ডজও বসেছেন ওদের সঙ্গে। তাকে জিজ্ঞেস করল মুসা, লেকে মাছ ধরতে যাওয়া যাবে কিনা। ডজ বললেন, যাবে। কিশোর বলে দিল, পেট ব্যথা নিয়ে সে যেতে পারবে না। ঘরেই থাকবে। আধ ঘণ্টা পর ঘরে রইল শুধু সে আর পিরেটো।
কি একটা কাজে সে ঘর থেকে চলে গেল পিরেটো। প্লেটে একগাদা রোল পড়ে আছে। চমৎকার সুগন্ধ। এদিক-ওদিক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি তুলে নিয়ে মুখে পুরে চিবাতে শুরু করল সে। একেবারে খালি পেটে থাকা কঠিন। লাঞ্চের সময় হতে অনেক দেরি।
খাওয়া শেষ করে টেলিফোন সেটের সন্ধানে বেরোল সে। পাওয়া গেল লিভিং রুমের পাশে ডজের ছোট অফিসে। পেছনে পাল্লাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে ডেস্কের সামনে বসল। ফোন বুক টেনে নিয়ে দেখতে লাগল ক্যালিফোর্নিয়ার ডাইরেক্ট নম্বর কত।
একবার রিঙ বাজতেই তুলে নিলেন ভিকটর সাইমন। বিখ্যাত সেই খোঁড়া গোয়েন্দা এবং লেখক, যার সঙ্গে অনেক কাজ করেছে ওরা।
কোথা থেকে করছে, জানাল কিশোর। তারপর বলল, আমাকে কয়েকটা তথ্য দিতে পারেন? আপনার টার্মিনাল থেকে আমার কম্পিউটার ইনফরমেশন সার্ভিসকে জিজ্ঞেস করলে পেয়ে যেতে পারেন।
করছি।
থ্যাংকস। আমার পাসওয়ার্ডে ঢুকে পড়বেন। ডিটেক্ট লিখতে হবেঃ ডি ই টি ই সি টি। তারপর মেনু উল্টে যাবেন যতক্ষণ এনসাইক্লোপিডিয়া পাওয়া না যায়।
বেশ। সাবজেক্ট কি?
বারো।
কী?
বারো নিশ্চয় চেনেন। ছোট জাতের গাধা। ভারবাহী জন্তু।
বুঝেছি।
বারো সম্পর্কে কি কি জানতে চায়, জানাল কিশোর।
লিখে নিলেন মিস্টার সাইমন। জেনে নিয়ে কিশোরকে জানাবেন বলে কেটে দিলেন লাইন।
কথা বলতে বলতেই ছোট অফিসটা চোখ বুলিয়ে নিয়েছে কিশোর। এমনিতে, অন্য কারও ঘরে হলে ঢোকার আগে অনুমতি নিয়ে নিত সে। কিন্তু এখানে ঢুকে কোন অপরাধবোধ হচ্ছে না তার। শুরু থেকেই ওদের সঙ্গে প্রচুর মিথ্যে কথা বলেছে ডজ। কাজেই সত্য জানার অধিকার রয়েছে তিন গোয়েন্দার।
অনেক প্রশ্ন ভিড় জমাচ্ছে কিশোরের মনে। কেন ক্রসওয়ার্ড পাজল প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে ওকে এখানে আনা হলো? কেন তার প্রতি এই আগ্রহ? কেন মেকসিকান লোকটা তাকে এখানে আসতে বাধা দিতে চাইল? আর শারিই বা কি করে তাকে এভাবে চিনে ফেলল?
আকর্ষণীয় তেমন কিছু পাওয়া গেল না ডজের ড্রয়ারে, সিয়েরা মাদ্রের বড় বড় কয়েকটা ম্যাপ বাদে। ওগুলোতে পেন্সিল দিয়ে আঁকা প্রশ্নবোধকের ছড়াছড়ি। ডজই এঁকেছে হয়তো। সবচেয়ে ওপরের ড্রয়ারটাতে রয়েছে র্যাঞ্চের দলিলপত্র। ওগুলোতে চোখ বোলাতে লাগল সে। নিচের স্বাক্ষরটা দৃষ্টি আকর্ষণ করল তার।
পিরেটো সানচেনজো!
র্যাঞ্চটা তাহলে পিরেটোই ডজের কাছে বিক্রি করেছে এবং তারপরে নিজের র্যাঞ্চেই নিযুক্ত হয়েছে বাবুর্চি এবং রাখাল। ডজের প্রতি তার রাগের একটা ব্যাখ্যা মিলল।
একেবারে নিচের ড্রয়ারে পাওয়া গেল একটা টেপ-রেকর্ডার। ওটা বের করে ভলিয়ুম কমিয়ে প্লে করে দিল কিশোর।
সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারল নিজের গলা। বার বার শুনল নিজের কণ্ঠঃ কাম। হিয়ার। শারি। গিডি। উত্তউ। শারি। কাম। হিয়ার…
কয়েকবার শোনার পর সাবধানে ক্যাসেটটা রিউইন্ড করে ফিতেটা আবার আগের জায়গায় এনে রেকর্ডারটা ড্রয়ারে রেখে দিল সে।
কয়েক মিনিট পরে টেলিফোন বাজল। মিস্টার সাইমন করেছেন। বললেন, রেডি?
হ্যাঁ, বলুন, কিশোর জবাব দিল। কাগজ কলম নিয়ে তৈরি হলো।
এক এক করে প্রশ্নের জবাব বলে গেলেন তিনি, আর প্রতিটি প্রশ্নের নিচে ফাঁকা জায়গায় লিখে নিল কিশোর। লেখা শেষ হলে ধন্যবাদ জানাল লেখককে।
সাইমন বললেন, যে কোন দরকার হোক, টেলিফোন করো। তোমার ওই গাধা, সরি, বারো তোমাকে কোথায় নিয়ে যায় জানার জন্যে আগ্রহী হয়ে রইলাম।
জানাবে, বলে আরেকবার ধন্যবাদ দিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর। মুসা আর রবিনের সঙ্গে এখন আলোচনায় বসতে হবে। কিন্তু ওদের ফিরতে অরও কম করে হলেও ঘণ্টাখানেক লাগবে। অফিস থেকে বেরিয়ে আবার পাল্লাটা লাগিয়ে দিল সে।
সকাল থেকেই শারিকে দেখছে না। প্রশ্নের জবাবগুলো পেয়ে যাওয়ার পর জানোয়ারটা সম্পর্কে আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গিয়ে ওটাকে দেখার সিদ্ধান্ত নিল সে।
মাঠেই পাওয়া গেল পিরেটোকে। বারোটার সঙ্গে রয়েছে। পানি ভরছে ওটার গামলায়। কিশোরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠে ছুটে এল জানোয়ারটা। আদর করে ওটার গলায় চাপড়ে দিল সে।
দুপুরের রোদ বড় কড়া। শার্ট খুলে ফেলেছে মেকসিকান লোকটা। কিশোর দেখল, ওর বুক আর পিঠও মুখের মতই একই রকমের বাদামী। বুঝতে পারছে না এটাই কি ওর আসল রঙ, না দীর্ঘদিন রোদের মধ্যে কাজ করার ফলে ওই অবস্থা হয়েছে।
গাধাটাকে দেখিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করল, পায়ের দড়ি খুলে নেয়া হয়েছে কেন?
কারণ তুমি যতক্ষণ আছ আর পালাবে না। অযথা বেঁধে রেখে লাভ কি?
আমি?
স্প্যানিশ ভাষায় যা বলল পিরেটো, তার মানে করলে দাঁড়ায়, ওটা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
কেন, কৃতজ্ঞ কেন?
শারির ধারণা তুমি ওর প্রাণ বাঁচিয়েছ। ওরা খুব ভাল জানোয়ার। বিশ্বাসী। কৃতজ্ঞতা বড় বেশি।
বালতি তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল পিরেটো। পেছনে চলল কিশোর। তার সঙ্গে গাধাটা। কিন্তু আর কোন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হলো না মেকসিকান। বলে দিল তার কাজ আছে।
বেশ কয়েকটা ট্রাউট মাছ ধরে আনল মুসা আর রবিন। শিকে গেঁথে সেগুলো দিয়ে কাবাব বানিয়ে দিল পিরেটো। দুপুরের খাবার সময় হঠাৎ করেই যেন পেট ভাল হয়ে গেল কিশোরের, বেশি খেয়ে সকালেরটা পুষিয়ে নিল।