ভ্রূকুটি করল মেয়েটা। ওরকম মোটকা কত লোক এখানে কমিক কিনতে আসে জানো? হাজার হাজার। ওদের নশো নব্বই জনই যায় এখান দিয়ে। সব দেখতে এক রকম। কতজনের কথা মনে রাখব?
এই লোকটা মোটামুটি পরিচিত, রবিন বলল। কমিকের লেখা লেখে। দাড়ি আছে…
ডুফারের কথা বলছ না তো? তোমার বন্ধু তাহলে ওকথা বললেই পারত, নামটা বললেই বুঝতে পারতাম। হ্যাঁ, দেখেছি। এই তো মিনিট দুই আগে বেরিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে গেল।
রেস্টুেরেন্টে এসে লোকটাকে পেল গোয়েন্দারা।
ওদেরকে লাঞ্চের দাওয়াত দিল ডুফার। চলো, বাইরের টেবিলে গিয়ে বসি। তাহলে খেতে খেতে সম্মেলন দেখতে পারব।
সোনালি চুলওয়ালা মেয়েটাকে আরেকবার দেখার আশায় রাজি হয়ে গেল কিশোর।
সুইমিং পুলের কিনারে একটা টেবিলে এসে বসল ওরা। ছাতার নিচে। সম্মেলন চলছে। একজন করে প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, আর সেই ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে হাঁটছে সুইমিং পুলের কিনার দিয়ে, চারপাশে এক চক্কর, দর্শক আর বিচারক মন্ডলীকে দেখাচ্ছে তার পোশাক।
দুটো করে চীজবার্গারের অর্ডার দিল ভুফার। একটা করে তুলে নিল কিশোর আর রবিন।
কামড় বসাল কিশোর। চিবিয়ে গিলে নিয়ে বলল, কমিকের ব্যাপারে আমাদের কিছু তথ্য দরকার। আপনি কি বলতে পারবেন?
ভুরু কুঁচকে গেল ডুফারের। দাড়িও যেন উঠে এল সামান্য ওপরে। বলো, কি জানতে চাও?
ওরা কথা বলছে, এই সময় পুলের কিনারে এসে দাঁড়াল আরেকজন প্রতিযোগী। অদ্ভুত এক পোশাক পরেছে। যেন বিশাল একটা টোস্টারের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছে শরীরটা। হাত, পা আর মুখ বেরিয়ে আছে শুধু।
কিশোরের প্রশ্নের জবাবে ডুফার বলল, আমি কমিক সংগ্রহ করি, তার কারণ, করতে আমার ভাল লাগে। পাতা উল্টাই ওগুলোর। কোন ছবি ভাল লেগে গেলে, সেগুলোর মাঝের ফাঁকা জায়গায় লিখি নিজের মত করে। লিখতে আমার ভাল লাগে। কমিক অনেকেই পছন্দ করে, তবে শুধু পড়তেই। আঁকাআঁকি কিংবা লেখার ঝোঁক নেই তাদের।
সবার নেই, রবিন বলল। একথা বলা যাবে না।
তা ঠিক। আমার আছে। হুফারেরও আছে। ও অবশ্য লিখতে পারে না, হাতের লেখা ভাল নয় তো। তবে তার ছবিগুলো দেখার মত, কি বলো?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। চোখ অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে সেই মেয়েটার দিকে। সোনালি চুল।
বলে চলেছে ডুফার, হুফারের কাজগুলো একেকটা ক্ল্যাসিক। দশ বছর আগে, মাত্র আঠারো বছর বয়সেই দুর্দান্ত এক হিরো তৈরি করে বসেছিল সে। গল্প তৈরি করল, ছবি আঁকল, ছাপতে দিল এক কমিক ম্যাগাজিনে। সাংঘাতিক সাড়া জাগাল। রাতারাতি অংসখ্য ভক্ত জুটে গেল তার। কমিকের নায়কের নাম রেখেছিল সে, গ্রে ফ্যান্টম।
হাসল ডুফার। ফ্যানজাইন ম্যাগাজিনে ছাপার ব্যবস্থা হয়েছিল তার কমিক। রঙের ব্যাপারে একটা বাধা ছিল। চার রঙা ছাপার উপায় ছিল না, সাদা-কালোতে ছাপা হত ম্যাগাজিনটা। তৃতীয় আর একটামাত্র রঙে ছাপা যেত, তাহল ধূসর। আর তাই বাধ্য হয়ে নায়কের নাম দিতে হলো হুফারকে, গ্রে ফ্যান্টম বা ধূসর ভূত। ওই রঙেতেই ছাপল তার কমিক। যা-ই হোক, খুবই সাড়া জাগাল গ্রে ফ্যান্টম। হিরোয়িক কমিকস নামে একটা কোম্পানি কাজের অফার দিল হুফারকে, এবং তখন তার হিরোর নাম হয়ে গেল…
ক্রিমসন ফ্যান্টম! প্রায় চিৎকার করে বলল রবিন। টকটকে লাল ওই হিরোর গল্প আমি পড়েছি!
হুফারের এক সাংঘাতিক সৃষ্টি। শুধু যে কাহিনীই ভাল, তা-ই না, আঁকতেও পারে বটে লোকটা। আর সব কমিকের চেয়ে একেবারে আলাদা, গতানুগতিকার বেড়া ডিঙাল ক্রিমসন ফ্যান্টম। তারপরে রয়েছে একটা বিশেষ ব্যাপার…
মাথা ঝাঁকাল রবিন। ঠিকই বলেছেন। গোপন গোপন ভাব। একটা রহস্য। ক্রিমসন ফ্যান্টম যে আসলে কে, তা-ই জানে না লোকে। তার পরিচয় গোপন থাকে। ওভাবেই কাজ করে যায় সে। তিন-চার রূপ, একেক বার একেক রূপে উদয় হয়। কমিকের তিন-চারটে চরিত্রের যে কোন একটা হতে পারে সে, কোনটা আসল ফ্যান্টম, বোঝা মুশকিল। ওই ধাঁধার জবাব খুঁজতে খুঁজতে তো মাথাই খারাপ হয়ে যেত আমার।
এ যাবৎ হাতে গোনা যে কটা ভাল কমিক বেরিয়েছে, তার মধ্যে একটা ছিল ওই ক্রিমসন ফ্যান্টম, ভোঁতা গলায় বলল হুফার। অথচ ধ্বংস করে দেয়া হলো ওটাকে।
ধ্বংস? এতক্ষণে সতর্ক হলো কিশোর, কিভাবে?
নীল বোরাম নামে একজন লোকের সঙ্গে কাজ করত হুফার। লোকটা ছিল তার কমিকের এডিটর। বোরামকে বিশ্বাস করেছিল সে। কপিরাইটের ব্যাপারে কি জানি একটা ঘাপলা বাধিয়ে ক্রিমসন ফ্যান্টমের কপিরাইট নিজের নামে করিয়ে নিল বোরাম। টেবিলে চাপড় মারল ডুফার। মহা শয়তান। নিয়ে নেয়ার পর সিরিজটাকে আরও জনপ্রিয় করার জন্যে নানা রকম কায়দা করতে লাগল সে। একটা বিশেষ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করল। ক্রিমসন ফ্যান্টম আসলে কোন চরিত্রটা, বলতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে।
রবিন বলল, ওই প্রতিযোগিতার কথা জানি আমি।
তা তো জানবেই। অনেক ছেলেই জানে ক্রিমসন ফ্যান্টম প্রতিযোগিতার কথা। তারপর আরও দুটো নতুন ক্রিমসন ফ্যান্টম বই বের করল বোরাম। একটার নাম দিল সিক্রেটস অভ দি ক্রিমসন ফ্যান্টম, আরেকটা দ্য ব্যাটেলিং ক্রিমসন ফ্যান্টম। নতুন লেখক আর আর্টিস্ট নিয়োগ করল একাজে। ওরা খারাপ করেনি, তবে হুফারের তুলনায় একেবারেই সাধারণ।
রাগে ভুরু কোঁচকাল ডুফার। আসলে চরিত্রটার যা যা বিশেষত্ব ছিল, সব নষ্ট করল বোরাম, খুন করল চরিত্রটাকে। ক্রিমসন ফ্যান্টম এখনও আছে, ভালই বিক্রি হয়, তবে এটা একেবারেই অন্য কমিক। আসলটার ধারেকাছেও লাগে না। অবশ্য বিক্রি হয় প্রচুর। হিরোয়িক কমিকসকে তুলেছে ওটাই, বোরামকেও বড়লোক বানিয়েছে।