই কেন? প্রমাণ যাতে না থাকে সেজন্যে অবশ্য সরিয়ে রাখতে পারে অন্য কোথাও। আরও একটা কথা ভাবছি, লাল আলখেল্লা পরা জীবন্ত ক্রিমসন ফ্যান্টম আর মুসাকে যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে, ফ্রগ মিউট্যান্ট, একই লোক নয় তো? আর সেই লোকটা কি আইজাক হুফার?
তা হতে পারে না, ড্রাইভিং সিট থেকে বলল মুসা। হুফারের শরীরের গঠন আর ব্যাঙটার গঠনে তফাত আছে। এক রকম নয়।
এই ক্রিমসন ফ্যান্টমের রহস্যটায় আরও লোক জড়িত রয়েছে, কিশোর বলল। এই যেমন, ডিকসন আর বোরাম। পেছনের সীটে হেলান দিল সে।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছ, একজন আরেকজনের ব্যাপারে কেমন পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা বলছে? ডুফার ভাবে হুফার একজন জিনিয়াস। ডিকসন ভাবেন পাগল, আর মরগান দুঃখ করেন তার জন্যে। ডিকসন নিজেকে ব্যবসায়ী ভাবেন, অথচ হুফার আর ডুফার বলে লোকটা একটা শয়তান।