এডগার ডুফার কিছুই করতে পারল না? প্রশ্ন করল কিশোর। এই সময় ওদের টেবিলের পাশ দিয়ে গেল কস্টিউম পরা আরেকজন প্রতিযোগী। এই লোকটার পোশাক বিচিত্র। টমেটোর চারপাশে সাজিয়ে রাখা অনেকগুলা লেটুসপাতা যেন বিশাল আকার নিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
চেষ্টা অনেকই করেছে, জানাল ডুফার। ঠেকানর চেষ্টা করেছে বোরামকে। পারেনি। আর পারবেই বা কি করে? চালাকি করে ততদিনে ক্রিমসন ফ্যান্টমের কপিরাইট নিজের নামে করে ফেলেছে বোরাম। ডুফার ভাবল, সে কাজ না করলেই কমিকটা বন্ধ হয়ে যাবে, আর কেউ আঁকতে পারবে না। তাই হিরোয়িক কমিকস থেকে বেরিয়ে চলে আসে সে। কিন্তু বোরাম ধুরন্ধর লোক। অন্য লোক দিয়ে কমিক আঁকাতে শুরু করল। কিছুই করতে না পেরে নিজের সৃষ্টির ওপরই ভীষণ রেগে গেল ডুফার। যেখানেই পায় নষ্ট করে ফেলে। তোমাদের সামনেই তো নষ্ট করল। দেখলেই ওরকম করে পোড়ায়।
তার মানে, কিশোর বলল, আপনি বলতে চাইছেন কোম্পানিটা ক্রিমসন ফ্যান্টমের ভক্তদেরকে ঠকাচ্ছে?
ঠকাচ্ছে আসলে অনেকেই, এক বোরাম নয়, হাত ওল্টাল ডুফার। ঘুরে তাকাল পাশের টেবিলে বসা কালো-চুল এক তরুণের দিকে। তাকে বলল, অ্যাই, পিটার, তোমার কাছে ওভারস্ট্রীটের কপি আছে?
বার্গার খাচ্ছিল লোকটা। হাতের খাবার প্লেটে নামিয়ে রেখে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে বের করে আনল একটা দোমড়ানো মোটা বই। এই নাও, বলে ছুড়ে দিল ডুফারের দিকে।
লুফে নিল ডুফার। টেবিলে বিছিয়ে পাতা ওল্টাতে শুরু করল। এই যে, পাওয়া গেছে। সেরিবাস। সাদা-কালো কমিক, প্রথম প্রকাশিত হয় উনিশশো সাতাত্তর সালে। আসল একেকটা কপি বিক্রি হবে এখন পাঁচশো ডলারে। এই যে, দেখ, নকলও রয়েছে। জালিয়াতি। যারা চেনে তারা ঠিকই বুঝতে পারবে এটা নকল। নকলগুলো বিক্রি হয় বিশ-তিরিশ ডলার দামে।
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে গিয়ে বইটা ফেরত দিয়ে এল ডুফার। ছেলেদেরকে বলল, কমিক ভক্তদের ব্যাপারটা বুঝি না। অনেক সময় যারা ঠকায় তাদেরও লাভবান করে দেয়। জাল বলেই কিনে নেয় অনেকে অনেক দাম দিয়ে, সংগ্রহে রাখার জন্যে।
আবার ভ্রূকুটি করল ডুফার। ঠকিয়েও পয়সা কামায়। লোকে আসল ভেবে বেশি দাম দিয়ে কেনে। লাভটা যায় প্রকাশকের পকেটে। সেগুলো বিক্রি করারও মানুষ আছে। আসল বলে গছিয়ে দেয় ক্রেতাকে।
মুখ তুলল কিশোর, যেমন? কার মত বিক্রেতা?
ইঙ্গিতটা বুঝতে পারল ডুফার। লোকে তো প্রায়ই অভিযোগ করে জেমস ডিকসনের নামে। ওর কাছে কিছু কিনতে গেলে সাবধান। হাতে ঘড়ি থাকলে, হাত মেলানর পর ভালভাবে দেখে নেবে বদলে দিল কি-না। নিজের রসিকতায় নিজেই হাসল সে।
প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। বিজেতার নাম ঘোষণা করার আগে বাঁশি বাজল। ঘোষণা করলেন বিচারক। প্রথম হয়েছে রোমশ পোশাক পরা একজন। ও সেজেছিল স্লোর্জ দ্য প্ল্যানেট ইটার।
পাশের টেবিলে বিরক্তি প্রকাশ করল পিটার। এটা একটা কাজ হলো? আমি তো ভেবেছিলাম ওই সোনালি চুল মেয়েটাই জিতবে!
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কিশোরও একই কথা ভাবছে, তবে সেটা প্রকাশ করল না।
উঠে দাঁড়াল ডুফার। এবার যেতে হয়। রকের জাহাজ ভাঙার তোড়জোড় করছে মাকৰ্মান। দ্রুত গিয়ে খাবারের বিল দেয়ার জন্যে কাউন্টারের সামনে দাঁড়াল সে।
হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে দুই গোয়েন্দা। হেসে উঠল পিটার। বুঝলে না? রক অ্যাসটারয়েড ছবির কথা বলল ডুফার। সিনেমার খুব ভক্ত, সাইন্স ফিকশন। অনেক কিছুই মনে রাখে। ভাল ভাল ডায়লগ মুখস্থ করে রাখে, জায়গা মত ঝাড়ে। হাহ হা।
উঠে দাঁড়াল রবিন। বিড়বিড় করে বলল, কি সব মানুষ! সবাই-ই পাগল নাকি এখানকার!
বেরোনোর জন্যে রওনা হল দুই গোয়েন্দা। চোখের কোণ দিয়ে কিশোর দেখতে পেল সোনালি ঝিলিক।
ঘুরে তাকাল সে। রেস্টুরেন্টে ঢোকার মুখের কাছে একটা টেবিলে বসেছে সোনালি চুল মেয়েটা। সঙ্গে আরেকজন বয়স্ক মহিলা, বোধহয় মেয়েটার মা। তৃতীয় আরও একজন রয়েছেন, যাকে চিনতে পারল কিশোর। সেই টাকমাথা লোকটা, ম্যাড ডিকসনের কাছ থেকে যে ফ্যান ফানের কপিটা কিনতে চেয়েছিলেন।
দরজার দিকে এগোনোর সময় কথা কানে এল কিশোরের। টাকমাথা লোকটার সঙ্গে কথা বলার সময় মেয়ের কাঁধে আলত চাপড় দিল বয়স্ক মহিলা। বলল, ফটোকভারের জন্যে আমাদের মিরার মত মেয়ে আর পাবেন না, মিস্টার বোরাম। ও আপনার পারফেক্ট মডেল।
ও, এ-ই তাহলে নীল বোরাম, ভাবল কিশোর, আইজাক হুফারের প্রথম দিককার কাগজগুলোর ব্যাপারে এত আগ্রহী কেন লোকটা?
হঠাৎ রাগী একটা জোরাল কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকাল সে। প্রবেশ পথের একটু দূরে চোখমুখ লাল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে হুফার। চিকার করে বলল, হচ্ছেটা কি এখানে, মরগান! আমার ঘরে কে জানি ঢুকে সব তছনছ করে দিয়েছে!
৫
হুফার, মরগান বললেন, এসব নিয়ে কি এখানেই কথা বলতে হবে? দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন, মুখ দেখেই অনুমান করা যায়। ইতিমধ্যেই লোক জমা আরম্ভ হয়েছে। কৌতূহলী চোখে তাকাচ্ছে দুজনের দিকে।
জনতার ভিড়ে সামিল হলো কিশোর আর রবিন।
চিৎকার করে বলছে তখন হুফার, কে জানি ঢুকেছিল আমার ঘরে! আমার কাপড় কেটেছে, চিরে ফালাফালা করেছে সমস্ত ছবি!
গুঞ্জন উঠল সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে।